কেসিসি নির্বাচনে তিনটি ভোট কেন্দ্র স্থগিত

প্রকাশঃ ২০১৮-০৫-১৫ - ২০:২০

কামরুল হোসেন মনি : কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, এজেন্টদের বের করে দেয়া, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া মধ্যে দিয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জোরপুর্বক অনুপ্রবেশ করে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে তিনটি ভোট কেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে। ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। আবার কিছু কেন্দ্রে উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোটারার এসব অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেশকিছু কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট ছিল না। সকাল সোয়া ৮টায় নগরীর জেলা স্কুলের ১৭৯ কেন্দ্রের ৮টি বুথে কোনটিতেই বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট পাওয়া যায়নি। এই কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসরার তপন ম-ল জানান, এই বুথে পাঁচজন মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলর প্রার্থীদের ১২জন এজেন্ট থাকার কথা। সেখানে রয়েছেন ৫জন। তিনি বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থীর কোন এজেন্ট আসেনি। এই কেন্দ্রের ৪ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা যায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর ৩জন এজেন্ট রয়েছেন। এই বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার সাইদুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপির কোনো এজেন্ট আসেনি। সকাল ৯টায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু এসে দেখতে পান জেলা স্কুলের দুটি কেন্দ্রের একটিতেও তার এজেন্ট নেই। তিনি ও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী মাহবুব কায়সরার অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দিয়েছে। এছাড়া কয়েকজনকে মারপিট করেছে। ভয়ে তারা কেন্দ্রে আসতে পারেননি।
ওই সময় মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ওই কেন্দ্র উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, অন্তত ৪০টি ভোট কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। কয়েকজনকে মারপিট করেছে বলে অভিযোগ তোলেন।
একটি কেন্দ্রে জাল ভোট দিতে বাধা দেওয়ায় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার উজ্জ্বল কুমার পালকে হুমকি দেয় কিছু দুস্কৃতকারী। উজ্জ্বল জানান, বেলা ১১টার সময় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের সময় রূপসা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫নং বুথে হঠাৎ কয়েকজন লোক এসে ব্যালট পেপার কেড়ে নেয়। পরে তারা নৌকায় সিল মারতে গেলে আমি তাতে বাধা দিয়েছি। এমনকি আমি সিল মারা ব্যালট পেপারগুলো বক্সে ভরতে দেইনি। তারা আমার নাম পরিচয় জেনে গেছে। ভোট শেষ হলে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়েছে তারা।
তিনি বলেন, আমার কাছে থাকা একশ ব্যালট পেপার কেড়ে নেয়া হয়েছিল। যার সিরিয়াল নং ০০৪৫৮৪০১ থেকে ০০৪৫৮৫০১ পর্যন্ত। সেগুলো সিল মেরে বাক্সে দিতে দেইনি। আমি তাদের বাধা দিলে তারা আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এই ঘটনার পর এই কেন্দ্রটিতে ভোট সাময়িক স্থগিত হয়ে যায়। পাশেই আরও একটি কেন্দ্রে জালভোট দেয়ার প্রমাণ পাওয়ার পর সেটিতেও ভোট স্থগিত করা হয়।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নূরানী বহুমূখী মাদ্রাসা কেন্দ্রে একজন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা সকাল থেকেই ব্যালট পেপার নিয়ে সিল মারতে থাকে। এক তরুণের জাল ভোটের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করা হলে সেটি ডিলিট না করা পর্যন্ত গণমাধ্যমকর্মীকে সেখান থেকে আসতে দেয়া হয়নি। এই কেন্দ্রে বাবার সঙ্গে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়–য়া একজন ছাত্রও ভোট দিয়েছে।
