খুমেক হাসপাতালে দুদকের অভিযান : কমিশন বাণিজ্যে জড়িত চিকিৎসকরা

প্রকাশঃ ২০২০-০১-২১ - ১৭:১৮

কামরুল হোসেন মনি : বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে ভয়ানক কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও কমিশনের মাধ্যমে সাধারণ রোগীদের ওইসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়। আর অধিক টাকার বিনিময়ে বাইরের ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীদের।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সোমবার সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দুদকের অভিযানে এসব অনিয়মের চিত্র ধরা পড়ে। এ সময় বহিঃবিভাগের মেডিসিন বিভাগের ২১২নং কক্ষে ডাঃ সুমন রায় অনুপস্থিত ছিলেন। তবে হাসপাতালের পরিচালকের উপস্থিতিতে ওই কক্ষ থেকে উদ্ধার হয় বেসরকারি সন্ধানী ক্লিনিক, মা হেলথ কেয়ার ও সিটি ইমেজিং সেন্টারের প্যাথলজি স্লিপ। অভিযোগ রয়েছে, ডা. সুমন রায় এই সকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে কমিশন বাণিজ্যে জড়িত। এছাড়া আরও কয়েকজন চিকিৎসকের কক্ষ থেকে সায়েন্স ভিউ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের অসংখ্য প্যাথলজি স্লিপ। চক্ষু বিভাগের ল্যাব থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য স্লিপ দিয়ে বেসরকারি ক্লিনিক গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের পাঠাতে দেখা যায়।
দুদক খুলনা সমন্বিয় জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাওন মিয়া জানান, নিয়ন্ত্রণহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা। হাসপাতালের অভ্যন্তরে ভ্রাম্যমাণ এক্সরে, ইসিজি মেশিন নিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল ও ওষুধের দোকানের প্রতিনিধিদের সক্রিয় দেখা গেছে। অধিক টাকার বিনিময়ে বাইরের ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আর্থিক ক্ষতি ও ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীদের। অভিযানকালে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল ও কোর্ট ইন্সপেক্টর বিজন কুমার রায় উপস্থিত ছিলেন।
গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীর স্বামী মাছুম উদ্দিন মোল্লা জানান, তার স্ত্রীকে স্লিপে লিখে ৮-১০টি টেস্ট ফাতেমা হাসপাতাল থেকে করাতে বলেন ওই বিভাগের চিকিৎসক। স্লিপের নিচে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ বললে তারা টেস্টের জন্য ৪ হাজার টাকা দাবি করে। পরে খোঁজ-খবর নিয়ে তিনি এই সরকারি হাসপাতাল থেকে ৫শ টাকা দিয়ে ওই পরীক্ষা করিয়েছেন। দুদকের অভিযানের সময় ফাতেমা হাসপাতাল ও সন্ধানী ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোককে ব্লাডের স্যাম্পল সংগ্রহ করতে দেখা যায়।
এদিকে অভিযানকালে হাসপাতালের লাশঘরের সাথে অবৈধভাবে কাঠের কফিন বানানোর ব্যবসা দেখা যায়। অভিযোগ রয়েছে, মৃত লোকের স্বজনদের কাছে চড়া মূল্যে এসব কফিন বিক্রয় করা হয়। এছাড়া মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি নিয়োজিত আউটসোর্সিং কর্মরত স্টাফদের রোস্টার করার অনিয়ম ধরা পড়ে দুদকের অভিযানে।
এ সময় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আতাউর রহমান দুদকের কর্মকর্তাদের বলেন, আউটসোর্সিংর রোস্টার করার এখতিয়ার তাদের কোম্পানির না থাকলেও তারা প্রভাব খাটিয়ে রোস্টার তৈরি করেছেন। এখানে আমার কিছুই করার নেই বলে তাদেরকে জানায়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, অভিযুক্তদের বিষয়ে মিটিং করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আগে থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কমিশন বাণিজ্যে জড়িত চিকিৎকদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
এর আগেও দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) ঝটিকা অভিযানে সেখানে রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগে অর্থ আদায়, রান্নাঘরে অপরিচ্ছন্নতা, দালালদের দৌরাত্ম্য, জরুরি বিভাগে চিকিৎসক না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে। এছাড়া ২০০৪ ও ২০১১ সালে পৃথক মামলা হয়েছে সার্টিফিকেট জাল করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির।