চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভায় চাকুরির আড়ালে জঙ্গী তৎপরতার অর্থ লেনদেন

প্রকাশঃ ২০২০-০৯-৩০ - ২১:২৪

রিটন দে লিটন,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিশ্বজিত দাশ ও হিসাব রক্ষক এএইচএম আলমগীরের বিরুদ্ধে নামে বেনামে ব্যাংক একাউন্টে ও নগদে কোটি কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে জঙ্গী তৎপরতা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

সরকারী চাকরির পদবী হিসেবে  একজন সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ৭ম গ্রেডভুক্ত এবং অন্যজন হিসাব রক্ষক পদবীর ১২তম গ্রেডভুক্ত।  তবে তাদের ব্যক্তিগত ও যৌথ নামে ক্ষেত্র বিশেষে বে-নামের ব্যাংক একাউন্টে চলছে কোটি কোটি টাকার লেনদেন। শুধু তাই নয় সরকারি চাকরি বিধি পরিপন্থীর বাইরে গিয়ে সাতকানিয়া পৌরসভার বাইরে চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী জেলা সমূহে তাদের কোটি কোটি টাকার ৮টি ছোট-বড় প্রকল্পের কাজ চলছে।

এদিকে পৌরসভার এ দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের চাঞ্চল্যকর খবরে সচেতনমহল শুধু হতবাক ও বিস্মিত হয়েছেন। এ লেনদেনের খবর উপজেলায় ছড়িয়ে পড়লে সাতকানিয়ার সর্বমহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি এখন পুরো সাতকানিয়ায় টক অব দি টাউনে পরিনত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছেন-পৌর প্রশাসনের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারনে এসব দুর্নীতি হয়েছে।

জানা যায়, নকশা কারক হিসেবে লামা পৌরসভায় চাকুরি জীবন শুরু করেন সাতকানিয়া পৌরসভার বর্তমান সহকারি প্রকৌশলী বিশ্বজিত দাশ। অন্যদিকে সাতকানিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত হিসাব রক্ষক পদে চাকুরি করছেন এএইচএম আলমগীর।  চাকুরিস্থল দীর্ঘদিন এক স্থানে হওয়ার সুবাদে উভয়েই গড়ে তুলেছেন একটি সিন্ডিকেট। উক্ত সিন্ডিকেটের জঙ্গী তৎপরতার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে সাতকানিয়া পৌরসভা ভিত্তিক ঠিকাদারী ও যাবতীয় ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে শুরু করেছিলেন যৌথ ব্যবসার ধারাপাত। বিশ্বজিত দাশ ও এএইচএম আলমগীরের এনসিসি ব্যাংক কেরানীহাট শাখায় যৌথ একাউন্ট এ (নং-০০৫৮০৩২০০০১২৯০) ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারী থেকে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ মাসে লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৪ হাজার ৮১৭ টাকা। এনসিসি ব্যাংকের একই শাখায় আলমগীরের ব্যক্তিগত একাউন্ট এ (নং-০০৫৮০৩১০০০৯৫২৪) ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারী থেকে চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জমা হয় ৪ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার ৪৮৫ টাকা। অন্যদিকে এ সময়ে উত্তরা ব্যাংক লোহাগাড়ার শাখায় বিশ্বজিত দাশের মা শোভা রানী দাশের নামে ‘শোভা এন্টারপ্রাইজ’ নামের একাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এছাড়া কেরানীহাট ও লোহাগাড়ায় তাদের ব্যক্তিগত ও ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেও রয়েছে একাধিক একাউন্ট। সেখানেও অস্বাভাবিক লেনদেনের ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে, বিশ্বজিত ও আলমগীরের পরিচালনায় চলমান ৮ প্রকল্পগুলো হলো-সাতকানিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (নতুন ভবন), মডেল মসজিদ বান্দরবান বালাঘাটা, সাতকানিয়া পৌরসভা ২নং ওয়ার্ডে আরসিসি সড়ক, কক্সবাজার পৌরসভার আরসিসি ড্রেন, সাতকানিয়া পৌরসভার কাশিমবাড়ি পুকুর রিটেইনিং ওয়াল, সাতকানিয়া পৌরসভার কাশিমবাড়ি বদ্দাপাড়া আরসিসি সড়ক ৫নং ওয়ার্ড, সাতকানিয়া পৌরসভার মধ্যম ছিটুয়া পাড়া আমিন এসবি বাড়ি আরসিসি সড়ক ৫নং ওয়ার্ড এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র অধীনে লোহাগাড়া ব্রীকফিল্ড সড়ক।

অস্বাভাবিক অর্থ লেনদেনের বিষয়ে সাতকানিয়া পৌরসভা চাকুরিরত এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে জানান অভিযুক্তদের সাথ জামাতের একাধিক নেতার সাথে সখ্যতা রয়েছে। তিনি আরো জানান বিভিন্ন সময় লোকজন এসে তাদেরকে প্যাকেট দিয়ে যায় এবং তাদের কাছ থেকে প্যাকেট নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে সহকারি প্রকৌশলী বিশ্বজিত দাশের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে হিসাব রক্ষক এএইচএম আলমগীরের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করার পরও তিনি ফোন রিসিভ করে নাই।

এ বিষয়ে সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের প্রতিবেদককে জানান আমি ঘটনাটি জানার পর তাদের শোকজ করেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিকট লিখিত আবেদন করেছি।

এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এড. আকতার কবির চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, জবাবদিহিতার সংস্কৃতি চালু না থাকায় সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারীরা বেপরোয়া হয়ে গেছে। যারা দুর্নীতিতে জড়িত তাদের উর্ধ্বতনদের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে এসব দুর্নীতি হচ্ছে। অভিযুক্তদের সাথে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা না হলে সরকারি কর্মকর্তারা রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করবে।