অভিযানেও আবু নাসের হাসপাতালে দালাল দমছে না

প্রকাশঃ ২০১৮-১১-২৪ - ১৮:০৮

ওয়ার্ড মাস্টার কর্তৃক কর্মচারীর কাছ থেকে উৎকোচের অভিযোগ

কামরুল হোসেন মনি : র‌্যাব ও ডিবি পুলিশের একাধিকবার অভিযানের পরও শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল এখনও দালালদের কব্জায়। দালালদের বিরুদ্ধে অভিযানে জেল-জরিমানা করলেও পুনরায় একই দালাল এই কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তাদের খপ্পরে পড়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছে। তিন জনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ওই হাসপাতালের ২৫-৩০ জনের দালাল সদস্য। প্রতি দালালকে হাসপাতালে ঢুকতে নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা ও ডায়াগনস্টিক টেস্ট বাবদ নিচ্ছে শতকরা ৩০ টাকা। এসব দালালরা হাসপাতালে আসা অসহায় রোগীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে দালালদের নিয়োজিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন। ইতোমধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থা এদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেছেন।
হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ দালাল ও পকেটমার রোধে পুরো হাসপাতালটি সিসি ক্যামারায় আওতায় নিয়ে আসছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তা জন্য রয়েছে আনসারের ১৫ সদস্য।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে মতে, শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে মহিলাসহ ২৫-৩০ জনের দালাল নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে তিনজন দালালের মাধ্যমে। এরা হচ্ছে গোয়ালখালী এলাকার বাসিন্দা জাফরের পুত্র শেখ বিপুল, মোঃ সুমন ও লুৎফর সরদারের পুত্র মোঃ রাজ সরদার। এর মধ্যে দালাল সুমনের সাথে স্থানীয় এক গোয়েন্দা পুলিশের সাথে সখ্য থাকার কারণে সে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। র‌্যাবের অভিযানের সময় রাজ সরদার, বিপুল ও সুমনকে ১৫ দিনের সাজা প্রদান করেন। ওই সব দালালদের সাথে হাসপাতালে কিছু অসাধু স্টাফ ও আউটসোর্সিং এ নিয়োজিত কর্মচারীদের যোগসাজসের কথা র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেন।
সূত্র মতে, ওই তিনজন দালালের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ২৫-৩০ জন দালাল। এরা হচ্ছে আবু নাসের হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালগুলো। শেখ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়োজিত দালালগুলো হচ্ছে আলাল, হাসান, আঃ রহিম, ফাতেমা, মনিরা, জোসনা, পারভীন, লিজা, শাহিদা, নাসিমা, কোহিনুর, চম্পা ও রিয়াজ; কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লিপি, তাসলিমা, লিমা, প্রিয়া, রেক্সনা, সিদ্দিক ও নাছিমা এবং মাসুদ ক্লিনিকে শাহিন। এছাড়া লাবনী, জোসনা ও রেহানা এই দালালদের সাথে সম্পৃক্ত। উল্লিখিত দালালরা গোয়ালখালী, নয়াবাটি, মুজগুন্নী, কারিগরপাড়া, দৌলতপুর ও বাস্তুহারা এলাকার বাসিন্দা।
শেখ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে রোগীদেরকে ভুয়া রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার এ প্রতিবেদক ওই হাসপাতালে গেলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শেখ মোসলেম বলেন, সম্প্রতি তিনি হাসপাতালে মাঠ পরিষ্কার করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়ে বাঁ পায়ে আঘাত পান। তিনি বাঁ পায়ের এক্সরের জন্য হাসপাতালের সামনে শেখ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসেন। সেখানে এক্সরে করে দেখেন তার পায়ে কোনো সমস্যা হয়নি। কিছুদিন চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেলেও তার পায়ের ব্যথা মোটেও কমছে না। পুনরায় ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরে করালে ওই সময় ধরে পড়ে তার বাঁ পায়ে সমস্যা। বিষয়টি শেখ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শেখ শহিদ তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান। এরকম ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করে আগত রোগীদের প্রতারিত করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ভোর ৬টায় ওই হাসপাতালে বেশিরভাগ মহিলা দালাল আগেভাগে প্রবেশ করেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে এসে ভিড় করেন। ওই সময় হাসপাতালে প্রবেশ করতে হলে প্রতি দালালকে ৫০ টাকা প্রদান এবং টেস্টের জন্য শতকরা ৩০ টাকা কমিশন প্রদান করতে হয়। হাসপাতালের কতিপয় আউটসোর্সিং এর সাথে ওই সব দালালদের সখ্য রয়েছে। একই স্থানে আউটসোর্সিং দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকায় দালালদের সাথে তাদের সখ্য বেশ জমে ওঠে।
দায়িত্ব বন্টনের জন্য হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার কালীপদ দাসকে উৎকোচ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার কোনো আউটসোর্সিং ডিউটি পালন না করলে সে বাবদ ওয়ার্ড মাস্টার মাসিক ৫শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে থাকেন। যার ফলে অনেক সময় আউটসোর্সিংরা দায়িত্ব পালন না করলেও পার পেয়ে যায়।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার কালীপদ মঙ্গলবার রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি এ ধরনের কাজে সাথে জড়িত নন।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ বিধান চন্দ্র গোস্বামী বলেন, দালাল রোধ ও যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিহত করতে হাসপাতাল পুরো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। কোনো দালাল ঢুকলে তা শনাক্ত করে নিরাপত্তা কর্মীরা বের করে দিচ্ছে।
হাসপাতালের নিরাপত্তা ইনচার্জ আনসার কমান্ডার মোহাম্মদ মাছুম শেখ জানান, হাসপাতাল দালালমুক্ত ও পকেটমার রোধে বিভিন্ন জায়গায় ১৫ জন নিরাপত্তকর্মী আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ১ জন ও আউটডোরে রয়েছে ২ জন নিরাপত্তা কর্মী। এদের পাশাপাশি আমি নিজেও মনিটরিং করছি। পুরো হাসপাতালটি ৪৮টি সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ সিসি ক্যামেরা নিচতলায় স্থাপন করা আছে। এছাড়া প্রতি ওয়ার্ডের বারান্দায় একটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এই সিসি ক্যামেরা থাকার ফলে সহজে কেউ অপরাধ করে পার পেয়ে যেতে পারবে না। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে।