খুমেক হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশঃ ২০২০-০৬-১৮ - ১৮:৫৪
ভিআইপি  কেবিনে সাধারণ রোগীকে ভাড়া : ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার
কামরুল হোসেন মনি : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মোহাম্মদ রেজা সেকেন্দার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাধারণ কেবিন খালি থাকা সত্বেও করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির স্ত্রীকে ভিআপি কেবিনে থাকার অনুমতি দিয়েছেন, যা তিনি ক্ষমতা অপব্যবহার করার সামিল। এছাড়া এর আগে তিনি ‘বিধি বহির্ভূতভাবে’ সেবা তত্ত্বাবধায়ককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া ঘটনা ঘটিয়েছে। সেই নার্সি সুপার ভাইজার জেসমিন নাহারকে নার্সিং মিডওয়াইফারী অধিদপ্তর কলেজ অব নার্সিং এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এক অফিস আদেশে বদলী করা হয়। বদলী হওয়া ওই সুপার ভাইজারদের সাথে হাসপাতালের পরিচালক তার দপ্তরে গোপনে মিটিং করে এই বদলীর ব্যাপারে আন্দোলনের উস্কানিতে তার ইন্ধন রয়েছে বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা: রাশেদা সুলতানা গতকাল বুধবার এ ব্যাপারে বলেন, ভিআইপি কেবিন সাধারণত স্থানীয় জেলা প্রশাসক, ম্যাজিস্টেট, এমপি এক কথায় সরকারি ১ম শ্রেনীর গেজেট অফিসারদের জন্য বরাদ্দ। এছাড়া ভিভিআইপি কেবিন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জন্য বরাদ্ধ রাখা হয়। তিনি বলেন, মানবিক বা জরুরি ভিত্তিতে একজন সাধারণ রোগীকে ভিআইপি কেবিন দিতে পারেন যদি কিনা সাধারণ কেবিন খালি না থাকে সেক্ষেত্রে। কিন্তু সাধারন কেবিন খালি থাকা সত্বেও ভিআইপি কেবিন যদি দিয়ে থাকেন তাহলে তিনি নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। আইন সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এ ব্যাপারে খুমেক হাসপাতালে উপ-পরিচালক ডা: বিধান ঘোষ এ প্রতিবেদক ভিআইপি কেবিনের বিষয়ে কাদের জন্য এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমার এ মুহুর্তে জানা নেই। আমার নীতিমালা দেখে বলতে হবে।
খুমেক হাসপাতালের কেবিন ইনচার্জ সিনিয়ার স্টাফ নার্স  মোসাৎ সাদিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ১৩ জুন ভিআইপি-১ কেবিনে একজন সিজার হওয়া মহিলা মুসলিামকে ভর্তি করা হয়। তার স্বামী হেমায়েত হোসেন করোনায় পজিটিভ। পরিচালকের নির্দেশনা স্বাপেক্ষে তাকে ওই কেবিন দিতে হয়েছে। ওই দিন সাধারণ ৫টি কেবিন খালি ছিলো। তিনি বলেন, ভিআইপি ও ভিভিআইপি কেবিন বাদে মোট কেবিন সংখ্যা রয়েছে ৩৭টি। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা জন্য একটি, ইন্টার্ণী জন্য ১ টি, সেবিকাদের জন্য একটি, মেডিকেল কলেজ ছাত্রদের জন্য ২টি মোট ৭টি বরাদ্ধ রয়েছে। এর বাইরে সাধারণ কেবিন রয়েছে ৩০টি। গতকাল বুধবার সাধারণ কেবিন খালি রয়েছে ৫টি। ওই ইনচার্জ বলেন, ওই মহিলা স্বামী করোনা পজিটিভ হওয়ায় তার কাছ গেলে আমাদের পিপিই ব্যবহার করতে বলেছে। তিনি বলেন, গত পরশু তার কেবিনে দায়িত্ব থাকা এক নার্স কুলসুমের করোনায় পজিটিভ সণাক্ত হয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ( আরএমও) ডা: মিজানুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ভিআইপি কেবিনে ভর্তি হওয়ার রোগীর স্বামী হেমায়েত হোসেন করোনায় পজিটিভ রয়েছে। তার স্ত্রীরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার কাছে কোন সেবিকা গেলে তাদেরকে পিপিআই ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছি। ভিআইপি কেবিন একজন সাধারণ রোগী দিতে পারে কি না এমন প্রশ্ন করলে এটা পরিচালক ভালো বলতে পারবেন।
