খুলনা বিভাগে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি

প্রকাশঃ ২০১৯-০৭-১৭ - ১৩:২৭

জুলাই মাসে ২০ রোগী সনাক্ত : একজনের মৃত্যু : সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু টেস্টের ব্যবস্থা নেই

 স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু তথ্য সংরক্ষণে সেল গঠন

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা বিভাগে চলতি জুলাই মাসে ২০ জন ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, যশোরের কেশবপুর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ এলাকার বাসিন্দা। এর মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১ জন, খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩ জন, গাজী মেডিকেল হাসপাতালে ৩ জন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ২ জন ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ১ জনকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে মহেশপুর থানার বাসিন্দা ডেঙ্গু আক্রান্ত এএসআই আছাদ (৩৩) নামে এক ব্যক্তি ১৫ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আক্রান্ত ব্যক্তিরা খুলনার বাইরে অবস্থানকালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন বলে চিকিৎসকদের অভিমত। বিভাগীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগের তথ্য সংরক্ষণের জন্য ডেঙ্গু সেল খোলা হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (রোগ নিয়ন্ত্রণ) দপ্তর থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে খুলনা সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু টেস্টের ব্যবস্থা নেই বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছেন। বেসরকারি হাসপাতালে টেস্টের ব্যবস্থা থাকলেও টেস্টোর ফিও বেশি। টেস্টের জন্য ১১শ থেকে দেড় হাজার টাকা প্রয়োজন হয়।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সূত্র মতে, খুলনা বিভাগের মধ্যে ২০ জন ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ১৫ জুলাই ঝিনাইদহ মহেশপুর এলাকার বাসিন্দা বদরুল ইসলামের পুত্র এএসআই আছাদ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে মারা যান। এছাড়া খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে রাসেল আহমেদ, মিসেস ইসলামা লিপি ও মোস্তফা কামালকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এরা সবাই খুলনা সদর ও দৌলতপুর থানা এলাকার বাসিন্দা। এরা ঢাকায় অবস্থানকালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন বলে চিকিৎসকদের ধারণা। গাজী মেডিকেল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এরা হচ্ছে মোঃ আব্দুস ছাত্তার (৬০), রাকিবুল ইসলাম (৪২) ও মোঃ আবু সালেহ (২৫)। এরা যশোরের কেশবপুর, নড়াইল ও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। এর মধ্যে আবু সালেহ এখনও চিকিৎসাধীন। বাকীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মোঃ কাওছার (৫৬) ও ইসমাইল হোসেন (২৫) ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। অপরদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাকীরা এখনও চিকিৎসাধীন আছেন। খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ রাশেদা সুলতানা এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনায় কোনো ডেঙ্গুর প্রকোপ নেই। যারাই আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের হিস্ট্রি থেকে জানা যায় বাইরে থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, এই সব রোগীকে সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হলে রোগী সুস্থ হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সহকারী পরিচালক ডাঃ ফেরদৌসী আক্তার মঙ্গলবার এ প্রতিবেদককে বলেন, ৩ জুলাই বিভাগীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগের তথ্য সংরক্ষণের জন্য ডেঙ্গু সেল খোলা হয়েছে। তাকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি ডেঙ্গু সেল গঠন করা হয়েছে। খুলনায় যারা ডেঙ্গু জ্বরে চিকিৎসা নিয়েছেন তারা সবাই অন্য জায়গা থেকে এই জীবাণু শরীরের মধ্যে নিয়ে এসেছেন। বিষয়টি রোগীর হিস্ট্রি থেকে জানা যায়। তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। এ ছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। রোগীকে কোনো ধরনের এন্টিবায়োটিক না খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থান খারাপ হলে দ্রুতভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, খুলনা সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু টেস্টের জন্য ব্যবস্থা নেই বলে সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতালগুলো তাকে নিশ্চিত করেছেন। খুব শিগগিরই প্রত্যেক সরকারি হাসপাতালে এই টেস্ট চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গু জ্বরের উৎস ও কারণ : চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহি রোগ। এই রোগের উৎস এডিস মশা। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রধানত বর্ষার শুরুতে কিংবা শেষের দিকে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে। এডিস ইজিপটাই ও এলবোপিকটাস নামক দুই প্রজাতির স্ত্রী মশা ডেঙ্গু জ্বরের বাহক। ডেঙ্গু ভাইরাসবাহি মশাটি যে সুস্থ মানুষকে কামড়াবে তার শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হবে এবং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবেন ।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও করণীয় : জ্বর ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি, মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ও হাড়ে প্রচ- ব্যথা, চামড়ায় লালচে ছোয়া থাকে। রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়াতে হবে এবং মশারীর ভেতরে বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বরে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো অবস্থায়ই এসপিরিন, এনএসএআইডি জাতীয় ওষুধ সেবন করা যাবে না। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর ও ডেঙ্গু শক্সিনড্রোম হলে দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে।
এডিস মশার বিশেষ বৈশিষ্ট : এডিস মশা সাধারণত বাড়ির ভেতরে ফুলের টব, এসি ও ফ্রিজের তলায় ও আশে পাশে পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, জমাকৃত পানিতে ডিম পাড়ে। এ মশা সাধারণত দিনের বেলায় সূর্যোদয়ের পর এবং সূর্যাস্তের পূর্বে কামড়ায়।
প্রতিরোধ : মশার বিস্তার রোধে ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, এসি ও ফ্রিজের তলায় ইত্যাদিতে পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। বাড়ির আঙিনা, নির্মাণাধীন ভবনে পানির চৌবাচ্চা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। দিনেও ঘুমানোর সময় মশারী ব্যবহার করতে হবে। খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (রোগ নিয়ন্ত্রণ) এই সচেতন বার্তা দিয়েছে।