খুমেক হাসপাতালে অজ্ঞান পার্টি সক্রিয় : মালামাল লুট

প্রকাশঃ ২০১৯-০৮-১৮ - ১২:০৪

কামরুল হোসেন মনি : গৃহবধূ শ্যামলী শনিবার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে তার ছেলে চিনময়কে দেখতে আসেন। হাসপাতালের পেছনে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় বোরকা পরিহিত ও একজন স্যালোয়ার কামিজ পরা মহিলা তাকে সুকৌশলে ডাক দেন। তিনি তাদের কথায় সাড়া দিয়ে সামনে যান। এ সময় ওর মধ্যে একটা মেয়ে বলে উঠে আপা আপনার নাকে ময়লা এই বলে একটা সাদা কাগজ তার নাকের সামনে ধরে। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখেন তার গলার দেড়ভরি ওজনের সোনার চেইন নেই। এর আগে গত বৃহস্পতিবার গৃহবধূ রানী নামে অপর এক মহিলা ওই হাসপাতালে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েন। তার কাছ থেকে নগদ ৪০ হাজার টাকা, কানের দুল ও গলার চেইন ছিনিয়ে নেন। তিনি তার বাবা মোহাম্মদ আলীকে এ হাসপাতালে দেখতে আসেন। এখন তিনিই অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা শনিবার এ প্রতিবেদককে জানান, ওই অজ্ঞান পার্টি একই গ্রুপের সদস্য। তারা কৌশলে ডাক দিয়ে সিঁড়ির নিচে গিয়ে একটা কাপড়ে বাঁধা টোপলা দেখতে বলেন, ওটা নাকের সামনে নেওয়ার সাথে সাথে অচেতন হয়ে পড়েন তারা। দুজন মহিলা ও একজন পুরুষ ছিলো। এ ঘটনা শুনে খুলনা মেট্রোপলিটন পুুলিশ (কেএমপি)’র নগর গোয়েন্দা একটি টিম হাসপাতালে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত নিয়ে যান।
খুমেক হাসপাতালে পরিচালক ডাঃ এটি এম মঞ্জুর মোর্শেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, জরুরি বিভাগ ও বহিঃবিভাগে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচার করা হচ্ছে। তারপরেও রোগীরা ওই চক্রের খপ্পরে পড়লে কি করার আছে, আগে নিজেদের সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, আরও সিসি ক্যামেরা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
কেএমপি’র গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বি,এম নূরুজ্জামান (বিপিএম) শনিবার এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর স্বজনরা অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ার ঘটনা জানতে পেরে গোয়েন্দার একটি টিম হাসপাতালে ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমাদের নগর গোয়েন্দা টিম ওই চক্রটি ধরতে মাঠে সক্রিয় রয়েছে। হাসপাতালে গোয়েন্দার নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আবাসিক ফিজিসিয়ান (মেডিসিন বিভাগ) ডাঃ শৈলান্দ্রনাথ বিশ্বাস এ প্রতিবেদককে বলেন, অজ্ঞান যারা হয় তাদের বেশি মাত্রায় ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো বা চেতননাশক জাতীয় ওষুধ স্প্রে করা হয়। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত অচেতন থাকেন। রোগী যদি আগে থেকেই মস্তিষ্ক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভারের রোগে ভুগে থাকেন, তাহলে তার মৃত্যুও হতে পারে।
খুমেক হাসপাতাল সূত্র থেকে জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায়ই রোগীর স্বজনদের মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা চুরির ঘটনা ঘটছে। এছাড়া এ হাসপাতালে রোগী দেখতে এসে স্বজনরা অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ছেন। গত দেড় মাসে মোবাইল ফোন চুরি, স্বর্ণালঙ্কার চুরি, মলম পার্টির খপ্পড়ে পড়ছেন ২০-২৫ জনের মতো। অজ্ঞান পার্টির প্রধান টার্গেট সাধারণ নিরীহ মানুষ, বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা। মফস্বল শহর থেকে আসা ব্যবসায়ীরা।
ভুক্তভোগী খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীর রানী বেগম জানান, তিনি অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে পুরো একদিন অচেতন অবস্থায় ছিলেন। তার এ ঘটনা জানতে পেরে গোয়েন্দার একটি টিম তার কাছ থেকে বিস্তারিত সব শুনে লিখে নিয়ে গেছেন।