গরীব দেশের ধনী প্রেসিডেন্ট

প্রকাশঃ ২০১৯-০৭-১৫ - ১১:৫৯

ঢাকা অফিস : গরীব দেশের ধনী প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর এরশাদকে নিয়ে এরকম কথাই প্রচলিত ছিল। কিন্তু প্রয়াত এরশাদের আসলে কত সম্পদ আছে- মৃত্যুর আগে কোনটা কার নামে দান বা উইল করেছেন এসবের কিছু পরিষ্কার করা হয়নি দল বা তার পরিবার থেকে। তবে মৃত্যুর আগে সন্তান এরিখ, স্ত্রী রওশন ও নিজ হাতে গড়া দল জাতীয় পার্টির জন্য সম্পত্তির বড় অংশ ভাগ ভাটোয়ারা করে দিয়ে গেছেন।

১৯৮২ থেকে ১৯৯০। সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্রপতি। গণআন্দোলনে মুখে পদত্যাগ এরপর গ্রেপ্তার ও কারাবাস। আলোচনায় আসে এরশাদের শাসনামলের দুর্নীতি, দেশে বিদেশে তার সম্পদের পরিমাণ। মামলা ও কারাবাসের পর আবার রাজনীতিতে ফিরে আসা। দীর্ঘ দুই যুগের বেশী সময়ে জানা যায়নি তার সম্পদের পরিমাণ আসলে কত।

সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে হলফনামায় বাড়ি-গাড়ি ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করেন এরশাদ। জানানো হয় বার্ষিক আয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। যার বেশীর ভাগ সরকারি বেতন ভাতা থেকে আসা। বারিধারায় প্রেসিডেন্ট পার্ক ছাড়াও গুলশান, বারিধারায় তিনটি ফ্ল্যাট, ঢাকার পুর্বাচলে দুটি জমি। তবে হাতে নগদ অর্থের পরিমান  ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

এছাড়া, ব্যবসা থেকে তার আয় দেখান দুই লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা। গুলশান ও বারিধারার দুটি ফ্ল্যাটের দাম দেখান এক কোটি ২৪ লাখ টাকার বেশি, ৭৭ লাখ টাকার একটি দোকান, গুলশানের দুটি ফ্ল্যাটের দাম ছয় কোটি ৮০ লাখ, বসুন্ধরায় একটি ফ্ল্যাট এবং ঢাকার পূর্বাচল ও রংপুরে ৫০ লাখ টাকার বেশি দামের দুটি জমি।

হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এরশাদের হাতে নগদ অর্থ ছিল ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৮ টাকা। এছড়া, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এরশাদের জমা ছিল ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬ টাকা। এর বাইরে শেয়ারে অর্থের পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি ১০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও এফডিআর ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা; ডিপিএস ৯ লাখ টাকা।

এরশাদের ৫৫ লাখ টাকা দামের ল্যান্ড ক্রুজার জিপ, ১৮ লাখ টাকা দামের নিশান কার এবং ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের আরেকটি ল্যান্ড ক্রুজার জিপ রয়েছে। হলফনামায় এরশাদ ঋণ দেখিয়েছেন ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৮৯ টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৬ টাকা।

অসুস্থ্য হয়ে সিংগাপুরে যাওয়ার আগে দল ও পরিবার সদস্যদের মধ্যে সম্পত্তি  ভাগাভাগি করে দিয়ে যান এরশাদ। কাকে  কতটুকু দান করেছেন তা নিয়েও আছে ধোঁয়াশা। স্ত্রী রওশন, ছেলে এরিখ  ভাই জিএম কাদের, ভাতিজা, পালিত ছেলেদের ছাড়াও দল জাতীয় পার্টির নামে নানান সম্পত্তি ভাগাভাগি করে যান তিনি।

রংপুর সদরে কোল্ড স্টোরেজ ছাড়াও রংপুরের সব সম্পত্তি তার ভাই জি এম কাদের ও এক ভাতিজাকে, গুলশান-২ এর একটি বাড়ি স্ত্রী রওশন এরশাদকে, বারিধারার ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের একমাত্র ছেলে এরিক এরশাদের নামে, পালিত ছেলে আরমানকে গুলশানের অন্য একটি ফ্ল্যাট দিয়েছেন।

কাকরাইলে জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয় এবং রংপুরের জাতীয় পার্টি অফিস দলকে দান করেন তিনি। গুলশান বনানী এলাকায় কয়েকটি মার্কেটে এরশাদের বেশ কিছু দোকান থাকলেও সেগুলো কাকে দিয়ে গেছেন সে বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য জানা যায়নি।

সম্পত্তি ভাগ নিয়েও বিভিন্ন সময়ে হয়েছে নানান নাটকীয়তা। গত ২৪ এপ্রিল নিজের স্বাক্ষর জাল ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কার কথা জানিয়ে বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেন এরশাদ।