খুমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু সনাক্ত কীট শেষ : বেড সংখ্যা বৃদ্ধি

প্রকাশঃ ২০১৯-০৮-০১ - ১৬:৩৫

দিনরাত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে

খুলনা থেকেই ১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত

৯ জেলায় ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৮৯

বিভাগে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬৩

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫৪ জনকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ জন ভর্তি রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন খুলনা থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। বুধবার খুলনা বিভাগের ৯ জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ৮৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলে গত ২৮ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬৩ জন।
এদিকে খুমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ডেঙ্গু শনাক্তে ব্যবহৃত কীট অর্থাৎ এনএসওয়ান পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস বুধবার শেষ হয়েছে। কীট সঙ্কটের কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র দেওয়া হলেও পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসার কারণে বেড সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে হাসপাতালে মেডিসিনের ৫টি ইউনিটে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি করানো হচ্ছে। পাশাপাশি ডেঙ্গু ওয়ার্ড ১০ শয্যা থেকে বৃদ্ধি করে ২০ শয্যা চালু করা হয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডাঃ প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বুধবার জানান, দিনরাত হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য ডেঙ্গু ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করে ২০ শয্যা করা হয়েছে। ৩০ জুলাই খুলনা থেকেই একজন ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে যারা ভর্তি হয়েছেন তারা বাইরে থেকে এ ভাইরাস বহন করে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু শনাক্তকরণে কীট শেষ হয়ে গেছে। বিষয়টি ঢাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। সেখানেও সঙ্কট রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছেন। মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল ও ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের ডেঙ্গু চিকিৎসার মেডিকেল টিমের সদস্য সহকারী রেজিস্ট্রার মেডিসিন ইউনিট-২ এর ডাঃ পার্থ প্রতীম দেবনাথ এ প্রতিবেদককে বলেন, বেড সঙ্কট থাকায় ডেঙ্গু ওয়ার্ড ছাড়াও মেডিসিন সব ইউনিটে ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তি করা হয়েছে। গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত ৫৪ জন ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ২৭ জন ভর্তি রয়েছে। ডেঙ্গুতে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের জ্বর, গায়ে ব্যথা, চোখে ব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা হচ্ছে। অনেকের পেটে ও বুকে ব্যথা হচ্ছে। কেউ বা অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।
এফসিপিএস (মেডিসিন) ডাঃ শৈলান্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ডেঙ্গু বর্তমান সময়ের একটি আতঙ্কের নাম। এবারে ডেঙ্গু রোগের বিশেষ লক্ষণসমূহ হচ্ছে অল্প মাত্রায় জ্বর, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, মাথা ও পেটে ব্যথা ও খাবারে অরুচিসহ নানা উপসর্গ। তিনি বলেন, এক দুইদিনের জ্বরের সাথে উপরোক্ত যে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাবেন। শুধুমাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাবেন। এসপিরিন জাতীয় ওষুধ পরিহার করবেন।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সূত্র মতে, বুধবার ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগের ৯ জেলায় নতুন করে ৮৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে খুলনায় ২৪ জন, সাতক্ষীরায় ৫ জন, যশোরে ২৭ জন, ঝিনাইদহে ৫ জন, মাগুরায় ৫ জন, নড়াইলে ৫ জন, কুষ্টিয়ায় ১৪ জন, চুয়াডাঙ্গায় ২ জন এবং মেহেরপুরে ২ জন। এই পর্যন্ত গত ২৮ দিনে খুলনা বিভাগের ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬৩ জন।
খুমেক হাসপাতালে ৩০ জুলাই আজিজ (২৭) নামে এক ইলেকট্রি মিস্ত্রি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন। তিনি রূপসা উপজেলার নৈহাটি এলাকার বাসিন্দা আশরাফ আলী পুত্র। ২৯ জুলাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে প্রথমে রূপসা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ডাক্তাররা তাকে খুমেক হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
মেডিসিন ইউনিট-৫ এর সিনিয়ার স্টাফ নার্স পুষ্পিতা জানান, বুধবার সকালে তার ওয়ার্ডে দুইজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মোঃ খসরুর স্ত্রী মেরি (৪৫) ও লোহাগড়া উপজেলা এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ আফরোজা (৪৫)।
খুমেক হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট ডাঃ সাবিকুন নাহার বলেন, ডেঙ্গু শনাক্তের সরকারিভাবে ১শটি কীট সরবরাহ করা হয়। বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৭ জনের পরীক্ষার পর এখন কীট শেষ হয়ে গেছে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।