খুলনায় ‘মদ্যপানে’ মৃত্যু’র কারণ উদঘাটন : আটক ১

প্রকাশঃ ২০১৯-১০-১৮ - ১১:৪৯

দুইজনের নামে হত্যা মামলা :  স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা মহানগরী ও রূপসা উপজেলায় পূজায় ‘মদ্যপানে’ মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করেছে খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় অমল দাস (২৬) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে। ঘটনার মুলহোতা ইলিয়াস মুন্সী (৩২) লাপাত্তা রয়েছে। তাকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার খুলনা সদর থানায় দুইজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বাদী মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা খুলনা থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ইকবাল হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার আসামি অমল দাস আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। অপর আসামি গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, মদ্যপানে মৃত্যুর ঘটনায় কারন উদঘাটনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। রূপসায় মদ্যপানে যারা মারা গেছেন তাদের স্ব স্ব ঠিকানায় গিয়ে কয়েকজন পরিবারের স্বজনদের ও বন্ধুদের নিকট থেকে জানা যায় ওই মদের যোগানদাতা অমল দাস। তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় সে মৃত ব্যক্তিদের ৩ জনের কাছে মদ সরবরাহ করেন। তার দেয়ার মদ জনৈক ইলিয়াস মুন্সীর কাছ থেকে গত ৭ অক্টোবর কিনে এনে ওদেরকে সরবরাহ করেন।
‘ক’ সার্কেলের পরিদর্শক হাওলাদার মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, খুলনায় মদ্যপান করে মৃত্যুর ঘটনায় ৪ সদস্য’র একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত কমিটির তিনি একজন সদস্য। রূপসা উপজেলায় বাসিন্দা নিহত পরিমল, দীপ্ত ও ইন্দ্রানীর বাসায় সরেজমিনে গিয়ে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। নিহত পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করি। গত ১৬ অক্টোবর শঙ্খ মার্কেট থেকে অমল দাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে নিয়ে আসি। এ সময় সে স্বীকার করেন ওই মৃত ব্যক্তিদের কাছে মদ ইলিয়াস মুন্সীর কাছ থেকে এনে সরবরাহ করেন। ওই দিন ইলিয়াস মুন্সীকে ধরতে নগরীর মিয়া পাড়া বাসা নং-২২/১ জুলফিকার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেই ওই বাড়িতে ৩য় তলায় ভাড়া থাকতেন। আমাদের অভিযানে টের পেয়ে স্ব-পরিবারকে নিয়ে সে পালিয়ে যায়। অভিযানে তার বাড়িতে খালি বিদেশী মদের বোতল (লেবেল ছাড়া) উদ্ধার করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রূপসা উপজেলা যুগিহাটি গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ দাসের পুত্র অমল দাস মদ্যপানে নিহত পরিমল দাস, দিপ্ত দাসও ইন্দ্রানী বিশ্বাস নগরীর শঙ্খ মার্কেট বধুবরণ নামে অডিও ভিডিও দোকান আছে অমল দাসের কাছ থেকে মদ সংগ্রহ করেন। তাকে ১৬ অক্টোবর দোকান থেকে সকালে আটক করেন। সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন মৃত ব্যক্তিদের কাছে গত ৭ অক্টোবর ইলিয়াস মুন্সীর কাছ থেকে মদ এনে সরবরাহ করেন। তার নিজ দোকানে বসে ইলিয়াসকে মোবাইলে মাধ্যমে ৪ বোতল অবৈধ বিদেশী ক্রয় করেন। এই মদের ক্রেতা ছিলো মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পরিমল দাস, দীপ্ত দাস ও ইন্দ্রানী বিশ্বাসের নিকট বিক্রয় করেন। জিজ্ঞাসাবাদে আটক অমল দাস জানান, ইলিয়াস মুন্সী খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ বিদেশীমদের মুল যোগানদাতা। ফোনের অর্ডারের মাধ্যমে সে বিদেশী মদ ক্রেতাদের নিকট সরবরাহ করেন।
উল্লেখ্য, অতিক্তি মদ্যপানের কারণে নগরীর মহাসিন রোডে আরজেন আলী লেন এলাকার বাসিন্দা ধীনের বিশ্বাসের পুত্র মনিজত বিশ্বাস (৫২), নগরীর গল্লামারী এলাকার বাসিন্দা নরেন্দ্র দাসের পুত্র তাপস দাস (৩৫) ও তার ভাই প্রসেনজিত দাস (২৯), ভৈরব টাওয়ার এলাকার বাসিন্দা মানিক বিশ্বাসের পুত্র রাজু বিশ্বাস (২৫), গ্লাক্সো মোড়ের বাসিন্দা প্রদীপ শীলের পুত্র সুজন শীল (২৬), রূপসা উপজেলা রাজাপুর গ্রামের সত্যরঞ্জন সাহার পুত্র পরিমল (৩০), নির্মল দাসের পুত্র দীপ্ত দাস (৩০) এবং নগরীর রায়পাড়া ক্রস রোড এলাকার বাসিন্দা বিমল শীলের পুত্র অমিত শীল (২২) এবং রাজাপুর গ্রামের সমীর বিশ্বাসের স্ত্রী ইন্দ্রানী বিশ্বাস (২৫) মারা যান। নিহতরা মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাতে বিভিন্ন সময়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের মধ্যে দুজন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। নিহতরা দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীতে আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে মদ্যপান করেছিলেন। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে তারা মারা যায়।