খুলনা মেডিকেল কলেজের আবাসিক ভবন বহিরাগতদের দখলে

প্রকাশঃ ২০২০-১০-১৪ - ১৮:১৪

ঝূঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস : বিক্রি হয় মাদক

একজনের নামে বরাদ্দ, থাকছে অন্যজন

খেলার মাঠ দখল করে সবজি বাগান

খুলনা অফিস : খুলনা মেডিকেল কলেজের আবাসিক ভবনের বাসা বরাদ্দ যে নিচ্ছেন তার বদলে থাকছেন অন্যজন। বরাদ্দ না নিয়ে বছরের পর বছর অবৈধভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসবাস করছেন। দিতে হয় না পানি ও বিদ্যুৎ বিল পর্যন্ত। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও বহিরাগতরা সপরিবারে বসবাস করছেন। খেলার মাঠ দখল করে করা হয়েছে সবজি বাগান। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসাবস করেন তারা, সেখানে বিক্রি হচ্ছে মাদক। বছরের পর বছর এ অবস্থা চললেও অদৃশ্য কারণে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে ভবনগুলো মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কলেজের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই এভাবে বসবাসের সুযোগ পাচ্ছে এরা।
খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আহাদ গতকাল সোমবার রাতে এ প্রতিবেদককে সার্বিক বিষয়ে বলেন, খুমেক হাসপাতালের সাবেক হিসবারক্ষক আলমীগরকে বাড়ি ছাড়ার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকে বকেয়া বিদুৎ বিলসহ অন্যান্য সবকিছু পরিশোধের জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, কোয়াটারের মধ্যে বহিরাগতদের যাতায়াতের বিষয়ে তথ্য আমার কাছে এসেছে। এছাড়া যার নামে ফ্লাট বরাদ্দ নেওয়া সে না থেকে অন্যজন বসাবস করছেন এরকম কিছু তথ্য পেয়েছি। যার অবৈধ বলে তিনি উল্লেখ করেন। যারা এরকম কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলিতে কেউ যাতে বসাবস করতে না পারে সে জন্য বিদ্যুৎ বিল, পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। পরে তারা আবার গোপনে সংযোগ নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েদের খেলার মাঠ দখল করে কেউ যদি সবজি বাগান করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজে কোয়াটার সন্ধ্যার পরে মাদকের আখড়ায় পরিনত হয়। বহিরাগতরা প্রবেশ করে মাদক ক্রয় করছেন ও  সেবন করছেন।  গত সপ্তাহে খুলনা মেডিকেল কলেজের কোয়াটার থেকে গাজাসহ আব্দুল্লাহ নামে এক যুবককে আটক করেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। আটককৃত ওই ছেলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ ক্লিনার সোবহানের ছেলে। সোবহানের স্ত্রী আকলিমাও করোনা হাসাপাতালে (আউটসোর্সিং) ক্লিনার পদে কর্মরত আছেন। কলেজের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসাবস করছে বহিরাগতরাও। কলেজের কর্তৃপক্ষ বিদুৎ, পানির লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেও পরবর্তীতে তা পুনরায় সংযোগ করে নেয়। কলেজের চতুর্থ শ্রেনীর স্টাফ জামাল-কামাল দুই ব্যক্তি কোয়ার্টারে মধ্যে ছেলে-মেয়েদের খেলার মাঠ দখল করে সেই জায়গাটা ঘেরাও করে সবজির বাগান গড়ে তুলেছেন। এতে কোমলমোতী ছেলে-মেয়েরা খেলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিভাবকরা এ বিষয়ে তাদেরকে কিছু বলতে গেলে স্থানীয় প্রভাব দেখান তারা। উল্টো শাঁসিয়ে বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া আছে। গত কয়েক বছর আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আলমগীর অবসরে চলে গেলেও এখনো কলেজের কোয়াটারের ফ্লাটে তিনি অবৈধভাবে বসাসস করে আসছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজের এমএলএস এরাশদ নিজের নামে কোয়ার্টার বরাদ্দ নেয়া থাকলেও সে সেখানে না থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সেলিনা আফরোজ থাকছেন। যা পুরোটাই অবৈধ। এতে সরকারের রাজস্ব হারাচ্ছেন। খুমেক হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জ আজাদের নামে কোয়ার্টার বরাদ্দ না থাকলে সেও ওখানে বসাবস করছে কিন্তু ব্লাড ব্যাংকের টেকনোলজিস্ট রোকানের নামে ফ্লাটটি বরাদ্দ নেওয়া।  এরকম অনেকের নামে  কোয়াটারের ফ্লাট বরাদ্দ নেওয়া থাকলেও থাকছেন অন্যজন।
গায়েন্দা সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনগুলোতে অধিকাংশ বসবাসকারীই বাসা বরাদ্দ না নিয়েই বহাল তবিয়তে বছরের পর বছর বসবাস করছেন। কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাদেও বহিরাগত ক্ষমতাসীন ব্যক্তিও বসবাস করছেন। ফলে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। কয়েক বছর আগে কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দুলাল মাদক ও নারী কেলেঙ্কারী ঘটনায় মামলার আসামি হওয়ায় বরখাস্ত করা হয়েছিল তাকে।  সে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হয়ে বাসা বরাদ্দ ছাড়াই চিকিৎসকদের নির্ধারিত বাসায় বসবাস করছিলেন। এছাড়া কলেজের চতুর্থ  শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে এলএএমএস, সুইপার কাওছার, টেবিল বয়, নিরাপত্তা কর্মী, সিকিউরিটি,ওয়ার্ড বয় প্রবীর, জিন্নাত, বাবুর্চি রিনা বেগম, গাড়ি চালক কামরুল, আঃ হাই, রিপন, দেলোয়ার, প্যাথলজি বিভাগসহ অনেকেই কলেজের আবাসিক ভবনের বাসা বরাদ্দ ছাড়াই বছরের পর বছর সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বসবাস করে আসছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী সরকারি বাসা বরাদ্দ নিলে তাকে মূল বেতনের  ৪৫-৫০ শতাংশ সরকারকে বাড়ি ভাড়া বাবদ পরিশোধ করতে হয়।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জানান, তার বর্তমানে মূল বেতন ১৪ হাজার ৭শ’ টাকা। তিনি সরকারি বাসা বরাদ্দ নেওয়ায় প্রতিমাসে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ টাকা অ্যাকাউন্ট শাখা থেকে কেটে রাখে। অর্থাৎ তার প্রতিমাসে ৭ হাজার ৩৫০ টাকা বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।
সূত্র মতে, কলেজের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর কলেজের আবাসিক ভবনের বাসা বরাদ্দ না নিয়েই এভাবে সরকারি কোষাগারে বাড়ি ভাড়া না দিয়ে বহাল তবিয়তে বসবাস করে আসছেন। কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের একাধিক নেতা ও সদস্য কোন রকম বাসা বরাদ্দ ছাড়াই মেডিকেল কলেজের  কোয়াটারে বসবাস করছেন। পানির বিলও পরিশোধ করা লাগে না তাদের। কলেজের পরিত্যক্ত আবাসিক ভবনে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ লাগিয়ে সেখানে বসবাস করা হচ্ছে।