একই ওয়ার্ডের সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে একদল যুবক প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে থাকে। সাংবাদিকরা সেখানে পৌছালে তারা দীর্ঘ সময় সাংবাদিকদের ঘিরে রাখে। একই ঘটনা ঘটে দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে প্রবেশে সাংবাদিকদের বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে, ২২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাহবুব কায়সারের এজেন্ট আলী আকবরকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাহবুব কায়সার ২২নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। ৩০নং ওয়ার্ডের রূপসা স্কুল কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট সেলিম কাজীকে মারধর করা হয়। ভাঙচুর করা হয়েছে ৩১নং ওয়ার্ডের হাজী আব্দুল মালেক ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সামনের নির্বাচনী ক্যাম্পও। মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে মহানগরীর জিলা স্কুল কেন্দ্রে আলী আকবরকে মারধর করে কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিকুর সমর্থকরা। পরে তাকে উদ্ধার করে খুলনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপরদিকে, খালিশপুর ১১নং ওয়ার্ডের জামিয়াহ ত্বৈয়্যেবাহ নূরানী তালিমুল কোরআন মাদরাসা কেন্দ্র থেকে সহোদর সিরাজকে কুপিয়ে আহত এবং আলমকে মারধর করা হয়। তাদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ওয়ার্ডে জামিয়া ইসলামিয়া আশরাফুল উলুম বয়স্ক মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী জামান মোল্লা জেলিনের এজেন্ট আসাদ ও হাবিবকে সকালেই কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। জোরপুর্বক অনুপ্রবেশ করে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে তিনটি ভোট কেন্দ্র স্থগিত করা হয়। কেন্দ্রগুলো হলো-ইকবাল নগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ২০২ নং কেন্দ্র, রুপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৭৭ নং কেন্দ্র এবং ৩১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কার্যালয়ের ২৭৮ নং কেন্দ্র। কিছু ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে সাংবাদিকদের। অনিয়ম প্রতিরোধে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা গেছে প্রিজাইডিং অফিসারদের।
সরকারী ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল পৌণে ১১ টার দিকে একদল যুবক প্রবেশ করে দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ৭ নং বুথের সমস্ত ব্যালট পেপার নিয়ে নৌকায় সিল মারে। প্রিজাইডিং অফিসার খলিলুর রহমান বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাকে এক কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। পরে ভোট নেওয়ার মত ব্যালট পেপার না থাকায় সেই বুথের ভোটারদেরকে ফেরত দেয়া হয়। একপর্যায়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হলে সহকারী রির্টানিং অফিসার আনিসুর রহমান সহকারী প্রিজ্ইাডিং অফিসার এর সাথে আলোচনা করে কেন্দ্রের ভোট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। সহকারী রিটার্নিং অফিসার বলেন, দুস্কৃতকারীরা জোর পূর্বক ব্যালটে সিল মেরেছে। এজন্য ভোটগ্রহন স্থগিত করা হয়েছে।
ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষক লাঞ্ছিত
ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণে গেলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা নির্বাচন কমিশনের একজন পর্যবেক্ষককে লাঞ্ছিত করেছেন। ভোটগ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণ পরেই তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। ভোট পর্যবেক্ষণে ইসি’র ওই কর্মকর্তা নড়াইল থেকে খুলনায় গিয়েছিলেন। ওই কেন্দ্রের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নুরানী বহুমুখী মাদরাসা বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। ঠেলা গাড়ি প্রতীকের সমর্থকরা ওই পর্যবেক্ষকের সঙ্গে থাকা একটি গাড়ি ভাঙচুরেরও চেষ্টা চালায়। ওই ভোটকেন্দ্রের (পুরুষ) প্রিজাইডিং অফিসার মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ইসির নিজস্ব এক পর্যবেক্ষকের সঙ্গে সকালে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে।
সদর হাসপাতাল ঃ সদর হাসপাতাল জরুরী বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, শেখ নাদিম হোসেন (৪১) ও মোঃ মহাসিন খন্দকার নামে দুই ব্যক্তি নির্বাচনে হামলার শিকার হন বলে প্রাথমিক ভাবে তাদের কাছে স্বীকার করেছেন। নগরীর পশ্চিম বানিয়াখামার দুপুর দেড় টার দিকে শেখ নাদিম হোসেনের সাথে তার বোন প্রভাতি স্কুলে সামনে আসলে তার ওপর হামলা চালানো হয়। ##