খুলনায় পাসপোর্ট অফিসে হয়রানি বন্ধে নানা পদক্ষেপ : বয়স ভেদে ই-পাসপোর্ট চালুর অপেক্ষায়

প্রকাশঃ ২০১৯-০৭-০৪ - ১১:৫২

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস দালালমুক্ত ও হয়রানি বন্ধে র‌্যাব ও দুদকের অভিযানের কারণে দালাল চক্র কৌশল বদল করেছে। কর্তৃপক্ষও গ্রাহকদের হয়রানি বন্ধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অফিস চত্বরে সিসি ক্যামেরাসহ অডিও রেকর্ডের মাধ্যমে সতর্কতামূলক বার্তা প্রচারণা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছেন। পাসপোর্ট করতে এসে এ পর্যন্ত ৪ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়।
এদিকে চলতি জুলাই মাসেই পাসপোর্টের মেয়াদ বয়স ভেদে ৫ ও ১০ বছর করার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ১৮ বছরের নিচে ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের ৫ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট এবং ১৯ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের জন্য ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে এই সেবাটি।
খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মোঃ আবু সাইদ এ প্রতিবেদককে বলেন, পাসপোর্টের মেয়াদ বয়স ভেদে ৫ ও ১০ বছর করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮ বছরের নিচে ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের ৫ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট এবং ১৯ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের জন্য ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট দেওয়া হবে। এই সেবা দিতে আমদের সবকিছুতেই প্রস্তুতি রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেলেই জুলাই মাসে যে কোনো দিন থেকে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু হবে। তিনি বলেন, দালালমুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে অফিসটাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, সাধারণ গ্রাহকরা যাতে দালালদের খপ্পরে না পড়েন সে জন্য অডিও গাইড লাইন্স প্রচারণা ও ডিজিটাল সিস্টেম প্যানা প্রদর্শন ও নাগরিকদের হাতে সেবার কার্যক্রমবিষয়ক লিফলেট সম্বলিত বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। সতর্কতার সাথে কাজ করার কারণে পাসপোর্ট করতে আসা এ পর্যন্ত ৪ রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। দালালদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলে সাথে সাথে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
ই-পাসপোর্ট চালু হলেই এমআরপি পাসপোর্ট বাতিল হবে না বলে জানায় পাসপোর্ট অধিদফতর। তবে নতুন করে কাউকে এমআরপি পাসপোর্ট দেওয়া হবে না। যাদের এমআরপির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তারা নবায়ন করতে গেলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে এমআরপি পাসপোর্ট তুলে নেওয়া হবে।
খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস সূত্র মতে, বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস খুলনা ও এর আওতাধীন ৯টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস হতে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত ৩ বছরে ৮ লাখ ৭০ হাজার ৬৯১টি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ইস্যু হয়েছে। এর বিপরীতে সরকারের ২শ ৯৪ কোটি ৯০ লাখ ৬৪ হাজার ৫১৫ টাকা রাজস্ব আয় হয়। এই সময়ের মধ্যে বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস খুলনা হতে ১ হাজার ৩৫৫টি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রদান করা হয়েছে। এর বিপরীতে ৪৭ লাখ ৮৬ হাজার ৩২৩ টাকা রাজস্ব অর্জিত হয়। খুলনা বিভাগীয় অফিসে গত ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯২৮টি এমআরপি ইস্যু হয়েছে। এর বিপরীতে সরকারের রাজস্ব অর্জিত হয় ৪৯ কোটি ৬ লাখ ১৫ হাজার ৫৭২ টাকা।
পাসপোর্ট অফিস সূত্র মতে, বর্তমানে সাধারণ ও জরুরি পাসপোর্ট করতে ভ্যাট বাদে তিন হাজার ও ছয় হাজার টাকা ফি দিতে হয়। এবার পাঁচ ও দশ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট নিতে সাড়ে ৫ হাজার ও ১১ হাজার টাকা ফি লাগবে। এর সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত হলে সাধারণ পাসপোর্ট করতে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা এবং জরুরি পাসপোর্টে ১২ হাজার ৬৫০ টাকা খরচ হবে।
সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডাটা পেজে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। এই ই-পাসপোর্টের মেয়াদ বয়স অনুপাতে ৫ ও ১০ বছর হবে।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমান এমআরপি ব্যবস্থা থেকে ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঝামেলাবিহীনভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন। কারণ ই-পাসপোর্ট এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বিদ্যমান বইয়ের সঙ্গে একটি ডিজিটাল পাতা (ডাটা পেজ) জুড়ে দেওয়া হবে।
ওই ডিজিটাল পাতায় উন্নতমানের মেশিন রিডেবল চিপ বসানো থাকবে। এতে সংরক্ষিত থাকবে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য। ডাটা পেজে থাকবে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশও। ভ্রমণকালে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ কম্পিউটারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য-উপাত্ত জানতে পারবেন।
তাছাড়া সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। ঝামেলাহীনভাবে ই-গেট ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করা যাবে।