করোনা যুদ্ধের মধ্যেও তৎপর ইয়াবা চক্র : নৌ-পথে আসছে ইয়াবার চালান

প্রকাশঃ ২০২০-০৭-১৯ - ১৭:৪৪
কামরুল হোসেন মনি : করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা থমকে গেছে। কিন্তু এমন মহা দুর্যোগেও থেমে নেই মাদক কারবারি চক্রের চোরাকারবার।  মে মাসে দেশে লকডাউন সিথিল হওয়ায় পরিবহন ও নৌ-পথ চলাচলে সুযোগে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এই দুই রুটে ইয়াবার চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌছে দিচ্ছে। মিয়ারমার থেকে প্রত্যেক দিনই ইয়াবা চালান আসছে। এই সব চালান ঢাকা হয়ে খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, বেনাপোল,  চুূয়াডাঙ্গাসহ  দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌ-পথ ও জরুরি পণ্য পরিবহনের আড়ালে দেশে নানা প্রান্তে পৌছে দিচ্ছে ইয়াবা। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ইয়াবা, ফেনসিডিলের চালান ধরা পড়ছে। করোনা মোকাবেলায় পুলিশসহ বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনীর করোনা ভাইরাস সুরক্ষা কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিচ্ছে মাদককারবারী চক্রগুলো।
সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) নজরে এসেছে এমন চিত্র।
তবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ( কেএমপি) উপ- পুলিশ কমিশনার ( ডিসি দক্ষিন) এস এম শাকিলুজ্জামান বলেন, তাদের নিয়মিত অ্ভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে।জিরো টলারেন্স রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীরা যতই শক্তিশালি হোক না কেনো কেউ রেহাই পাবে না।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের ‘ক’ সার্কেলের পরিদর্শক হাওলাদার মোঃ সিরাজুল ইসলাম গতকাল শনিবার এ প্রতিবেদককে বলেন,  করোনাকালে প্রাথমিক পর্যায়ে পরিবহন বন্ধ থাকায় মাদক কারবারচক্রটি তাদের মাদকের চালান সরবরাহ অনেকটা কম ছিলো। সময়ের ব্যবধানে গণপরিবহন চালু হওয়ার পর থেকেই ইয়াবা চক্রটি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।  চলতি মাসে ১৭ জুলাই পযর্ন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময়ে ২ হাজার ২শ পিস ইয়াবা ও আড়াই কেজি গাজাগ উদ্ধার করা হয়। ৯ টি মামলা দায়ের করা হয়। ইয়াবার চালার মিয়ানমার থেকে নৌ-পথে চট্টগ্রামে আসছে। সেখানেও ইদার্নিং তাদের ডিএনসি সংস্থা অভিযান বড় চালান আটক করছেন।
 চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের মেট্রো উপ- অঞ্চলের উপ- পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান শনিবার দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন,  গত মার্চ মাসে তার তত্ত্বাবধানে ৪৯২ টি অভিযান পরিচালনা করা হয়।।  এ সময়ের মধ্যে মাদকের মামলা হয় ১০৫টি ও  আটক হয় ১০৯  জন। এদের কাছ থেকে ইয়াবা ৩৩ হাজার ৯৫৯ পিস, গাজা ৭ কেজি ৩৯০ গ্রামসহ অন্যান্য মাদক উদ্ধার করা হয়। ২৬ মার্চ থেকে করোনা ভাইরাসের কারনে দেশে লক ডাউন ঘোষনা হলে গণ পরিবহন ও  নৌ-পথ চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় মাদককারবারিদের তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখে। এপ্রিল মাসে অভিযানে শুধুমাত্র ৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ ১ জন আটক করেন।
তিনি বলেন, মে মাসে লক ডাউন সিথিল হয়। এ সময় সড়ক ও নৌ রুটে যানচলাচল শুরু হলে ইয়াবাকারবারীরা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এই মাসে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ৩৩ হাজার ৫৩৫ পিস ইয়াবাসহ ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। জুন মাসে দেখা গেছে ইয়াবা চক্ররা সক্রিয় হয়ে উঠছে এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযার চালিয়ে ২৭ হাজার ১১৫ পিস ইয়াবা, ফেনসিডিএ ৩৯০ বোতলসহ অন্যান্য মাদকসহ আসামিদের আটক করেন। চলতি জুলাই মাসে ১৭ তারিখ পযর্ন্ত ১০ হাজার ৯৫৫ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। এ সময় আটক করা হয় ৯ জনকে। তিনি বলেন, মে থেকে জুলাই ১৭ পযর্ন্ত প্রায় ৭২ হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়েছিলো। ইয়াবা আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদেরকে জানায়, এই ইয়াবা চালানগুলো নৌ- পথে মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রামে ও কক্সবাজার, টেকনাফে পৌছায়। সেখান থেকে হাত বদল হয়ে ইয়াবা চালানগুলো নৌ-পথ, আকাশ, সড়ক ও রেল পথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের হাতে পৌছায়।  তারপর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌছায় দেয় খুচরা বিক্রেতাদের হাতে।
চট্টগ্রাম মেট্টো উপ- অঞ্চলের উপ পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোের, বেনাপোল, চুয়াডাঙ্গায়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ওই সব ইয়াবাচালানগুলো আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাকি দিয়ে মাদককারবারীরা স্পটে পৌছায় দিচ্ছে। এছাড়া ট্রেন পথে গাজার চালান নিয়ে আসেন মাদক ব্যবসায়ীরা।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক পারভিন আক্তার জানান, গত জুন ক, খ। ও গোয়েন্দা শাখা মিলে মোট ৪৭ টি মামলা দায়ের করা হয়। চলতি মাসে এ পযর্ন্ত তিনি  ৪ টি মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা শাখার এই পরিদর্শক জানান, গণপরিবহন চালু ও লক ডাউন সিথিল হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হচ্ছে।  তাদের নিয়মিত অভিযানে মাদকসহ আটক হচ্ছে অনেক মাদক ব্যবসায়ীরা। তার মধ্যে ইয়াবা জব্দ রয়েছে বেশি। পাশাপাশি গাজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য আটক করা হচ্ছে।