খুলনা বিভাগ এইডস’র ভয়াবহ ঝুঁকিতে : প্রতি মাসে গড়ে ৩ জন সানক্ত

প্রকাশঃ ২০১৯-০১-১৫ - ১৯:২৮

১২ জেলার মধ্যে খুলনায় এইডস পজিটিভ সংখ্যা ৬৫

কামরুল হোসেন মনি : সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে খুলনা বিভাগে এইচআইভি/এইডস’র ভয়াবহতা ঝুঁকিতে রয়েছে। যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। ঝুঁকিপুর্ণ এ পরিবেশের মধ্যে রয়েছে খুলনা, যশোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট। ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১২ জেলায় এইচআইভি/এইডস’র পজেটিভ ১৯৭ জন রয়েছে। পজেটিভদের মধ্যে পুরুষ রয়েছে ১০৬ জন। এছাড়া ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন করে আরো ১০ জনকে এইডস পজেটিভ সনাক্ত করা হয়েছে। এর আগে গত এক বছরে শিশুসহ সনাক্ত করা হয় ৩৬ জনকে।
সমুদ্র  ও স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশকারীদের রক্ত পরীক্ষা না করা, নিষিদ্ধ পল্লী ও ভাসমান যৌন কর্মীদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকা, কনডম অনীহার কারণে দিনকে দিন এ পরিস্থিতি জটিল রূপ নিচ্ছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসাপাতালে স্টেনদেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের সূত্র এ সব তথ্য জানা যায়। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আওতাধীন এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফ এর কারিগর ও আর্থিক সহযোগিতায় ঢ়ৎবাবহঃরড়হ ড়ভ সড়ঃযবৎ ঃড় পযরষফ ড়ভ ঐওঠ (চগঞঈ)  সেবাটি দেয়া হচ্ছে।
খুমেক হাসপাতালে ওই প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোল্যা মোঃ নুরুল আসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, তাদের এ সেবার আওতায় খুমেক হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এইচআইভি/এইডস সনাক্ত করা হচ্ছে। প্রতিমাসে গড়ে ৩ জন করে এইডস পজেটিভ ব্যক্তি সনাক্ত হচ্ছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৬ হাজার ২৬৯ জন গর্ভবতী মায়েদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ২ জন গর্ভবর্তী মা ও একজন শিশু পজেটিভ পাওয়া যায়। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে খুমেক হাসপাতালে এআরটি সেন্টার থেকে ১ হাজার ৬১ ব্যক্তিকে রক্ত পরীক্ষা করে ৩৯ জনে শরীরে এইচআইভি সনাক্ত করা হয়। যার মধ্যে শিশু রয়েছে ৬ জন। এ সময়ে শিশুসহ মারা যায় ৭জন।
তার দেয়া তথ্য মতে, খুলনাসহ ১২ জেলায় ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বও পর্যন্ত ১৯৪ জন এইচআইভি/এইডস পজেটিভ সংখ্যা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় ৬৫ জন, যশোরে ৫১ জন, সাতক্ষীরায় ২৬ জন, নড়াইলে ২৬ জন, বাগেরহাটে ৯ জন, গোপালগঞ্জে ৪ জন, পিরোজপুরে ৩ জন, ঝিানইদহে ৫ জন , ফরিদপুরে ৩ জন এবং বরগুনা ও চুয়াডাঙ্গায় রয়েছে ১ জন করে। এছাড়া ২০১৮ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন করে আরো ১০ জনকে এইচআইভি/এইডস সনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে যশোর ১জন, খুলনায় ২ জন, নড়াইলে ৩ জন, বাগেরহাটে ২ জন ও সাতক্ষীরায় ২ জন বাসিন্দা রয়েছে। এর মধ্যে এইডস পজেটিভ গর্ভবতী  এক মায়ের মৃত্যু হয়। এ তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে,  খুলনা বিভাগে এইডস’র ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

খুলনায় মুক্তি সেবা সংস্থা (কেএমএসএস) এর আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় উল্লেখ করা হয়,
সমুদ্র ও স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে দেশের অভ্যান্তরে প্রবেশকারীদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না করা, নিষিদ্ধ পল¬ী ও ভাসমান যৌন কর্মীদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় এবং ট্রক চালকদের অবাধে নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াত, পুরুষ সমকামী (এমএসএম) বৃদ্ধি, কনডম ব্যবহারে অনীহার  কারণে এ অঞ্চলে এইডস’র ভয়াবহতা বেড়ে যাচ্ছে। ওই সভায় সিভিল সার্জন এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভাসমান যৌন কর্মী যারা বিভিন্ন রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড,  নিষিদ্ধ পল¬ী যৌন কর্মী, মাদকসেবী, হিজরা, সমকামীদের কারণে এ অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহিৃত হয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রকল্পের পরিচালক ডাঃ এ টি এম এম মোর্শেদ বলেন, সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এইচআইভি সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার মানুষদের সনাক্তকরন সহজ হয়।
খুমেক হাসপাতালের গাইনী ও প্রসুতি বিভাগের প্রধান ডাঃ সামছুর নাহার লাকী বলেন, প্রত্যেক গর্ভবতী ও গর্ভোত্তর মাকে এইচআইভি পরীক্ষা আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এইডস পরীক্ষার ব্যাপকতা বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে কম খরচে করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে খুলনা জেলায় নারী-পুরুষ ও শিশু মিলে ২৩২ জন এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো। এ সময়ে মধ্যে মারা গেছে ৫১ জন। এছাড়া জীবিত ছিলো ১৮২ জন।  যার মধ্যে পুরুষ ৮০ জন, নারী ৬৮ জন, হিজড়া ৩ জন ও শিশু ৩০ জন ছিলো। এর মধ্যে শিশু মেয়ে ১১ জন ও শিশু পুরুষ ছিলো ১৯ জন। ২০১৭ সালে ১৬ মে পর্যন্ত নুতন করে ১৭ জন এইডস রোগী সনাক্ত করা হয়েছিলো। যার মধ্যে পুরুষ ৬, নারী ৬, শিশু ৩ ও হিজড়া ছিলো ২ জন। এ সময়ে মারা যায় ৩ জন। মারা যাওয়ার মধ্যে  ২ জন পুরুষ ও ১ জন মহিলা রয়েছে।