খুলনায় আ’লীগের সদস্য টিকিট পাচ্ছেন ব্যাটারী চোর সিন্ডিকেটের প্রধান ‘শহিদ’

প্রকাশঃ ২০১৯-১০-৩১ - ১৫:৪৭

স্টাফ রিপোর্টার : কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা উপেক্ষা করে খুলনা মহানগরীর ১৭নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য টিকিট পাচ্ছেন বহু অপকর্মের হোতা, মোবাইল টাওয়ারের ব্যাটারী চোর সিন্ডিকেটের প্রধান মো. শহিদুল ইসলাম খান। এ বিষয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও অবৈধ টাকার প্রভাবে তাকে সদস্য টিকিট দেওয়া হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর পূর্বেও ১৭নং ওয়ার্ডের সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতায় মুদি’র দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন শহিদ। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে পুরনো ফার্ণিচারের ব্যবসা করে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। একটি সূত্র বলছে- এই কয় বছরে অন্তত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। পুরনো ফার্ণিচার বোর্ড ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন মোবাইল টাওয়ারের ব্যাটারী চোরের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই চোরদের মাধ্যমে ব্যাটারী চুরি করে পরবর্তীতে গোপন কারখানায় নিয়ে যন্ত্রাংশ আলাদা করে বিক্রি করেন বলে জানা যায়।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই মোবাইল টাওয়ারের ব্যাটারী টাওয়ারের চোর সিন্ডিকেটের সদস্য মো. মিলনকে ২৩ পিস ব্যাটারী ও একটি ইজিবাইকসহ নগরীর পাওয়ার হাউজ কদমতলা মোড় থেকে আটক করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সোনাডাঙ্গা থানাধীন আল-ফারুক সোসাইটি এলাকা থেকে সিন্ডিকেটের প্রধান শহিদসহ ৬ জনকে আটক করা হয় এবং ২৪টি ব্যাটারীর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাকে এক দিনের রিমাণ্ডেও নেওয়া হয়েছিলো। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, আলোচিত শহিদ সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতা এলাকায় পুরনো ফার্ণিচার বোর্ডের ব্যবসা করাকালীন রাস্তা দখল করে দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করেন। যা ওই এলাকায় প্রতিনিয়ত দেখা যায়। রাস্তায় বসে পেরেক ছাড়ানোর সময় হাতুড়ি ও ছেনির আঘাতে অল্প সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের সড়ক। প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ করার সাহস পান না। এছাড়া কিছুদিন পূর্বে তার নিজ স্ত্রী রেখে অন্যের স্ত্রীর সাথে অবৈধ মেলামেশার করার কয়েকটি ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ হয়। কিন্তু অর্থ দিয়ে সে ঘটনা ধামাচাপা দেন তিনি।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, প্যানার মাধ্যমে কখনো ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ হাফিজুর রহমান, কখনো আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী খানের নজর কেড়েছেন নব্য আওয়ামী লীগ নেতা শহিদ। আবার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নূর ইসলামের ব্যবসায়িক পার্টনার বলেও গুঞ্জন রয়েছে। তার সুবাদে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বদ্বয়কে ম্যানেজ করে তিনি এবারের সদস্য টিকিট পাচ্ছেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। যাতে বাদ পড়ছেন না হাইপ্রোফাইল নেতারাও। যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ নেতারা পদ থেকে থেকে বাদ পড়েছেন নিজেদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে। তৃণমূল পর্যায়ে যাদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, তাদের টিকিট না দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না কেউ। ফলে বহু অপকর্মের হোতা শহিদুল ইসলামকে টিকিট দেওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা।
এ বিষয়ে ১৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নূর ইসলাম গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে জানান, সেন্টার কমিটি থেকে তালিকা করে আমাদের কাছে পাঠাবেন। এখানে কোন বির্তকিত লোক থেকে থাকলে আমরা তাদেরকে অবহিত করবো। এখনো পর্যন্ত তার ওয়ার্ডে কোন ফাইনাল তালিকা করা হয়নি।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ আলী খান প্রতিবেদককে জানান, আওয়ামী লীগ থেকে কাউকে টিকিট দেওয়া হলে তার বিরুদ্ধে মামলা বা অন্য কোন দলের থেকে আসতে চাইলে তাদেরকে না নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বিষয়টি নেতাকর্মীদের অবহিত করা হয়েছে। সেন্টার কমিটি থেকে লিস্ট করে আমাদের কাছে পাঠানো হয়। সেখানে কোন বির্তকিত ব্যক্তির নাম থাকলে আমরা তা সংশোধন করার জন্য সুপারিশ করতে পারি। এর বাইরে আমাদের কিছু করার থাকে না।
তিনি আরও জানান, শহিদুলের বাবা টিকিট পাওয়ার কথা ছিলো সে বয়স্ক হওয়ার কারণে তার ছেলে শহিদুলকে দেওয়া হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। যদি তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকে, আমরা তাকে বাদ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারি।
তবে ওই এলাকার একটি সূত্র বলছে- আলোচিত শহিদ ছাড়াও তার পরিবারের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। তার বাবা আবুল হোসেন খান সুসময়ের পাখি বলে এলাকায় পরিচিত। সরকার বদলের সাথে সাথে তিনিও দল বদল করে ফেলেন। ইতোপূর্বে কয়েকবার বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে, আবার আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে ভিড়েছেন। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে এবার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা।