করোনাকালে শ্বাশুড়িকে রাস্তায় ফেলে গেলেন পুত্রবধূরা !

প্রকাশঃ ২০২০-০৫-১৭ - ১৯:৩৮
ফেনী : ফেনীর সোনাগাজীতে অসুস্থ্য বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি ফিরোজা বেগমকে (৭৫) রাস্তায় ফেলে যায় দুই পুত্রবধূ। গত শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সুজাপুর এলাকায় এঘটনা ঘটে। রাতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. রবিউজ্জামান বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃদ্ধা ফিরোজা বেগম উপজেলার সুজাপুর এলাকার হোসেন আহম্মদের স্ত্রী। মো. মোস্তফা ও ওমর ফারুক  নামে দুজন ছেলে রয়েছেন। তারা প্রবাসী। বাড়িতে দুই পুত্রবধূর সঙ্গে শ্বাশুড়ি ফিরোজা বেগম থাকতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইসিসসহ কয়েকটি রোগে ভুগছেন। এতদিন পুত্রবধুরা তার সেবা করলেও করোনা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে ওষুধপত্র কিনে দেয়া ও সেবা করা অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছেন। বৃদ্ধা ফিরোজা বেগম বউদের কাছে কিছু চাইলে মাঝে মধ্যে তার উপর চড়াও হয়ে শারীরিক ভাবে তাকে লাঞ্চিত করত পুত্রবধুরা।

গত কয়েকদিন ধরে বৃদ্ধা মহিলাটির অসুস্থ্যতা বেড়ে যায়। শনিবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বড় ছেলে মোস্তফার স্ত্রী পারভিন আক্তার ও ছোট ছেলের স্ত্রী লিপি আক্তার পরস্পর যোগসাজসে অসুস্থ্য বৃদ্ধা শ্বাশুড়িকে বাড়ির পাশের রাস্তায় ফেলে যায়।

মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রবিউজ্জামান বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় ইফতারের আগ মুহূর্তে স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি শুনে তিনি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে মহিলাটির হাত-মুখ ধুইয়ে দিয়ে ইফতার করান। পরে বাড়ি থেকে বৃদ্ধার দুই পুত্রবধূকে ডেকে এনে স্থানীয় সমাজের পঞ্চায়েত কমিটির লোকজনকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। এসময় জিজ্ঞাসাবাদে তারা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে শ্বাশুড়িকে ঘরে নিতে আবেদন করেন।”

তিনি আরো বলেন, সমাজপতিদের সঙ্গে আলোচনা করে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করবে না বলে অঙ্গীকার করায় এবং দুই ছেলের বউরা একজন ফিরোজা বেগমকে এক মাস করে ভরণপোষণ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সবাই মিলে বৃদ্ধাকে বাড়িতে ঘরে দিয়ে আসা হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বলেন, গতকাল রোববার দুপুরে তিনি নতুন কাপড়, চাল,ডাল, আলু, তেল, পেয়াজ, রসুন, ছোলাবুট, মুড়ি, খেজুর, হরলিকস, দুধ, সেমাই, চিনিসহ খাদ্য, ইফতার ও ঈদ সামগ্রী নিয়ে বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধা ফিরোজার সঙ্গে দেখা করে তার খোঁজখবর নেন।

বৃদ্ধার পুত্রবধূরা তার ভরণ-পোষণ ও সেবা না করলে বৃদ্ধাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে মায়ের মতো সেবা করবেন বলেও জানান ইউপি চেয়ারম্যান।