খুলনায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নবায়নের আবেদন জমা না দিলে বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশঃ ২০২০-০৯-২৪ - ১৭:৫৯

খুলনা মহানগরীতে ক্লিনিকের লাইসেন্স নেই ৩৯ টির

কামরুল হোসেন মনি : মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণকালে রিজেন্ট হাসপাতালের নানা অনিয়মের খবর প্রকাশ হওয়ার পরই লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। অভিযানে দেখা যায়, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বড় অংশেরই নেই নিবন্ধন। আবার কিছু আছে লাইসেন্স নিলেও তা নবায়ন করেনি। এসব প্রতিষ্ঠানের লাগাম টানতে লাইসেন্স নবায়ন ও নিবন্ধনে গত ৮ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত হাই পাওয়ার টাস্কফোর্সের সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ জুলাই থেকে অনিবন্ধিত হাসপাতাল ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে খুলনা জেলা প্রশাসন। অভিযানে যেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নবায়ন নেই বা আবেদন করেননি তাদেরকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নবায়নের কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। উক্ত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা না দিলে ওই স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি প্রেরণ করে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
গতকাল বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত খুলনা জেলায় ১৯ বেসরকারি হাসপাতাল ও ৩৪ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষ নবায়নের জন্য কোন আবেদন করেননি। এছাড়া খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন খুলনা মহানগরীতে ২৩২টি ক্লিনিকের মধ্যে নবায়ন রয়েছে ৭০টি। লাইসেন্স নেই ৩৯টি ক্লিনিকের। লাইসেন্স আছে কিন্তু নবায়নের জন্য আবেদন করেনি অনলাইনে এমন সংখ্যা রয়েছে ১৪টি। এছাড়া ৪৫টি ক্লিনিক আবদনের প্রেক্ষিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছে। খুলনা সিভিল সার্জন ও খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত খুলনার ৯ উপজেলায় অবস্থিত ১৯টি ক্লিনিক নবায়নের জন্য পুনরায় কাগজ-পত্র জমা দেননি সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকগুলোর মালিকরা। এর মধ্যে রয়েছে দিঘলিয়া উপজেলার মধ্যে ফুলবাড়ীগেট অবস্থিত মৈত্রি নার্সিং হোম, পেসেন্ট নার্সিং হোম, তেরখাদা উপজেলার মধ্যে ইন্দুরহাটী এলাকার পাতলা কমিউনিটি হাসপাতাল, সাচিয়াদাহে কমিউনিটি হাসপাতাল, কাটেঙ্গা বাজার এলাকায় স্বপ্ন সিঁড়ি প্রাইভেট হাসপাতাল লি: এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, রূপসা উপজেলার তিলক এলাকায় রেভা: আব্দুল ওয়াদুদ মেমোরিয়াল হাসপাতাল (১০০ শয্যা), জাবুসা চৌরাস্তায় নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ডুমুরিয়া উপজেলার মিকশিল রোডে জনসেবা ক্লিনিক, চুকনগর বাজার এলাকায় চুকনগর সার্জিক্যাল ক্লিনিক এ- ডায়াগনস্টিক, বটিয়াঘাটা উপজেলার জিরো পয়েন্টে সুন্দরবন ক্লিনিক এ- নার্সিং হোম, এম আর সেন্ট্রাল হাসপাতাল, হাটবাঢী এলাকায় সোনালী ক্লিনিক এ- ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পাইকগাছা উপজেলার সরল এলাকায় (নতুন) পলক ক্লিনিক এ- ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাকা বাজার এলাকায় আশালতা ক্লিনিক এ- তুলি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এম মনোয়ারা হাসাপাতাল, মনোয়ারা ক্লিনিক, কয়রা উপজেলার আমাদী এলাকায় পাইলট সার্জিক্যাল হাসপাতাল, মদিনাবাদ ১নং কয়রা এলাকায় সাগর নার্সিং হোম ও রায় ক্লিনিক। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ওই সব ক্লিনিকগুলো অধিকাংশই নবায়ন শেষ হয়েছে ৩ বছর, কারো ২ বছর আবার কারোর নবায়নের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তারা কেউ পুনরায় লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেননি।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা এ প্রতিবেদককে জানান, গত জুলাই মাসে খুলনা মহানগরীতে অবস্থিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পরিদর্শনে যাই। পরিদর্শনে যে সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নবায়নন নেই বা কোন আবেদেন করেননি তাদের আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নবায়নের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর কেউ যদি ব্যর্থ হন, তাহলে স্ব-স্ব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চিঠির মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
খুলনা সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনা জেলায় অবস্থিত যেসব ক্লিনিক বা ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোর নবায়ন নেই বা পুনরায় নবায়নের জন্য কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য তাদেরকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে যদি কেউ কাগজপত্র দিতে ব্যর্থ হন তাদের স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি চিঠির মাধ্যমে বন্ধ ঘোষণা করা হবে। এর আগে এই বিষয় নিয়ে এক আলোচনা সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
জানা যায়, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বড় অংশেরই নেই নিবন্ধন। আবার কিছু আছে লাইসেন্স নিলেও তা নবায়ন করেনি। নজরদারি না থাকায় নানা অনিয়মে ভেঙে পড়েছে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা। এ অবস্থায় ১৬ জুলাই থেকে অনিবন্ধিত হাসপাতাল ক্লিনিকের বিরুদ্ধে পরিদর্শন শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়ে খুলনা জেলা প্রশাসন। পরিদর্শনে সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স না থাকা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও কাগজপত্র না থাকায় নগরীর খানজাহান আলী রোডের মীম নার্সিং হোম বন্ধ করে দেন। ওই সময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান খান ও সেটু কুমার বড়–য়া এ প্রতিবেদককে জানান, ক্লিনিকটিতে কোনো সার্বক্ষণিক চিকিৎসক বা নার্স নেই। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা (আয়া) নার্সের পোশাক পরে চিকিৎসা দেয়। চারপাশে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, অনেকটা গোডাউনের মতো। মেডিকেল প্রাকটিস এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮২-এর বিধি অনুযায়ী ৫ দিনের মধ্যে এখানে চিকিৎসাধীন রোগীদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।