অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি

প্রকাশঃ ২০১৯-০৩-১৬ - ১৪:৪৯

ইউনিক ডেস্ক :

ঢাকার সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা মোগড়াকান্দা, চাপড়া ও শ্যামলাপুরের আধা কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ১৫টি ইটভাটা। এসব ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেই।

ভাকুর্তার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা জানান, একসময় তাঁদের এলাকায় সারা বছরই চাষাবাদ হতো। কিন্তু প্রভাবশালীরা কাউকে অর্থের বিনিময়ে আবার কাউকে ভয় দেখিয়ে ওই সব জমি ইজারা নিয়ে বা কিনে ইটভাটা স্থাপন করেছেন। ফলে এলাকার অনেক কৃষক বেকার হয়ে গেছেন, অনেকে জীবিকার তাগিদে পেশা বদল করেছেন।

অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া এবং আবাসিক এলাকা ও তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।

সাভারে গত পাঁচ বছরের লাইসেন্সবিহীন ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইটভাটার সংখ্যা জানতে চেয়ে গত বছরের ৭ আগস্ট প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনওর দপ্তর থেকে গত ৬ সেপ্টেম্বর তথ্য সরবরাহ করা হয়।

প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৪ সালে সাভার উপজেলায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইটভাটার সংখ্যা ছিল ২৭টি, লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা ছিল ৯৩টি। ২০১৫ সালে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইটভাটা ছিল ৩৫টি, লাইসেন্সবিহীন ছিল ১১০টি। ২০১৬ সালে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইটভাটা ছিল ৪৪টি, লাইসেন্সবিহীন ছিল ১১৪টি। ২০১৭ সালে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইটভাটা ছিল ৪৩টি, লাইসেন্সবিহীন ছিল ১০৫টি। ২০১৮ সালে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইটভাটা ছিল ৩৯টি, লাইসেন্সবিহীন ছিল ১১৫টি। আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলে গত বছর ৭০টি ইটভাটার মধ্যে ৬৯টির কোনো লাইসেন্স ছিল না।

ভাকুর্তা লোহার সেতু-কেরানীগঞ্জ সড়কের অদূরে মোগড়াকান্দা ও চাপড়া গ্রামের পাশে মেসার্স তুরাগ ব্রিকস। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তালিকায় ইটভাটাটির কোনো লাইসেন্স নেই। ভাটার মালিক বাহার উদ্দিন ভাকুর্তা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি।

গত শনিবার তুরাগ ব্রিকসের কার্যালয়ে গিয়ে দুজনকে কাগজ-কলমে হিসাব করতে দেখা যায়। কথা বলতে চাইলে তাঁরা পরিচয় না দিয়ে ভাটার মালিক বাহার উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে মুঠোফোনে ভাটার বিষয়ে জানতে চাইলে বাহার উদ্দিন বলেন, ‘যা পারেন লেখেন, আমি আপনাকে কোনো তথ্য দেব না।’

সাভারের আমিনবাজার ও বলিয়ারপুর এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে একের পর এক ইটভাটা। এসব ভাটার অধিকাংশই অবৈধ। রাজধানীর কাছে হওয়ার পরও এসব ভাটা বন্ধে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। বলিয়ারপুর জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার পাশেই আনা ব্রিকস। উপজেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী এই ইটভাটাটিরও কোনো লাইসেন্স নেই। ভাটার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হান্নানও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, পাশের ডাম্পিং পয়েন্টের দুর্গন্ধ আর ইটভাটার ধোঁয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ। ভাটাসহ ডাম্পিং পয়েন্ট বন্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিলে একসময় এই প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে দিতে হবে।

আশুলিয়ায় তুরাগ নদের এক কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ২০টি ইটভাটা ছিল। পরিবেশ অধিদপ্তর গত বুধবার ১২টি ভাটায় অভিযান চালিয়ে তিনটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ৬টি ভাটার আংশিক ভেঙে দিয়েছে। পাশাপাশি এক সপ্তাহের মধ্যে এসব ভাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক খালেদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধভাবে কোনো ইটভাটা পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না।