জননেত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রাম ও উন্নয়ন

প্রকাশঃ ২০২০-০৯-২৭ - ১৮:৩৪

মোঃ আবদুর রহমান : নাম তাঁর শেখ হাসিনা। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এর জ্যেষ্ঠ কন্যা। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে শেখ হাসিনার জন্ম। আজ তাঁর ৭৪ তম জন্মবার্ষিকী। শুভ জন্মদিনে তাঁকে প্রাণঢালা অভিনন্দন, শ্রদ্ধা ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

বাইগার নদীর তীরে গ্রামবাংলার স্নিদ্ধ শ্যামল প্রকৃতির স্নেহধন্যে সাধারণ মানুষের মাঝেই কাটে শেখ হাসিনার শৈশব। ১৯৫৪ সালে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। প্রথমে পুরান ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেন, তারপর মিন্টো রোড এবং সবশেষে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের ঐতিহাসিক বাড়িতে বসবাস করেছেন পরিবারের সঙ্গে। টুঙ্গিপাড়ায় শুরু করলেও ঢাকায় টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়, আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়, বকশীবাজারে তৎকালীন ইন্টারমিডিয়েট গভর্ণমেন্ট গার্লস কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নেন।

শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনের সক্রিয় নেত্রী। একাত্তরে গৃহবন্দী, পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্টের ভয়াল রাত্রিতে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্দু শেখ মুজিবুর রহমান শাহাদাতবরণ করলেও পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরবর্তী ছয় বছর লন্ডন ও দিল্লীতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা ফিরে এসেছিলেন বাংলার মাটিতে। গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও বার বার গৃহবন্দী, ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ, ২০০১ সালের পর ফের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম, কারামুক্তি শেষে ‘দিন বদলের সনদ’ দিয়ে দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন পান ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে। ২০০৯ সালের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোট সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এসে দক্ষতার সাথে সরকার পরিচালনা করেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোট সরকার আবারও ক্ষমতায় আসে এবং ২০১৯ সালে তিনি টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।

বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মিষ্টি পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, চাল উৎপাদনে চতুর্থ, আম উৎপাদনে নবম, আলু উৎপাদনে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। বার্ষিক মাথাপিছু গড় আয় ৪০৬৪ মর্কিন ডলার। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২১ হাজার মেগাওয়াট। মানুষের গড় আয়ু হয়েছে ৭২.৮ বছর। শতভাগ শিশু টিকা পাচ্ছে, কমেছে শিশু মৃত্যুর হার। সাড়ে ১৬ হাজার কমিউিনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র চিকিৎসা সেবাকে নিয়ে গেছে মানুষের দোরগোড়ায়। শতভাগ শিশু স্কুলে যায়। বছরের প্রথমদিনে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার, ঘরেফেরা কার্যক্রম, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, দুঃস্থ ভাতার মাধ্যমে গড়ে ওঠা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনিতে উপকৃত হচ্ছে ৭৫ লাখ প্রান্তিক মানুষ। পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন, শিল্প বিপ্লব ঘটাবার লক্ষ্যে প্রায় ১০০ টি শিল্প নগরী তৈরি , মেট্টোরেল নির্মাণ, কর্নফুলী ট্যানেল, রূপপুর আণবিক প্রকল্প, সেতু, উড়াল সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ৪/৬/৮ লেনের সড়ক ও নতুন নতুন সড়ক ও রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে সারাদেশে গড়ে উঠেছে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা।

দেশ তথ্য প্রযুক্তি সম্পন্ন হয়েছে তারই নেতৃত্বে। আজকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ আর সপ্ন নয় বাস্তবতা , ঘরে বসে পৃথিবীর সব খবর পাচ্ছে এদেশের মানুষ, প্রয়োজনীয় কাজও করেছে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে । এই নতুন তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনা । তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়ন অগ্রগতির মহাসোপানে ।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত শান্তিমডেলের প্রস্তাবনাটি জাতিসংঘে সমাদৃত ও গৃহীত হয়েছে। ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। আর এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশরত্ন শেখ হাসিনা আজ ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় ভূষিত। টিকাদান কর্মসূচীতে বাংলাদেশের সাফল্য আজ আন্তর্জাতিকভাবে বিপুল প্রশংসিত হয় এবং প্রধানমন্ত্রী ‘ভ্যাকসিন হিরো’ খেতাব লাভ করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা, তথ্যপ্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়নসহ দারিদ্র্য বিমোচনের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এবং দেশের জন্য বয়ে এনেছেন বিরল সম্মান। বিশ্ব পরিসরে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতাদের একজন হিসেবে অভিহিত ও প্রায় চল্লিশটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত জননেত্রী সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দক্ষ ও বিচক্ষণ রাষ্ট্র পরিচালনা সাফল্যের স্বীকৃতি একথা সর্বজনে স্বীকৃত।

বর্তমানে মহামারি করোনার করাল গ্রাসে পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই করোনা মহামারির মধ্যেও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন । স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনি প্রতিটি বিষয়, প্রতিটি মুহুর্তে মনিটরিং করছেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজের জীবনের চেয়ে দেশ ও দেশের জনগণকে বড় মনে করেন । তাই ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন । করোনা মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, জনগণকে সচেতন করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে অর্থ ও খাদ্যসহায়তার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যবসা-বণিজ্য, অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় সরকার। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে ও ভিডিও কনফারেন্সে বারবার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর নির্দেশ দিয়েছেন। দেশের এই মহামারিতে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ গুলো রীতিমতো বিশ্ব নজির হিসেবে ইতোমধ্যেই সমাদৃত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং জীবিকা নিশ্চিত করতে এখন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার ( জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশ ) ২১ টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। বাংলাদেশের মহাক্রান্তিলগ্নে এমন একজন দক্ষ, সৎ , সাহসী, পরিশ্রমী, জনগণের প্রতি একান্তভাবে নিবেদিত দরদি ও বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক পেয়ে সত্যি সত্যিই জাতি ধন্য।

রাজনীতির বাইরে লেখক হিসেবেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। এ পর্যন্ত তার লেখা ও সম্পাদনায় ৩০টির অধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি ব্যাপক প্রতিক্রিয়াশীল একজন কান্ডারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধান হিসেবে দেশের খেলাধুলার প্রসার ও উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন তিনি।

দেশ ও জনগণের জন্য তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে। তিনি অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলার মানুষের জন্য শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে যাবেন। পরিশেষে, জননেত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিনে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

 

লেখক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি অফিস রূপসা, খুলনা।