খুলনায় হিট লিস্টে মহিলাসহ ২৬ মাদক বিক্রেতা

প্রকাশঃ ২০১৮-০৫-২২ - ১৮:৩৪

জেলা মাদকদ্রব্য’র বিশেষ অভিযান শুরু

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা মহানগর ও জেলায় তালিকাভুক্ত মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে ২৬ মাদক বিক্রেতা গোয়েন্দার হিটলিস্টে রয়েছে। এর মধ্যে মহিলার সংখ্যা ১০ জনের মতো। এরা মূলত পাইকারি মাদক বিক্রেতা হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। এদের পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয় প্রশ্রয়দাতাদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিকরা গোয়েন্দাদের নজরদারিতে রয়েছেন। ইতোমধ্যেই মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে র‌্যাব।
অপরদিকে খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ১৫ দিনব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছেন। তাদের সংস্থা ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৃথক তালিকা থেকে সমন্বয় করে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার থেকে জানানো হয়।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় এর উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, তার তত্ত্বাবধানে ২১ মে থেকে আগামী ৪ জুন পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। ‘ক’ ও ‘খ’ সার্কেল ও গোয়েন্দা শাখা মিলে পৃথক তিনটি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে ৫ সদস্য নিয়ে দিন-রাতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। সাথে রয়েছে এপিবিএন নিয়ে গঠিত বিশেষ টাস্ক ফোর্স। এতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেতৃত্ব দেবেন।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্র মতে, ‘ক’ ও ‘খ’ সার্কেলে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা মিলে মোট ২৩০ থেকে ২৫০ জন মাদক বিক্রেতার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর সাথে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাদক বিক্রেতাদের তালিকাও রয়েছে। এর মধ্যে খালিশপুর, দৌলতপুর, আড়ংঘাটা, খানজাহান আলী থানা ও উপজেলা ফুলতলা, ডুমুরিয়া, তেরখাদা ও দিঘলিয়া নিয়ে গঠিত ‘খ’ সার্কেলের তালিকাভুক্ত পাইকারি ও খুচরা মাদক বিক্রেতা ১০১ জন রয়েছে। এছাড়া সদর, লবণচরা, হরিণটানা, সোনাডাঙ্গা ও উপজেলা রূপসা, পাইকগাছা, কয়রা, বটিয়াঘাটা ও দাকোপ থানা নিয়ে গঠিত ‘ক’ সার্কেলে তালিকাভুক্ত পাইকারি ও খুচরা মাদক বিক্রেতা রয়েছে আরও ১৪০ জনের মতো।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, খুলনায় ২৫০ পাইকারি ও খুচরা মাদক বিক্রেতার মধ্যে ২৬ জন হিটলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জনের মতো মহিলা মাদক বিক্রেতা রয়েছে। এদের মধ্যে জাহানারা ওরফে জানু, হোসনে আরা ও লুৎফার নাহার লুতু এই তিন বোন মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকায় এলাকায় এরা থ্রি সিস্টার নামে প্রশাসনসহ এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ইয়াবা-ফেনসিডিলসহ নানা মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এছাড়া হিটলিস্টের মধ্যে রয়েছে মহিলা মাদক বিক্রেতা শিউলি বেগম, মায়া, রেখা বেগম, বেনু, আসমা, লিপি ও বুবলী। বিদেশি ও দেশি পাইকারি ও খুচরা অবৈধভাবে মদ বিক্রেতাদের নামও রয়েছে।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় এর ‘খ’ সার্কেলের পরিদর্শক মোঃ সাইফুর রহমান রানা এ প্রতিবেদককে বলেন, একজন মাদকসহ একাধিকবার আটক হচ্ছেন। এদেরকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হচ্ছে। আবার আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জামিনে বেরিয়ে এসে আবার এই ব্যবসায় ফিরে যাচ্ছেন।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল সরবরাহকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরকম নির্দেশনার পর থেকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছেন। তিন ধরনের তালিকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই তালিকার মধ্যে “টপ লিস্ট” তালিকায় রয়েছে পাচারকারীদের নাম, “টপ টু” তালিকা, “টপ থ্রি” তালিকা” ও “টপ টেন” তালিকায় রয়েছে ডিলাররা। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে পাঠানো তালিকার সমন্বয়ে ওই তালিকাগুলো করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে র‌্যাবের অভিযানে ১৯ মে গভীর রাতে যশোরের নওয়াপাড়ায় অভিযানকালে ক্রসফায়ারে ৩ জন মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। র‌্যাবের অভিযান চলবে বলেও জানান তিনি।