খুমেক হাসপাতালে স্বেচ্ছায় দেওয়া রক্ত বিক্রি!

প্রকাশঃ ২০২০-০১-০৯ - ১৬:৪০

দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ : বেরিয়ে আসছে নানা অনিয়মের তথ্য

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে গাইনী ওয়ার্ডের ভর্তি হতদরিদ্র ইজিবাইক চালক রায়হানের স্ত্রী গৃহবধূ ববি (২২)। গাইনীজনিত সমস্যায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় খুলনার পাইকগাছা উপজেলা থেকে গত ৫ জানুয়ারি ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার স্ত্রীর জরুরি ভিত্তিতে এ পজেটিভ ৫ ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন। কিন্তু টাকার অভাবে হতদরিদ্র স্বামী রায়হানের পক্ষে এতো রক্ত জাগাড় করে সম্ভব না। এ অবস্থায় খুমেক হাসপাতালে রক্ত সঞ্চালন বিভাগে রক্ত আনতে গেলে সেখানে আউটসোর্সিং এর স্টাফ আদনানেরর যোগসাজসে ৩ ব্যাগ রক্ত ৩ হাজার ৭৫০ টাকার চুক্তিতে প্রথমে ২ ব্যাগ রক্ত নিয়ে আসেন ববির স্বামী। পরে জানা যায় আদনানের দেওয়া দুই ব্যাগ রক্ত স্বেচ্ছায় রক্তদাতা ব্যক্তিদের।
বুধবার খুলনা ব্লাড ব্যাংকের সভাপতি মোঃ সালেহ উদ্দিন খুমেক হাসপাতালের পরিচালকের কাছে ব্লাড ব্যাংকের ওয়ার্ডবয় (আউটসোর্সিং) আদনান মাহমুদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, হাসপাতালে কারও দুর্নীতি করার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে যেই হোক না কেনো। অভিযোগে প্রমাণিত হওয়ায় আউটসোর্সিং আদনানকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এছাড়া ব্লাড ব্যাংকের ল্যাব অ্যাটেনটেন্ড রওশন আরাকে শোকজ করাসহ তার বিরুদ্ধে খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ৫ জানুুয়ারি রায়হানের স্ত্রী ববির রক্তের জন্য তার স্বামী রায়হান ও শাশুড়ি খুমেক হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে রক্ত আনতে জান। এ সময় আদনান মাহমুদ তাকে বলেন, এ প্লাস রক্ত আমাদের কাছে নেই, বাইরে থেকে জোগাড় করে দিবো প্রতি ব্যাগে দেড় হাজার টাকা দিতে হবে। পরে দফা রফা করে ৩ ব্যাগ রক্তের জন্য আদনানের বিকাশে (নং ০১৯৫২-৫৪২১২২) ৩ হাজার ৭৫০ টাকা পরিশোধ করেন। টাকা পরিশোধ করার পর দুই ব্যাগ নিয়ে যান। পরবর্তীতে রায়হানের শাশুড়ি ব্লাড ব্যাংকের সামনে কান্নাকাটি করলে বিষয়টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খুলনা ব্লাড ব্যাংকের সদস্যদের নজরে আসলে বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে এ সংগঠনটি এক ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে দেয়।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খুলনা ব্লাড ব্যাংকের সভাপতি মোঃ সালেহ উদ্দিন এ প্রতিবেদককে সন্ধ্যায় বলেন, খুমেক হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত আদনান মাহমুদের বিরুদ্ধে পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। এ ঘটনায় বুধবার সকালে হাসপাতালের পরিচাল তার রুমে এ বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগী ও অভিযোগকারীদের কথা শোনেন। পরে আদনান নিজের দোষ স্বীকার করেন। এছাড়া আরেক স্টাফ ব্লাড ব্যাংকের ল্যাব অ্যাটেনটেন্ড রওশন আরার নাম উল্লেখসহ ব্লাড ব্যাংকের চিকিৎসকরা বাদে অন্যান্য স্টাফ এ বিষয়ে জড়িত বলে পরিচালকের সামেন উল্লেখ করেন। পরে স্টাফকে বদলি ও আদনানকে চাকরিচ্যুত করেন। তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চল থেকে আসা অসহায় রোগীরা টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় রক্ত দিতে পারে না। আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন অসহায় রোগীদের স্বেচ্ছায় রক্ত দেই। সেই রক্ত যদি সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে, তাহলে অসহায় মানুষগুলো কোথায় যাবে। এসব প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে মানুষের সজাগ থাকতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অভিযুক্ত আদনান নিজের দোষ স্বীকার করে ডাঃ পরিচালক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদকে বলেন, আমি একা অপরাধী না, ব্লাড ব্যাংকের ডাক্তার ব্যতীত প্রত্যেকটি স্টাফ এই অপরাধের সাথে জড়িত। তাহলে শাস্তি আমার একার হবে কেনো। এ সময় পরিচালক উপস্থিত সবার সামনে বলেন, যদি কেউ অপরাধী হয়, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।