খুলনা বিভাগে এইচআইভি সংখ্যা বেড়েই চলেছে

প্রকাশঃ ২০১৯-১১-৩০ - ১৩:১১

খুমেক হাসপাতালে গত এক বছরে ৫৬ জন সনাক্ত : এরটি গ্রহন করছে ২৫০, যার মধ্যে খুলনায় ৮৬ জন

কামরুল হোসেন মনি : দিনকে দিন খুলনা জেলায় এইচআইভি/এইডস পজেটিভ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে এন্ট্রিভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টার থেকে{(Antiretroviral Therapy (ART) Center} ৬৪৮ জনকে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ৫১ জন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি পাওয়া যায়। এর আগের বছর এইচআইভি সনাক্ত করা হয় শিশুসহ ৩৯ জনকে।
এদিকে আগামীকাল রোববার (১লা ডিসেম্বর) বিশ্ব এইডস দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “এইডস নির্মুলে প্রয়োজন জনগনের অংশ গ্রহন” (COMMUNITES MAKE THE DIFFERENCE)| দিবসটি উপলক্ষে ওই দিন খুমেক হাসপাতাল ও খুলনা জেনারেল হাসপাতাল পৃথকভাবে র‌্যালী ও জনসচেতনতামুলক আলোচনা সভার আয়োজন করেছেন।
খুমেক হাসপাতালের স্টেনদেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের সূত্র মতে, ২০১৮ সালে খুলনা বিভাগে ৬৭ জন এইচআইভি সংক্রমিত রোগী চিহিৃত করা হয়। খুমেক হাসপাতালের (এআরটি) সেন্টার থেকে ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৬৪৮ জনকে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৫১ জন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি পাওয়া যায়। পাশাপাশি ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আওতাধীন এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফ এর কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় স্টেনদেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের আওতায় prevention of mother to child Transmission of HIV (PMTC) এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পে মূল উদ্দেশ্যে হলো এইচআইভি সংক্রমিত মা থেকে শিশুর এইচআইভি সংক্রামন প্রতিরোধ করা হয়। এ প্রকল্পের সেবার মাধ্যমে ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৫০৫ গর্ভবতী/গর্ভত্তর মাকে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ৩ জন গর্ভবতী/গর্ভত্তর মা এবং ২ জন পাটনারের (স্বামী) মধ্যে এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া যায়। সে হিসেবে খুমেক হাসপাতালে মোট ৫৬ জন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি পাওয়া যায়। যার মধ্যে পুরুষ রয়েছে ২৬ জন, মহিলা ২৪ জন এবং ৬ জন শিশু রয়েছে। এই বছরে খুমেক হাসপাতালের চিকিৎসা আওতায় এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত ১২ জন ব্যক্তি মারা গেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ছিলো ৪ জন ও মহিলা রয়েছে ৮ জন।
বর্তমানে খুমেক হাসপাতালের এআরটি সেন্টার থেকে ২৫০ জন বিনামুল্যে এআরটি গ্রহন করছেন। এর মধ্যে খুলনা জেলার বাসিন্দা রয়েছে ৮৬ জন। এছাড়া যশোর ৬২ জন, সাতক্ষীরায় ৩৪ জন, নড়াইলে ২৫ জন, বাগেরহাটে ১২ জন, ঝিনাইদহে ১০ জন, মাগুরা ৪ জন, চুয়াডাঙ্গা ৩ জন, গোপালগঞ্জে ৬ জন, ফরিদপুরে ৪ জন, পিরোজপুরের ৩ জন, বড়গুনার ১ জন (হিজড়া) রয়েছে। এছাড়াPCR এবং Viral Load test করা হয় ৫২ জন এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীদের।
ওই প্রকল্পের সূত্র মতে, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়। তার পর থেকে এইচআইভি রোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় মোট ৮৬৯ জন। যার মধ্যে রহিঙ্গা আছে ১৮৮ জন। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট এইচআইভি/এইডস এর সংখ্যা ৬ হাজার ৪৫৫ জন। এর মধ্যে মারা যায় ১ হাজার ৭২ জন।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ও প্রকল্পের পরিচালক ডা: এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, এইচআইভি/এইডস রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি ছাড়া কোনো উপায় নেই। এই বিষয়ে মানুষের নিজের উদ্যোগে সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, যদি এইচআইভি পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো গর্ভবতী মায়ের রক্তে এইচআইভি সনাক্ত হয় তবে তাকে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে গর্ভের শিশুটির এইচআইভি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
জানা গেছে, দিবসটি উপলক্ষে খুমেক হাসপাতালের কর্তৃক আলোচনা সভা ও র‌্যালী কর্মসূচির আয়োজন করেছেন। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডাঃ রাশেদা সুলতানা, খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আহাদ। এছাড়া হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান ও কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, দিবসটি উপলক্ষে কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। দিবসটি উপলক্ষে জেনারেল হাসপাতালের চত্বর থেকে সকাল ৯টায় একটি র‌্যালি বের হবে। র‌্যালিটি নগরীর শামসুর রহমান রোডস্থ স্কুল হেলথ ক্লিনিকে এসে শেষ হবে। সেখানে দিবসটি উপলক্ষে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আতিয়ার রহমান শেখ সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।