খুমেক হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে ডাক্তার লাঞ্ছিতের অভিযোগ

প্রকাশঃ ২০২০-০৯-০৮ - ১৮:২৭

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে কর্মরত ডাক্তারকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। এছাড়াও একক সিদ্ধান্তে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বহিরাগতদের দিয়ে তদারকি কমিটি গঠন করে স্বাভাবিক কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টির প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। অপরদিকে কর্মচারিদের হয়রানী, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, কোন কারণ ছাড়াই হাসপাতালের এক স্টাফকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়া, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজ এলাকার লোক নিয়োগসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা অবিলম্বে এর প্রতিকার দাবি করেছেন। কর্মরত ডাক্তার বাপ্পী রায়কে লাঞ্ছিত করার ঘটনার পর গতকাল সোমবার ২৫-৩০ জন চিকিৎসক হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী রেজা সেকেন্দারের সাথে কথা বলেন। এর পরে খুমেক হাসপাতালে কর্মচারি ইউনিয়নের কমিটির সদস্য ও কর্মচারিরা পরিচালকের চেম্বারে ঢোকেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ডাক্তাররা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিলের উদ্যোগ নিয়েছেন।
সার্বিক বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার এ প্রতিবেদককে বলেন, কাজ না করলে বকাবকি করি। স্টাফদের বাপ-মা তুলে গালিগালাজ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে নেই। ডাঃ বাপ্পী রায়কে গালিগালাজ করা হয়নি। তাকে শুধু চেম্বার থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে। রোগীর সঠিক সেবা দিতেই একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে জনবল নিয়োগেও কোন স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি দাবি করেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধক্ষ্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা: মেহেদী নেওয়াজ রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি ডা: বাপ্পী রায়কে হাসপাতালে পরিচালক ডা: মুন্সী রেজা সেকেন্দার বকাঝকা করার বিষয় জানতে পেরেছি। তবে কি কারণে তা জানতে পারেনি। তবে এ ঘটনার পর আমার জুনিয়ার চিকিৎসকরা পরিচালকের উপর ক্ষুব্ধ। বিএমর বরাবর এ বিষয়ে কোন চিকিৎসক লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন রায় জানান, গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে তিনি নিজের চোখের চিকিৎসার জন্য পাশে সহকর্মীর চেম্বারে যান। চিকিৎসা নিতে রোগিরা ভোগান্তীতে না পড়েন, সে জন্য আমি না আসা পর্যন্ত ডা: বাপ্পী রায় রোগীদের দেখছিলেন। এসময় হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগে তার চেম্বার ৩১২ নম্বর রুমে যান হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার। সেখানে আমাকে (ডা: সুমন রায়) কে না পেয়ে বাপ্পী রায়কে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালের স্টাফসহ রোগীদের সামনে অপমান করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাকে ওই রুম থেকে বের করে দেন। ঘটনা জানতে পেরে অন্যান্য সহকর্মীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে তারা লিখিতভাবে জানাবেন বলে দাবি করেন এই চিকিৎসক নেতা।
খুমেক হাসপাতালের হাসপাতালের (আইএমও) নিউরোলজী মেডিকেল অফিসার ডাঃ বাপ্পী রায় বলেন, ‘চোখের চিকিৎসার জন্য ডাঃ সুমন রায় পাশের ডাক্তারের ওখানে গেলে আমি তার চেম্বারে বসে রোগী দেখছিলাম। যাতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিরা ভোগান্তীতে না পড়েন। এ সময় পরিচালক ডা: হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার রুমে এসে রোগী ও হাসপাতালের স্টাফদের সামনে আমার টেবিল থাপড়ে গালিগালাজ করেন। এ সময় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আতংকিত হয়ে পড়েন। আমাকে ‘বিয়াদবের বাচ্চা’সহ হাসপাতালের স্টাফ ও রোগীদের সামনে অকথ্য ভাষা উচ্চরন করেন। আমাকে রুম থেকে বের করে দেন। পরে আমরা অন্যান্য সহকর্মীরা মিলে তার চেম্বারে গেলেও তিনি সেভাবে রেসপন্স করেননি।’
হাসপাতালের সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে হাসপাতালের সাথে সম্পৃক্ত নন মো: আল মাসুম খানকে নিয়ে পরিচালক একটি তদারকি কমিটি গঠন করেছেন। ওই কমিটি গঠনের বিষয়ে অন্যান্য চিকিৎসকরাও কিছু জানেন না। হঠাৎ করেই গতকাল সোমবার হাসপাতালের বিভিন্ন অংশের দেওয়ালে ওই কমিটির পোস্টার লাগানো জন্য আনা হয়। যা নিয়ে সাধারণ চিকিৎসকরা ক্ষুব্ধ। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেত গেলেও পরিচালক এ বিষয়ে কারও সাথে কথা বলেননি। গঠিত কমিটির এক সদস্য চিকিৎসকদের বিভিন্ন বিষয়ে হয়রানী করেন। পরিচালক হাসপাতালে নিজের লোক ঢোকাতে কিছুদিন আগে ৬ জন আউটসোর্সিং কর্মচারীকে বাদ দিয়ে তার নিজের এলাকা ঝিনাইদহের ৫ জনকে চাকরী দিয়েছেন হাসপাতালে।
এদিকে হাসপাতালের কর্মচারীদেরকেও হয়রানীর অভিযোগ করেছেন চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে হাসপাতালের স্টাফ হাসানকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়। হাসানের ছেলের সাথে বেতনের টাকা নিয়ে আউটসোর্সিংয়ের ঠিকাদারের লোকদের বিরোধের জের ধরেই এমন কান্ড ঘটান পরিচালক। তিনি বলেন, আউটডোর থেকে ডাক্তারের চেম্বারের সামনে থেকে এটেন্ডেন্টদের টেবিল চেয়ার সরিয়ে দিয়েছেন পরিচালক। এতে রোগির বিবরণ লিখতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।