খুলনায় বাসাবাড়িতে অভিনব পন্থায় মাদক বিক্রেতারা সক্রিয় : আটক ২

প্রকাশঃ ২০১৯-০৪-১৩ - ১৪:৩৭

কামরুল হোসেন মনি : খুলনায় বাসাবাড়িতে অভিনব পন্থায় মাদক বিক্রেতারা মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছেন। খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় গঠিত টাস্ক ফোর্স মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে ফেনসিডিলসহ মাদক বিক্রেতা আটক হওয়ায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) নগরীর বাগমারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭৮ বোতল ফেনসিডিলসহ শেখ তানভির আহমেদ সিদ্দিকী ওরফে বনি (৩৫)কে আটক করেন। পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তিতে নগরীর ইকবালনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রেতার পৃষ্ঠপোষকতা হিসেবে মাসুদ আহম্মেদ ডলার (৪০) নামে অপর মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্র মতে, শুক্রবার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সংস্থার গোয়েন্দা সমন্বয়ে একটি যৌথ টিম নগরীর বাগমারা মেইন রোড ৮৮/১ এর ত্রিধারা বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ওই বাড়ির মালিক শেখ মোঃ আব্দুস সালামের পুত্র শেখ তানভির আহমদ সিদ্দিকের ঘর তল্লাশি চালিয়ে ৭৮ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত তানভির জানায়, গত দেড় মাস ধরে এই ফেনসিডিল ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সে মাসুম আহম্মেদ ডলারের এর মাধ্যমে ৬৪ হাজার টাকার বিনিময়ে ফেনসিডিলের একটি চালান তার বাসায় আনে। তার বাসার ছাদের ওপর ফেনসিডিল বিক্রি ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। প্রতি পিস ৯শ টাকা করে কিনে এনে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। ফেনসিডিল ক্রেতাগুলো ডলার তার বাসায় পাঠিয়ে দিতেন। তার এই স্বীকারোক্তিতে নগরীর ৪৫, ইকবালনগর মসজিদ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ওই এলাকার বাসিন্দা মৃত খবির উদ্দিনের পুত্র মাসুম আহম্মেদ ডলারকে আটক করা হয়। আটক মাসুম আহমেদ ডলার জানান, তিনি মাদক বিক্রির সাথে জড়িত নন। তবে তিনি ফেনসিডিল তানভিরের বাসায় সেবন করেছিলেন।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় এর উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা চলমান থাকায় মাদক বিক্রেতারা অভিনব পন্থায় মাদক বিক্রি শুরু করেছেন। এ সব মাদক বিক্রেতারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজ বাসাবাড়িতে ফেনসিডিল বিক্রি ও সেবনের ব্যবস্থা করাচ্ছেন। বর্তমানে ধনী পরিবারের ছেলেরা এসব ফেনসিডিল বিক্রির সাথে জড়িয়ে পড়ছেন।
এর আগে গত ২ এপ্রিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এর গঠিত টাস্ক ফোর্স নগরীর দারোগাপাড়া ও মরিয়মপাড়া নামক স্থানে পৃথক অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় দারোগাপাড়া এলাকায় মৃৃত সৈয়দ আলীর পুত্র হামিদ স্টোরের দোকানে মালিক আঃ হামিদকে ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়। আটককৃত মাদক ব্যবসায়ী হামিদ মুদি দোকানের আড়ালে ফেনসিডিল বিক্রি করে আসছিলেন। এরপর ৫৮নং খানজাহান আলী রোডে মরিয়মপাড়ায় এক বাসাবাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ওই এলাকার বাসিন্দা এ্যানোটনি সরকারের স্ত্রী মনিকা সরকার ও তার ছেলে রূপক সরকারকে ৬৩ বোতল ফেনসিডিল, এক বোতল বিদেশি মদ, বিয়ার, একটি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, রিভলবারের ১৩ পিস ও সর্টগানের ১৭ পিস গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
মরিয়মপাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, জনৈক হিমু নামে এক ব্যক্তি বিভিন্ন মাদক সাপ্লাই দিতেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করে আসল গডফাদার হিমুকে আটক করতে পারলে এ মাদকের চালান কোথা থেকে খুলনায় আনা হয় বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আটক মাদক ব্যবসায়ী রূপক সরকার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, যশোরে কসমেটিক ব্যবসায়ী আয়েশা নামে এক পাইকারি ফেনসিডিল বিক্রেতাদের কাছ থেকে এই ফেনসিডিল চালানটি খুলনায় আনা হয়েছিলো।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় জানায়, খুলনা জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এর তত্ত্বাবধানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় গঠিত টাস্ক ফোর্স অভিযান পরিচালনা করা হয়। অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক মোঃ ইউসুফ আলীর নেতৃত্বে অভিযানে উপস্থিত ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান, জেলাপ্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্টে মিজানুর রহমান খান, ‘ক’ সার্কেলের পরিদর্শক হাওলাদার মোঃ সিরাজুল ইসলাম, ‘খ’ সার্কেলের পরিদর্শক সাইফুর রহমান রানা, উপ-পরিদর্শক কেএমএ হানিফ, গোয়েন্দা শাখার উপ-পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন, সদর থানার এএসআই শুভেন্দু কুমার পাল।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় এর গোয়েন্দা শাখার উপ-পরিদর্শক কেএমএ হানিফ বাদী হয়ে আটক দুই ব্যক্তিকে আসামি করে মাদকের আইনে মামলাটি দায়ের করে