খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬৯৭ : মৃত ৩ জন

প্রকাশঃ ২০১৯-০৮-০৫ - ১২:৩৬

 আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি

ডেঙ্গুসংক্রান্ত ওষুধগুলো বিক্রি তদারকিতে ওষুধ প্রশাসন

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘন্টায় (শনিবার সকাল ১১টা থেকে রোববার সকাল ১১টা পর্যন্ত) নতুন করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ১১৭ জন। এর মধ্যে খুলনায় ১৫ জন রয়েছে। যার মধ্যে দুই জন মারা যান। এদের মধ্যে একজন স্কুলছাত্র মনজুর (১৫) ও বৃদ্ধা মর্জিনা বেগম (৭০) রয়েছেন। তারা খুলনা জেলার বাসিন্দা। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯৭ জন। যার মধ্যে মারা যায় ৩ জন। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (রোগ নিয়ন্ত্রণ) থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সব ধরনের ওষুধের দাম বৃদ্ধি করে যেন বিক্রি না করে সে বিষয়ে খুলনা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর নিয়মিত সচেতনতামূলক সভা ও তদারকি অব্যাহত রেখেছেন। সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় এক কোটি ৬১ লাখ ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিটস আমদানির অনুমতি দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। কিছু কিটস ইতোমধ্যে দেশে এসে পৌঁছেছে। খুলনা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সূত্র মতে, শনিবার সকাল ১১টা থেকে রোববার সকাল ১১টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ১০ জেলায় নতুন করে আক্রান্তের মধ্যে খুলনায় ১৫ জন (২ জন মৃত), বাগেরহাটে ৫ জন, সাতক্ষীরায় ৬ জন, যশোরে ৩৭ জন, ঝিনাইদহে ১০ জন, মাগুরায় ৪ জন, নড়াইলে ৯ জন, কুষ্টিয়ায় ১৪ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৮ জন ও মেহেরপুরে ৯ জন রয়েছে।
খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সহকারী পরিচালক ডাঃ ফেরদৌসী আক্তার বলেন, খুলনায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও অপরজন গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। খুলনা বিভাগে ১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯৭ জন। এর মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়।
খুলনা সিভিল সার্জন দপ্তরের সূত্র মতে, রোববার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মর্জিনা (৭০) নামে এক বৃদ্ধা মারা যান। তিনি দিঘলিয়া এলাকার বাসিন্দা। ঢাকা থেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। অপরজন গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রূপসা উপজেলা এলাকার বাসিন্দা মনজুর নামে স্কুলছাত্র মারা যায়। সে খুলনাতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। সে কাজ দিয়া সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। সে রূপসা উপজেলার খাজাডাঙ্গা গ্রামের বাবুল শেখের পুত্র বলে ওই দপ্তরের সূত্র থেকে জানানো হয়। এ পর্যন্ত খুলনা জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬০ জন। এর মধ্যে খুমেক হাসপাতালে ১০৮ জন, খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ৭ জন, ফুলতলায় ১ জন, পাইকগাছায় ২ জন, খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬ জন, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ৪ জনকে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
খুলনা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বর শনাক্তকরণ কিটস পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছেন। যার পরিমাণ ১ কোটি ৬১ লাখ। ইতোমধ্যে অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কিটস দেশে এসে পৌঁছেছে। বাকী কিটসগুলো আগামী ৬ আগস্টের মধ্যে দেশে এসে পৌঁছাবে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল, ওরাল স্যালাইনসহ ইত্যাদি পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং সকল ওষুধের দাম বৃদ্ধি করে যেন বিক্রি না করে এ বিষয়ে খুলনা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর নিয়মিত সচেতনতামূলক সভা এবং তদারিক অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া ডেঙ্গু শনাক্তকরণের কিটস এবং রি-এজেন্ট যেন বেশি দামে বিক্রি না করে সে বিষয়ে মনিটরিং চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে গত ২৯ জুলাই কেএমসিএইচ এর সামনে অবস্থিত ওষুধ ব্যবসায়ীদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া গত ৩০ জুলাই জেলা প্রশাসন, ওষুধ প্রশাসন, সিভিল সার্জন প্রতিনিধি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও র‌্যাব এর সমন্বয়ে জেলার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে দোষীদের অর্থদ- করা হয়।
ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, উক্ত ওষুধ, স্যালাইন ও রি-এজেন্ট পর্যাপ্ত সরবরাহ করার জন্য সংশ্লিষ্ট উৎপাদানকারী-আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে মতবিনিময় করা হয়। এছাড়া ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর অতি শিগগিরই ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিটস ও রি-এজেন্ট প্রাপ্তির সহজলভ্যতার জন্য ওষুধ প্রশাসন হটলাইন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। খুলনার কোনো সরকারি বা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় ডেঙ্গু শনাক্তকরন কিটস ও রি-এজেন্ট কেউ যদি ম্যানেজ করতে না পারে সেক্ষেত্রে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থাসহ সব ধরনের সহযোগিতার করার আশ্বাস দেন।
অপরদিকে খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ মোতাবেক ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য ৫ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করেছেন। ওই হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডাঃ শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে সভাপতি করে অন্যান্য সদস্য রয়েছেন জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু ডাঃ শেখ মশিউর রহমান, ডাঃ মোহাম্মদ শওকত আলী, মেডিকেল অফিসার ডাঃ অশেক উল্লাহ ও আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ। এদেরকে সহযোগিতার জন্য এ হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত), ইনচার্জ প্যাথলজি ও রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগ এবং ওয়ার্ড মাস্টারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ বিধান চন্দ্র গোস্বামী বলেন, আমাদের এ হাসপাতালে আলাদাভাবে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য কোনো ওয়ার্ড চালু ছিলো না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ৫ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ওষুধ ও ডেঙ্গু শনাক্তকরণের কিটস হাসপাতালে সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের যাতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারি তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।