খুলনায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আড়ালে মাদকের রমরমা ব্যবসা!

প্রকাশঃ ২০২০-১০-০৪ - ১৮:৪৪

কামরুল হোসেন মনি : দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নগরীতে ফার্নিচারের ব্যবসার আড়ালে ফেনসিডিল ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন মাদক ব্যবসায়ী হেমায়েত শেখ হিমু (৪১)। নগরীর ৫৮, খানজাহান আলী রোড রূপসা এলাকায় তার মেসার্স হিমু ফার্ণিচার নামক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত ১ অক্টোবর নগরীতে মাদক বিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযানকালে ফার্ণিচার ব্যবসায়ী হিমুকে ১১ বোতল ফেন্সিডিলসহ আটক করেন প্রশাসন। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে হিমুর মাদক কারবারের বিষয় এলাকাবাসী মুখ খুলতে শুরু করেন। এর আগেও মাদক বিরোধী ট্রাস্ক বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে মুদি দোকান ব্যবসায়ী ও কসমেটিক ব্যবসার ব্যক্তিদেরকে মাদকসহ আটক করেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে ২ এপ্রিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গঠিত টাস্ক ফোর্সের একটি টিম নগরীর দারোগাপাড়া ও মরিয়ম পাড়ায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ১১৩ বোতল ফেনসিডিল, বিদেশী মদ, বিয়ার, একটি পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, রিভলবারে ১৩ পিস গুলি ও শর্টগানের ১৭পিস গুলি উদ্ধার করে। এছাড়া অভিযানের সময় মাদক বিক্রির ১১ হাজার ৫শ’ টাকা ও মাদক ব্যবসায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল আর ওয়ান জব্দ করা হয়। এর আগে একই দিনে নগরীর দারোগাপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ওই এলাকায় বাসিন্দা মৃৃত সৈয়দ আলীর পুত্র হামিদ স্টোরের দোকানে মালিক আঃ হামিদকে ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়। আটককৃত মাদক ব্যবসায়ী হামিদ মুদিদোকানের আড়ালে ফেনসিডিল বিক্রি করে আসছিলেন। এরপর ৫৮নং খানজাহান আলী রোডে মরিয়ম পাড়ায় অভিযান পরিচালনা করে টাস্কফোর্স। ওই এলাকার বাসিন্দা এ্যানোটনি সরকারের স্ত্রী মনিকা সরকার ও তার ছেলে রূপক সরকারকে ৬৩ বোতল ফেনসিডিল, একটি বিদেশী মদ, বিয়ার, একটি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, রিভলবারের ১৩ পিস ও সর্টগানের ১৭পিস গুলি উদ্ধার করা হয়। ওই সময় এলাকাবাসী জানিয়েছিলেন, এই মূল মাদককারবারীর মূল সিন্ডিকেটের হোতা হেমায়েত হোসেন হিমু। ওই সময় অভিযানের টের পেয়ে কিছুদিন সে পালিয়ে যেয়ে গা ঢাকা দেয়।
আটক মাদক ব্যবসায়ী রূপক সরকার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, যশোরে কসমেটিক ব্যবসায়ী আয়েশা নামে এক পাইকারি ফেনসিডিল বিক্রেতাদের কাছ থেকে এই ফেনসিডিল চালানটি খুলনায় আনা হয়েছে। মরিয়ম পাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, মেসার্স হিমু ফার্নিচারের মালিক হেমায়েত হোসেন হিমু এই এলাকায় মাদকের নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত রয়েছে। সে এই এলাকায় তার সহযোগিদের দিয়ে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ নানা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তার সহযোগি হিসেবে রয়েছে ইয়াবা বিক্রেতা নগরীর গগণ বাবু রোডে এলাকার বাসিন্দা খাদেমের পুত্র মো: কামাল। সেই এই এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ‘ক’ সার্কেলের পরিদর্শক মো: আতাউর রহমান জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় গঠিত মাদক বিরোধী ট্রাস্ক ফোর্স গত ১ অক্টোবর রূপসা ট্রাফিক মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের মধ্যে থেকে হেমায়েত শেখ হিমুর কাছ থেকে ১১ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। আটককৃত হিমু দক্ষিণ টুটপাড়া মেইন রোড এলাকার বাসিন্দা মৃত আহমেদ শেখের পুত্র।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা পরিদর্শক পারভিন আক্তার জানান, বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সে মধ্যে ফেনসিডিল ব্যবসায়ী হিমু বসে ছিলেন। এ সময় সে পালানোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে তাকে তল্লাশী চালিয়ে ফেনসিডিলগুলো উদ্ধার করা হয়। টাস্ক ফোর্সের অভিযানের নেতৃত্বদেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তারিফ-উল-হাসান।