খুমেক হাসপাতালের সূত্র মতে, ভিআইপি কেবিনে হাসপাতালের পরিচালকের সুপারিশ থাকায় গত ১৩ জুন ওই মহিলাকে ভিআইপি কেবিনে ভর্তি করানো হয়। গত ১৫ জুন ওই ভিআইপি কেবিনের জন্য অফিসে ৪ হাজার টাকা জমাও প্রদান করেন। জানা গেছে ওই হেমায়েত হোসেন ওরফে ফারুক আউটসোর্সিয়ের ঠিকাদারি। তার সাথে হাসপাতালে পরিচালক ডা: ডা: মুন্সী মোহাম্মদ রেজা সেকেন্দার আর্থিক সুবিধা পাওয়ার কারণে তাকে নিয়ম বর্হিভূত সাধারণ কেবিন খালি থাকা সত্বেও ভিআইপি কেবিন-১ তার স্ত্রীকে থাকার জন্য তিনি লিখিত সুপারিশ করেন। এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পরিচালক ডা: মুন্সী মোহাম্মদ রেজা সেকেন্দার ‘বিধি বহির্ভূতভাবে’ সেবা তত্ত্বাবধায়ককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া সেই নার্সিং সুপার ভাইজার জেসমিন নাহারকে যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলীর করা হয়। গতকাল বুধবার (১৭ জুন) তারিখের মধ্যে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদানের জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় ১৭ জুনে অহরাহেৃ তিনি তাৎক্ষনিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) বলে গণ্য হবে। মঙ্গলবার নার্সিং মিডওয়াইফারী অধিদপ্তর কলেজ অব নার্সিং এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সিদ্দিকা আক্তার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু হাসপাতালের পরিচালক ওই বদলীকৃত নার্সি সুপার ভাইজারসহ কয়েকজন নার্স ও সুপার ভাইজারদের সাথে তার রুমে গোপনে মিটিং করে আন্দোলনের উস্কানি দিয়েছেন। যার কারণে বদলীকৃত ওই নার্সিং সুপার ভাইাজার জেসমিন নাহার তার অধিদপ্তরের বদলীয় আদেশ অমান্য করে বুধবার সকালে তার অনুসারী কয়েকজন নার্স ও নার্সি সুপারভাইজেদর নিয়ে কর্মবিরতি করেন। ওই বদলী নার্সি সুপার ভাইজারকে রিলিজ না দিয়ে হাসপাতালের পরিচালক তাকে বিধি বহি:র্ভূত ভাবে সুপার ভাইজার পদে বহাল রেখে সুপারিশ করেন। এছাড়া ওই পরিচালকের সরকারি গাড়ি নিজ ব্যক্তিগত ব্যবহার করে তার ঝিনাইদহে বাড়িতে যাতায়াত করেন। সরকারি তেল খরচ করলেও লক বইতে তা দেখানো হয় না। এছাড়া সরকারি গাড়িটি আউটসোর্সিং স্টাফদেরর যাতায়াতের জন্য তিনি গাড়ি দেন। যা তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। সূত্র মতে, তার অফিস দপ্তরের তার বন্ধু আনোয়ারুল ইসলাম লিটন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আড্ডায় মেতে থাকেন। আউটসোসিং এর ঠিকাদার হেমায়েত ফারুকেবর বিভিন্ন  ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকায় তার বন্ধুকে জুন মাসে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার বিষয় গোপন মিটিং করনে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। তার ওই লিটনের বন্ধুর ছেলেকে ইমনকে তার দপ্তরের পিএ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জনস্্েরাত রয়েছে। আউটসোর্সিং নিয়োগপ্রাপ্ত একজন চতুর্থ শ্রেনী কর্মচারি কি ভাবে পরিচালকের পিএ হিসেবে পরিচয় জাহির করেন তা বদগম্য নয়।
এ ব্যাপারে গত মঙ্গলবার (১৬ জুন ) থেকে গতকাল বুধবার (১৭ জুন পর্যন্ত) একাধিকবার এ প্রতিবেদক হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মোহাম্মদ রেজা সেকেন্দার নিজে ফোন রিসিভ না করে অন্যজনদের দিয়ে ফোন ধরিয়ে দেন। সে বলেন, স্যার বিশ্রামে আছেন।
হাসপাতালের সূত্র মতে,  সোমবার খুমেক হাসপাতালে উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক আসমাতুন নেছার উপর অতিরিক্ত সেবা তত্ত্বাবধায়কে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করে তার জায়গায় নার্সিং সুপার ভাইজার জেসমিন নাহারকে ভারপ্রাপ্ত সেবা তত্ত্ববাধায়ক দায়িত্ব প্রদান করেন ‘বিধি বহির্ভূতভাবে’ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মোহাম্মদ রেজা সেকেন্দার। তার নিয়ম বহি:র্ভূত কাজ কর্মের জন্য হাসপাতালের নার্স ও স্টাফদের মধ্যে ক্ষোভের দানা বাধতে শুরু করে। ওই পরিচালকের ‘বিধি বহির্ভূতভাবে’ আদেশের ওই দিনই নার্সি সুপার ভাইজার জেসমিন নাহারকে নার্সিং মিডওয়াইফারী অধিদপ্তর কলেজ অব নার্সিং এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এক অফিস আদেশে বদলী করা হয়। কিন্তু হাসপাতালের পরিচালক ওই গ্রুপকে উস্কানি দিয়ে বদলীকৃত নার্সিং সুপারভাইজার তার অনুসারীয় নার্স ও নার্সিং সুপারভাইজার মিলে মোট ২০ জন কর্মবিরত করেন।