গণ ধর্ষণের কল্পকাহিনী সাজিয়ে প্রতিপক্ষকে দমনের অভিযোগ গৃহবধুর বিরুদ্ধে

প্রকাশঃ ২০২০-০৭-০১ - ১৮:৫২

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : মোংলায় গণ ধর্ষণের ভূয়া কল্পকাহিনী সাজিয়ে প্রতিপক্ষকে দমন ও পুলিশকে হয়রানী এবং বোকা বানানোর অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক গৃহবধুর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বিকেলে থানায় এসে ওই গৃহবধু ধর্ষণের যে বিবরণ দেন তা প্রথমেই পুলিশের কাছে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এরপর এ বিষয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান মোংলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো: আসিফ ইকবাল, থানার অফিসার ইনচার্জ মো: ইকবাল বাহার চৌধুরীসহ কয়েকজন এসআই ও নারী কনস্টেবলও। পুলিশ সাথে নিয়ে যান স্থানীয় সংবাদকর্মীদেরকেও।
মোংলার দক্ষিণ দিগরাজের বালুর মাঠ এলাকায় মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের সাথে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের কাছে দেয়া ভাষ্য অনুযায়ী ঘটনাস্থলে গিয়ে সেই সকল আলামতের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই গৃহবধুর অভিযোগ ছিল সোমবার সন্ধ্যায় তিনি ভাড়া বাড়ীর সীমানা গেইট সংলগ্ন বেড়ার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তার স্বামী তাকে ডাকছে এক যুবকের এমন কথায় তিনি বেরিয়ে পড়েন। বেরিয়ে পড়ার পর কয়েকজন মিলে তার মুখ ও হাত, পা বেঁধে তাকে কোলে করে নিয়ে যান পাশ্ববর্তী একটি বিলের মাঝে। সেখানে ৬ জনে তাকে গণ ধর্ষণ করেন। এর রাত ১২টার পর তাকে ছেড়ে দেয়ার পর তিনি বাড়ীতে চলে আসেন। তার এই ভাষ্যমতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তার কোন আলামতই পাননি। ধর্ষণকালে টানাটানিতে গৃহবধুর গায়ের কাপড় ছিড়ে যাওয়ার কথা বললেও বাড়ীতে গিয়ে বাহিরে টানানো জামা কাপড়ে কোন ছেড়ার চিহ্নই পাওয়া যায়নি। কোন দাগ আচড়ও নেই পোশাক এবং শরীরের কোথাও। এছাড়া তাকে যে পথে এবং যেখানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে সেখানকার কাদা মাটির পথে মিলেনি কোন পায়ের চিহৃ ও আলামতও।
সুমাইয়া (২৫) নামের ওই ভাড়াটিয়া গৃহবুধর বাড়ীওয়ালী মালেকা বানু বলেন, বিকেল ৪টার পর বাড়ী থেকে বের হওয়া নিষেধ। তারপরও সোমবার সে কোন ফাঁকে বাড়ী থেকে বের হয়ে কোথায় যায় তা আমরা জানিনা। রাত ১২টার পর একলোক ফোন দিয়ে বলে আপনার ভাড়াটিয়া সুমাইয়া অন্য ছেলেরদের সাথে ধরা খেয়েছে। শোনার পর আমি সুমাইয়ার ফোনে ফোন দিলে সে ফোন ধরেনা। পরে ওর স্বামীকে জানাই। স্বামীর ফোনও সুমাইয়া ধরে না। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ীর গেইটে ধাক্কা ও ডাকতে থাকলে তাকে ঘরে ঢুকাই এবং পরদিন ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলি।
অপরদিকে স্থানীয় আলেয়া বেগম (৩৫) বলেন, করোনা শুরু হওয়ায় পর সুমাইয়াকে ইপিজেড থেকে বাদ দিয়ে দেয়। এরপর ও আর কোথাও কোন কাজ করেনা, ঘরেও থাকেনা। সারাদিন বাহিরে বাহিরে থাকে, কোথায় কি করে জানিনা। স্বামীও ঠিকমত আসেনা। সারাক্ষণ ফোনে বিভিন্নজনের সাথে কথা বলে আর অনেক রাতে ঘরে আসে। তার বিষয়টি নিয়ে আমিসহ এলাকাবাসী সন্দিহান কোথায় কি করে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় নারী-পুরুষেরা বলেন, সুমাইয়া নামের ওই মেয়েটি এলাকাটিকে শেষ করে ফেলছে। মোবাইলে ছেলেদের পটিয়ে এবং টাকার বিনিময়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করছে। সর্বশেষ সোমবার রাতে অসামাজিক কার্যকলাপে ধরা খাওয়ায় যারা তাকে অন্য ছেলেপেলেসহ ধরে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা মামলা দিয়েছে। কারণ তার অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি বাড়ীওয়ালী, এলাকাবাসী ও তার স্বামী জেনে গেছে। এখন নিজেকে ভাল প্রমাণে এবং স্বামীর কাছে ও ভাল সাজতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যারা তাকে হাতে নাতে ধরে তাদেরকে ফাঁসাচ্ছে। এদিকে সাজানো ও মিথ্যা মামলায় এলাকার কেউ যাতে অহেতুক হয়রানী না হয় পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি সেই দাবীও জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, বিষয়টি সন্দেহজনক ও কল্পকাহিনী যাই হোক না কেন আইনের সহায়তা পাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে। যেহেতু সুমাইয়া তার কথা ও সিদ্ধান্তে অনড় তাই তার মামলাটিও গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত শেষে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এ মামলায় যাতে অহেতুক কেউ হয়রানী না হয় সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য থাকবে।