খুমেক হাসপাতালে এক বেডে একাধিক শিশুর চিকিৎসা!

প্রকাশঃ ২০১৭-১০-২৬ - ০০:১৩

খুলনা : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেড সংকট দীর্ঘদিনের সমস্যা। বেড না থাকায় বারান্দায় রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেটি এখন নিত্য দিনের ঘটনা। একইভাবে হাসপাতালের ৪র্থ তলায় অবস্থিত শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের ১৩/১৪ ওয়ার্ডে মাত্র ৪৮টি বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে ৭০-৭৫জন শিশু। এই ওয়ার্ডে ২২ অক্টোবর চিকিৎসা দেওয়া হয় ৫৯টি শিশুর। ২৩ তারিখে ৫৪টি শিশু এবং গত মঙ্গলবার সেবা প্রদান করা হয় ৬২টি শিশুকে। এর ফলে এক বেডেই থাকতে হচ্ছে একাধিক শিশুদের। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগীর সাথে থাকা স্বজনরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শূণ্য থেকে ২৮ দিনের শিশুদের জন্য নিওনেটাল ওয়ার্ডে ২০/২০ ফিটের ছোট একটি কে মধ্যে মাত্র ৬টি বেডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ২৫/৩০টি নবজাতক শিশুকে। স্বল্প জায়গায় ওয়ার্ডের মধ্যে আবার প্রায় অর্ধেক জায়গা জুড়ে রয়েছে কম ওজনে জন্ম নেয়া নবজাতকদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য ইনকিউবেটর মেশিন ৪টি, ফটো থ্যারাপি ৪টি (২টি অকেজো), বাচ্চাদের হিট দেয়ার জন্য ওয়ার্মার মেশিন ৩টিসহ মোট ১১টি মেশিন।

নিওনেটাল ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ অক্টোবর এই ওয়ার্ডে ২৫টি, ২৩ অক্টোবর ২৭টি এবং গত মঙ্গলবার ২০টি নবজাতকের চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।

চিকিৎসা নিতে আসা নগরীর ফুলবাড়ীগেট এলাকার মোমেনা খাতুন বলেন, শনিবার বিকেলে তিনি প্রসূতি বিভাগে নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান জন্মদেন। প্রচন্ড চাপের কারণে রবিবার তাকে ছাড়পত্র দিয়ে সকাল ১১টার মধ্যে বেড থেকে নামিয়ে দেয়। প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে নবজাতক শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় গেটের দারোয়ানকে অনুরোধ করেও ভিতরে ঢুকতে না পেয়ে এ অবস্থায়  তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, এক বেডে ৩/৫টি নবজাতক শিশুকে রাখা হয়েছে। যেখানে শিশু পরিবর্তন এবং চুরি যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এই শিশুদেরকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তাদের পাশে যে ব্যবস্থাপত্র রয়েছে তা আইডেনটিফাই না করেই শিশুর পাশে থাকা ব্যবস্থাপত্র দেখে চিকিৎসা দিতে দেখা যায়। এছাড়া শিশু বিভাগে অধিকাংশ জানালার গ্লাস ভাঙ্গা রয়েছে। ফলে বাইরের বিরুপ আবহাওয়ার প্রভাব পড়ে শিশুদের উপর।

এ ব্যাপারে খুলনা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা: মনোজ কুমার মালাকার বলেন, প্রতিটি ডাক্তার এবং সেবিকাদের শিশুকে ব্যবস্থাপত্রের নাম আইডেন্টিফাই করেই চিকিৎসা দিতে হবে। তা না হলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। শিশু বিভাগে প্রয়োজনের তুলনায় ওয়ার্ডে বেড সংকট রয়েছে। এ ওয়ার্ডে প্রতি রোগীর জন্য আলাদা বেড প্রয়োজন। এছাড়া এই সকল শিশুদের জন্য বিশেষ বেবী কেয়ার ইউনিট যেখানে শুধুমাত্র একটি বেডে একটি শিশুই থাকবে। কিন্তু সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় ভর্তি হওয়া শিশুদেরকে চিকিৎসা দিতে এই অবস্থা স্বীকার নিতে হচ্ছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: টি এম মঞ্জুর মোরশেদ বেডের স্বল্পতা এবং রোগীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, আড়াইশ বেডের হাসপাতালে রোগী থাকছে ৯ শত। তাছাড়া আড়াইশ বেডের জনবল দিয়ে চলছে পাঁচশ বেডের হাসপাতাল। সিট ছাড়া ভর্তি করা সমস্যা থাকে, তবে সরকারি হাসপাতাল মানবিক কারণে ভর্তি করতে হয়। এক বেডে একাধিক বাচ্চা থাকায় ইন্টার্নী নার্সরা বাচ্চাদের নাম আইডেন্টিফাই না করে ব্যবস্থা দিতে দেখা গেছে অভিযোগের বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে দেখে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। এই অবস্থায় শিশু চুরি অথবা পাল্টে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায় বিষয়টি তিনি সমাধানে পথ বের করে ব্যাবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এই অবস্থায় ভুক্তভোগীসহ সেবা নিতে আসা ব্যাক্তিদের দাবী অবিলম্বে শিশু বিভাগের পর্যাপ্ত বেড, নিওনেটাল ওয়ার্ডে প্রসারিত করে বেড বাড়ানো, আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন জরুরী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সামনে শীত আগত তাই ওয়ার্ডের অধিকাংশ জানালার গ্লাস ভাঙ্গা যা সংস্কার করা প্রয়োজন।