খুলনা বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে দিনে ১৩ জন

প্রকাশঃ ২০১৯-০৮-০২ - ১১:৪৭

১০ জেলায় আক্রান্ত ৪৩০ জন, মৃত একজন

সরকারি হাসপাতালে ছুটি বাতিল

খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু কীট ১১৯৩টি মজুদ, খুমেক হাসপাতালে নেই

কামরুল হোসেন মনি : সরকারি হিসেব অনুযায়ী বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় খুলনায় ১৪ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। বিভাগে আক্রান্ত হয়েছে ৭০ জন। খুলনায় গত এক মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১১৮ জন। আর বিভাগের ১০ জেলায় এ সংখ্যা ৪৩০ জন। খুলনায় দিনে গড়ে ৩ জন এবং বিভাগের দিনে গড়ে ১৩ জন আক্রান্ত হচ্ছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী পরীক্ষা তদারকি করতে সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে ৫ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোর ছুটি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সহকারী পরিচালক ডাঃ ফেরদৌসী আক্তার বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের আক্রমণে দুই ধরনের সমস্যা হয়। একটি হচ্ছে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (ডিএইচএফ) অপরটি হচ্ছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (সিএসএস)। ডিএসএস হলো ডিএইচএফের পরের ধাপ এবং এই ডিএসএস রোগীর জন্য খুবই বিপজ্জনক। সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বর যদি আরও জটিল অবস্থার দিকে যায় তখন ডেঙ্গু শক হয়। ডেঙ্গু শক হলে যে উপসর্গগুলো সাধারণত হয় তা হলো- চামড়া ভেদ করে রক্ত চলে এসে চামড়ার ওপর কালো দাগ পড়ে। কালো পায়খানা হয়। অনেক সময় প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত ঝরে। রক্তের প্লাজমা লিকেজ হয়। শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। লিভার ও হার্টের ক্রিয়া ক্ষমতা হ্রাস পায়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পরিচালক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৮২ জন ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, বতর্মানে ডেঙ্গু জ্বরে রোগীদের জন্য ২০টি বেড চালু রয়েছে। দিনকে দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আরও ২০টি বেড চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাল-পরশুর মধ্যে নতুন করে আরও ২০টি বেড চালু হয়ে যাবে। তিনি বলেন, তার হাসপাতালে ডেঙ্গু সনাক্তকরণের কিটস শেষ হয়ে গেছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে ডেঙ্গু সনাক্ত কিটস সংগ্রহের জন্য চেষ্টা চলছে।
খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্য (৫০০ টাকা) অনুযায়ী পরীক্ষা করা হচ্ছে কি না, তা তদারকি করতে ৫ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। ডেপুটি সিভিল সার্জনসহ ৫ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়। তার হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ সনাক্তের কিটস মজুদ রয়েছে। তিনি বলেন, খুলনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১১৮ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সূত্র মতে, ১ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩০ জন। বর্তমানে বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ২৪৯ জন। এ সময়ের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে খুলনায় ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (ডিএইচএফ) রোগী ছিলো ২ জন এবং নড়াইলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (সিএসএস) আক্রান্ত রোগী ২ জন পাওয়া যায়। এছাড়া ডেঙ্গু ফিভারে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২৬ জন।
সূত্র মতে, গত এক মাসে খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ১১৮ জন, বাগেরহাটে ৮ জন, সাতক্ষীরায় ২৬ জন, যশোরে ১১৫ জন, ঝিনাইদহে ৩৫ জন, মাগুরায় ১৩ জন, নড়াইলে ১১ জন, কুষ্টিয়ায় ৮৬ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৩ জন ও মেহেরপুরে ৫ জন রয়েছে। এছাড়া এর আগে আরও ৩ জন আক্রান্ত হন। সে হিসেবে সরকারি হিসাব অনুযায়ী খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩৩ জন।
খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সহকারী পরিচালক ডাঃ ফেরদৌসী আক্তার বলেন, খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু রোগ সনাক্তের কিটস বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ১ হাজার ১৯৩টি মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় ৩২০টি, বাগেরহাটে ১২০টি, সাতক্ষীরায় ১০টি, যশোরে ৪০টি, ঝিনাইদহে ১২০টি, মাগুরায় ১৪৫টি, নড়াইলে ১৪৫টি, কুষ্টিয়ায় ১২০টি, চুয়াডাঙ্গায় ৫৩টি ও মেহেরপুরে ১২০টি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গু মশা চার ধরনের স্ট্রেইন বহন করে এবং বারবার বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেইন হুল ফুটানোর মাধ্যমে মানুষের শরীরে আসতে পারে, তাই এ জ্বরের সঠিক চিকিৎসা অনেক সময় হয় না। আক্রান্ত ব্যক্তি হয়তো শরীরে এক ধরনের স্ট্রেইনের বিপরীতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করছে; কিন্তু দ্বিতীয়বার অন্য স্ট্রেইন দ্বারা আক্রান্ত হলে শরীর সেই স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায়। ডেঙ্গু মশার এই নানা রূপের কারণে এবার মানুষের বেশি সমস্যা হচ্ছে। জ্বর হলেই তা অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।