গায়েবি মামলা বলে এখানে কিছু নেই : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশঃ ২০১৯-০৩-১০ - ১৩:১২

ঢাকা অফিস : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, জঙ্গি-সন্ত্রাস দমন, মাদক নির্মূলসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলেছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।

সাংবাদিক : আপনি দ্বিতীয়বারের মতো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন। এবার কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেবেন?

আসাদুজ্জামান খান : দেখুন, আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা ও শান্তি বজায় রাখা। এ জন্য যা যা করতে হবে, আমরা করব। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ দমন, জঙ্গিবাদ, সুশাসন নিয়ে আমরা সব সময়ই কাজ করি। এ ছাড়া মাদকের ক্ষেত্রে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

সাংবাদিক : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বিভিন্ন বাহিনীর তালিকা আছে, সেখানে অনেক ইয়াবা কারবারির নাম আছে, যাঁরা আত্মসমর্পণ করবেন না। আবার টেকনাফ–কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও তো প্রশ্ন আছে।

আসাদুজ্জামান খান : যারা আত্মসমর্পণ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। কোনো ছাড় নেই। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে–ই অন্যায় করে, তাকে শাস্তি পেতেই হবে। যাদের সম্পদের বিষয়ে সন্দেহ হয়, তাদের সম্পদ আমরা তদন্ত করি।

সাংবাদিক : বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন।

আসাদুজ্জামান খান : বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা হচ্ছে না, আগেও হয়নি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর কেউ হামলা চালালে তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। অপরাধীদের সবার কাছেই অবৈধ অস্ত্র থাকে। বন্দুকযুদ্ধকে আজকাল বিচারবহির্ভূত হত্যা বলে মন্তব্য করে অনেকে।

সাংবাদিক : নির্বাচনের সময় পুলিশের করা গায়েবি মামলায় আসামি হয়ে মানুষ এখনো হাইকোর্টে জামিনের জন্য আসছে। এ নিয়ে কী বলবেন?

আসাদুজ্জামান খান : গায়েবি মামলা বলে কিছু নেই। যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই অপরাধী। প্রতিটি মামলা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়েছে। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে সে নিরপরাধ, কিন্তু তাঁর নামে মামলা হয়েছে, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই সেই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেব।

সাংবাদিক : সড়কে প্রাণহানি কমানোর ব্যাপারে সরকার সফল হচ্ছে না কেন?

আসাদুজ্জামান খান : আজকাল কেউই ট্রাফিক আইন মানতে চায় না। অন্যদিকে রাস্তায় যে পরিমাণ গাড়ি আছে, তার বেশির ভাগই ফিটনেসবিহীন। এসব গাড়ির চালকেরা অদক্ষ, অনেকের লাইসেন্সও নেই। আমরা নির্দেশ দিয়েছি, যারা ট্রাফিক আইন মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে যেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের আমরা উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, যাতে তারা সড়কে প্রাণহানি কমাতে কাজ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে মানুষকেও সচেতন হতে হবে। অহেতুক বেপরোয়া গতি, দায়িত্বহীন ও কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণে দুজন শিক্ষার্থীকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। ওই ঘটনায় অনেকের চোখ খুলেছিল। আমরা অনেক সচেতন হয়েছিলাম, সেটাই মনে করিয়ে দিতে চাইছি।

সাংবাদিক : তথাকথিত জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট, আইএসে যোগ দেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা বেগমের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত কী?

আসাদুজ্জামান খান : বাংলাদেশে কোনো জঙ্গির স্থান নেই। শামীমাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

সাংবাদিক : জঙ্গিবাদ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কী?

আসাদুজ্জামান খান : জঙ্গিরা এখনো আছে। তবে আমরা সচেতন। গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিদের বেশির ভাগই ধরা পড়েছে। যারা এখন রয়েছে, তাদের মধ্যে মতাদর্শের সমর্থক বা কর্মী কেউ থাকতে পারে, কিন্তু নেতৃত্ব দেওয়ার মতো আপাতত কেউ নেই। জঙ্গি প্রতিরোধে জনমত তৈরি করতে আমরা অনেক কাজ করেছি। জঙ্গিবিরোধী কমিটিও পুরোদমে কাজ করছে।