খুলনায় সাড়া ফেলেছে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’র বিদ্যুৎ সংযোগ

প্রকাশঃ ২০২০-০২-০৬ - ১৮:২৫

খুলনা অফিস : ভ্যানগাড়িতে আছে মিটার, বিদ্যুতের তারসহ অন্য সরঞ্জাম। সঙ্গে আছেন লাইনম্যান ও ওয়ারিং পরিদর্শক। প্রতিদিন সকাল থেকে খুলনার দাকোপ উপজেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন তাঁরা। গ্রাহক বিদ্যুৎ নিতে চাইলে মাত্র পাঁচ মিনিটেই পেয়ে যাবেন সংযোগ। কোনো হয়রানি নেই, দিতে হবে না কোনো বাড়তি অর্থ।
ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’। আর এর উদ্যোক্তা খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আলতাফ হোসেন । তিনি জানান, ২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম গোটা খুলনা জেলায় সব বাড়িতে বিদ্যুৎ–সংযোগ না পৌঁছানো পর্যন্ত চলবে। শুরুর পর থেকেই অনেক জায়গায় নতুন সংযোগ দিয়েছেন।
খুলনা জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে একটি উপজেলা দাকোপ। ৯টি ইউনিয়নের এই উপজেলায় ১০৬ টি গ্রাম রয়েছে, যেখানে প্রায় ৩ লাখ লোকের বসবাস। এখানে প্রতিদিনই নতুন সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে।
খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আলতাফ হোসেন জানান, দেশে এখনো বিদ্যুৎ নিতে গিয়ে গ্রাহকেরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হন। একটা সংযোগের জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। অনেক সময় বাড়তি পয়সাও খরচ হয়ে যায়, যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি জানান, এই অবস্থা দেখে তাঁর মাঝেমধ্যেই খারাপ লাগত। তা ছাড়া সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে। সেই জায়গায় গ্রাহক গ্রাহক হয়রানির শিকার হবেন, এটা হতে পারে না। তাই তিনি বিকল্প উদ্যোগ নেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন সংযোগ কীভাবে দেওয়া যায়, সেই পরিকল্পনা নেন। সেই পরিকল্পনা থেকে তিনি এই ভ্যানগাড়িতে করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এটাকে তিনি ‘আলোর ফেরিওয়ালা, পল্লী বিদ্যুৎ দুয়ার মিটারিং কার্যক্রম’ নাম দিয়েছেন। ওই নামেই চলছে তাঁর এই কার্যক্রম।
খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বারইখালি গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পে নতুন সংযোগ পাওয়া সোনাবানু বেগম জানান, পল্লী বিদ্যুতের এই কার্যক্রম তাঁদের অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে। সংযোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে ধরনা দিতে হচ্ছে না। টাকা জমা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো লাগছে না। দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে না। মাত্র পাঁচ মিনিটেই নতুন সংযোগ পেয়ে যাচ্ছেন, যা এর আগে ভাবতেও পারেননি তাঁরা।
দাকোপ উপজেলার সদরের নজরুল নামের এক গ্রাহক জানান, পল্লী বিদ্যুতের এই কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা– কর্মচারীদের কাছ থেকে জনগণ প্রকৃত সেবা পাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভ্যানে মিটার, তার থেকে শুরু করে সব ধরনের সরঞ্জাম থাকছে। দুজন লাইনম্যান ও একজন ওয্যারিং পরিদর্শক থাকছেন ওই ভ্যানে। তাঁরা গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন। যে এলাকার বাসাবাড়িতে এখনো বিদ্যুৎ নেই, সেই এলাকায় বেশি যাচ্ছেন, সেখানে মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। যাঁরা নতুন সংযোগ নিতে আগ্রহী, ওয়্যারিং পরিদর্শক ওয়্যারিং যাচাই করে ঠিক আছে জানালেই সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পল্লী বিদ্যুতের লোকজন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোর কারণে পুরোনো গ্রাহকদের কোনো সমস্যা থাকলে সেটাও দ্রুত ঠিক করে নিতে পারছেন তাঁরা।
খুলনার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক( অর্থ )উৎপল মন্ডল জানান , সারা দেশের ন্যায় খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি যে কর্মসূচি নিয়েছে, তা অনুকরণীয়।