আবু নাসের হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট

প্রকাশঃ ২০২০-০২-০৬ - ১৮:২৭

বার্ণ ও প্লাষ্টিক সার্জারি ইউনিটে বিভাগের প্রধান ডাক্তারই ভরসা! :

কামরুল হোসেন মনি : এইচএসসি পরীক্ষার্থী মুক্তার বেগম (২০)। শ্বশুড়বাড়িরে রান্না করতে গিয়ে চুলের মধ্যে সজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে যান। আগুনে তার গলা থেকে দুই হাত পুড়ো ঝলসে যায়। গত ২৫ জানুয়ারি খুলনা মেডিকেল হাসপাতালের বার্ণ ইউনিট থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবু নাসের হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে রেফার করা হয়। মুক্তার গলায় ডেসিং করছিলেন ওই বিভাগের প্রধান সহকারি অধ্যাপক প্লাস্টিক ও সার্জারি ডা: শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ। এরপর পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে মোস্তফা সামছুল জামানের পায়ের ড্রেসিং শেষে চলে আসেন আউটডোরে ডেসিং রুমে। সেখানেও রোগীরা ডেসিংয়ে অপেক্ষায় রয়েছে। সেখানেও তিনি রোগীর ড্রেসিংয়ে ব্যস্থা হয়ে পড়েন।
আবু নাসের হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ১৩ চিকিৎসকের মধ্যে এখন আছে মাত্র ৩ জন। ইউনিটের বিভাগের প্রধান সহকারি অধ্যাপক প্লাস্টিক ও সার্জারি ডা: শেখ নিশাত আব্দুল্লাহসহ দুই মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে ওই ইউনিটের কার্যক্রম। বিভাগের প্রধান ডাক্তার অসুস্থ জনিত কারণে ছুটিতে থাকায় অবস্থায় নেওয়া হতো কেনো আগুনে পোড়া ভর্তি রোগী। কারণ রোগীর জটিল অপরাশেন থেকে শুরু করে ড্রেসিংও তাকেই করতে হয়। অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা ছাড়া পোড়া রোগীর ড্রেসিং করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। বর্তমানে ১৩ পদের মধ্যে ১০ পদই শূন্য। চলতি জানুয়ারি মাসে গতকাল বুধবার পর্যন্ত পুরুষ ও মহিলা মিলে মাত্র ৭ জন রোগী ভর্তি ছিলো।
আবু নাসের হাসপাতালে বার্ন ও প্লাস্টি সার্জারি ইউনিট সূত্র জানা যায়, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইনিইউ) এবং প্লাষ্টিক ও বার্ন ইউনিট। তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ১০শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ এবং ২০ শয্যা বিশিষ্ট প্লাষ্টিক ও বার্ন ইউনিট উদ্ধোধন করেন। ২০১৭ সালে এ ইউনিটে পোড়া রোগী মহিলা ৫৫ জন ও পুরুষ ৬৫ জনকে সেবা  প্রদান করা হয়। এ সময় মারা যায় ২ জন। ২০১৮ সালে ১২১ জনকে। এ সময়ের মধ্যে মারা যায় ৩ জন। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মোট ৬২ জন পোড়া রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়েছিলো। মারা যায় ২ জন। এছাড়া চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট রোগী ভর্তি রয়েছে ৭ জন। এর মধ্যে মহিলা রোগী রয়েছে ৫ জন।
আবু নাসের হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ইনচার্জ সিনিয়ার স্টাফ নার্স সিনারী হাজগার বুধবার এ প্রতিবেদককে বলেন, এই ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা: সহকারি অধ্যাপক প্লাস্টিক ও সার্জারি ডা: শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ স্যার। তিনি অসুস্থ থাকায় অবস্থায় কোন রোগীকে ভর্তি করানো হয়নি। কারণ পোড়া রোগীদের জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন প্রয়োজন হলে তিনি ছাড়া অপারেশন করার আর কোন ডাক্তার এখানে নেই। এছাড়া ড্রেসিংয়ের অভিজ্ঞ চিকিৎসকও সংকট রয়েছে। যার কারণে ভর্তি নেওয়া বন্ধ ছিলো। গত সপ্তাহ থেকে ভর্তি নেওয়া শুরু হয়েছে।
ইউনিটের বিভাগের প্রধান সহকারি অধ্যাপক প্লাস্টিক ও সার্জারি ডা: শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ বুধবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি নিজের অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েকদিন ছুটিতে ছিলেন। এছাড়া জনবল সংকটের কারণে সরাসরি আমরা রোগী ভর্তি নিতে পারি না। পোড়া রোগীদের ড্রেসিংয়ের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়। কারণ রোগীর ইনফেকশনের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সাধারণত খুলনা মেডিকেল থেকে রেফার করা রোগীদের অপারেশনসহ উন্নত চিকিৎসা দেয়া হয় এখানে। তিনি বলেন, তিনিসহ ২ জন মেডিকেল অফিসারকে দিয়ে এই ইউনিটের কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে একজন মেডিকেলকে আউটডোর রোগীদের দেখতে হয়। একজন সার্বক্ষনিক যে চিকিৎসকের থাকার প্রয়োজন তাও নেই। ১৩ জন চিকিৎসকের পদের মধ্যে ১০টি পদই শূণ্য রয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বিধান চন্দ্র গোস্বামী বলেন, চাহিদা দিয়েও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। ডাক্তার পাওয়া গেলে জরুরী সেবা দেয়াসহ সকল ধরনের সেবার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ইউনিটে পরিণত হবে।
উল্লেখ্য, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি ২০১০ সালের ৩০ মার্চ মাত্র ৩০টি শয্যা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে আইসিইউ এবং বার্ন ইউনিটে মোট ৩০টি শয্যা চালুর ফলে বর্তমানে মোট শয্যার সংখ্যা দাঁড়াল ১৫১টিতে।