খুলনায় ৩৬ জন এইচআইভি সনাক্ত : শিশুসহ ৭ জনের মৃত্যু

প্রকাশঃ ২০১৮-১১-২০ - ১৩:৫০

৬ হাজার গর্ভবর্তী মায়েদের মধ্যে শিশুসহ ৩ জন সনাক্ত

অপারেশনের পূর্বে প্রত্যেককে এইচআইভি পরীক্ষা আওতায় আনার প্রস্তাব

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল এআরটি (এন্ট্রি রিট্ররোভাইরাল থেরাপী) সেন্টার থেকে গত এক বছরে ১০৬১ জনকে এইচআইভি পরীক্ষা করে শিশুসহ ৩৬ জনকে এইচআইভি সনাক্ত করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে শিশুসহ ৭জন মারা যায়। এছাড়া ৬ হাজার ২৬৯ গর্ভবতী মায়েদের এইচআইভি পরীক্ষা করে শিশুসহ ২ জন গর্ভবতী মায়ের এইচআইভি পজেটিভ পাওয়া গেছে।
সোমবার (১৯ নভেম্বর) খুমেক হাসপাতালে তত্ত্ববধায়ক অফিস রূমে স্ট্রেন্থেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের আওতায় স্টেক হোল্ডারদের সাথে ত্রৈ-মাসিক সমন্বয় সভায় এ সব তথ্য তুলে ধরা হয়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রকল্পের পরিচালক ডাঃ এ টি এম এম মোর্শেদ সভায় সভাপতিত্ব করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আওতাধীন জাতীয় এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফ এর কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যে হলো এইচআইভি সংক্রমিত মা  থেকে শিশুর এইচআইভি সংক্রামন প্রতিরোধ করা ।
সভায় জানানো হয়, ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ হাজার ২৬৯ জন গর্ভবতী মায়েদের বিনামুল্য এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে ২ জন এইচআইভি আক্রান্ত মাকে ও একজনর শিশু পাওয়া গেছে। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে খুমেক হাসপাতালে এআরটি সেন্টার থেকে ১ হাজার ৬১ জন বিনামুল্য এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ৬১ জনে শরীরে এইচআইভি সনাক্ত করা হয়। যার মধ্যে শিশু ৬ জন, পুরুষ ১৫ জন ও মহিলা ১৫ জন রয়েছে। তার মধ্যে ৩ জন পুরুষ, ৩ জন মহিলা ও ১ জন শিশু মারা গেছে। এ পর্যন্ত এইচআইভি সংক্রমিত আরো ২১১ জনকে বিনামুল্য স্বাস্থ্য সেবা ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
স্ট্রেন্থেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস, খুমেক হাসপাতালে পক্ষ থেকে গত ১৩ নভেম্বর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্যাটেলাইট প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এইচআইভি সনাক্তকরন সেবা প্রদান শুরু করে। এ সেবা দানের মাধ্যমে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানে আগত গর্ভবতী মায়েদের বিনামুল্য ওই সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠান যাতে এইচআইভি পরীক্ষা দর্ক্ষতা অর্জনের জন্য দুইজন স্টাফকে হাতে কলমে এইচআইভি কাউন্সিলিং ও টেস্ট্রিং এর বিষয়টি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
আলোচনা সভায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রকল্পের পরিচালক ডাঃ এ টি এম এম মোর্শেদ বলেন, সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এইচআইভি সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার মানুষদের সনাক্তকরন সহজ হয়।  খুমেক হাসপাতালের গাইনী ও প্রসুতি বিভাগের প্রধান ডাঃ সামছুর নাহার লাকী বলেন, প্রত্যেক গর্ভবতী ও গর্ভোত্তর মাকে এইচআইভি পরীক্ষা আওতায় আনার জন্য বলেন। তিনি বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই পরীক্ষার ব্যাপকতা বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে কম খরচে করার জন্য বিশেষভাবে আহবান জানান। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) মেডিকেল অফিসার ডাঃ স্বপন কুমার হালদার বলেন, খুলনা শহরে যে সকল প্রতিষ্ঠানগুলো চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন তাদেরকে কেসিসি স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে এইচআইভি সার্ভিসের ওপর প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করার কথা সভায় উল্লেখ করেন। তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রকল্পের পরিচালক ডাঃ এ টি এম এম মোর্শেদ বিষয়টি একমত পোষণ করেন।
স্ট্রেন্থেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের আওতায় স্টেক হোল্ডারদের সাথে ত্রৈ-মাসিক সমন্বয় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপালের ডা: ফৌজিয়া বেগম, মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র্রে ডা: বেগম রওগন আরা, গরিব নেওয়াজ হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ডা: এম এ হান্নান, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: শেখ আমজাদ হোসেন,  গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা: সবিতা মল্লিক ও ডা: ফাতেমাতুজ জোহরা, খুমেক হাসপাতালের  ডা: তানিয়ারহমান,  স্পেশালাইজ্ড হাসপাতালের
পরিচালক, ইউনেসেফ- এর স্বাস্থ্য কর্মকর্তাডা: নাজমুল আহ্সান, বিভিন্ন এনজিও-এর ব্যবস্থাপকগন হাসপাতালের নার্স ও ল্যব টেকনেসিয়ান। প্রথমে পূর্বের সভার রেজুলেশন পাঠ করেন স্ট্রেন্থেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোল্যা মোঃ নুরুল আসলাম।
সভায় খুমেক হাসপাতালের গাইনী ও প্রসুতি বিভাগের প্রধান ডাঃ সামছুর নাহার লাকী বলেন, এইচআইভি সনাক্তকরণ কোন গর্ভবতী তার এই সংক্রামক রোগটি গোপন রাখে তাহলে ওই মহিলাটি যে কোন জায়গায় অপারেশন করে তাহলে তার এ রোগের অন্যান্য চিকিৎসকের অজানা থাকার কারণে সেবাদানকীরা ঝুকির মধ্যে থাকবেন। এই জন্য তিনি সকল অপারেশন পূর্বে প্রত্যেককেরই এইচআইভি সনাক্তকরনের ওপর জোর দাবি জানিয়েছেন।