জলাতাঙ্কে ভ্যাকসিন সংকটে খুলনা

প্রকাশঃ ২০১৮-০৮-০৯ - ১৩:২১

৭ মাসে বণ্যপ্রাণী আক্রমনে শিকার ৩ হাজার
কেসিসি স্বাস্থ্য বিভাগে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিনে নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা

কামরুল হোসেন মনি : প্রায় প্রতিদিন কুকুর-বিড়াল ও বানরসহ বিভিন্ন বণ্যপ্রানীর আক্রমণের শিকার হচ্ছে খুলনাঞ্চলের মানুষ। গত ৭ মাসে বিভিন্ন বণ্যপ্রানী আক্রমনে শিকার হয়ে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় ৩১৯৯ জন ব্যক্তিকে। বণ্যপ্রাণী আক্রমনের মধ্যে কুকুর ও বিড়ালের সংখ্যা বেশি। আক্রান্তদের ওই রোগ প্রতিষেধক ওষুধ সরবরাহ চাহিদার তুলনায় প্রতুল।
এদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনে (কেসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগে কুকুর কামড়ে আক্রান্তদের ব্যক্তিদের জলাতঙ্কের ভ্যাকসিনে প্রতিষোধক টিকা নিতে গেলে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্চে। যার প্রতিশোধক ৪টি ডোজ পরিপুর্ন করতে ৮শ’ টাকায় নেয়া হচ্ছে। কিন্তু বাইরে থেকে ভ্যাকসিন কিনে এই ডোজ পরিপুর্ণ করতে সিরিঞ্জ বাবদসহ ৫শ’ টাকা প্রয়োজন হয়।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালে সূত্রে মতে, গত ৭ মাসে খুলনা মহানগরীরসহ রূফসা, তেরখাদা, বটিয়াঘাটাসহ বিভিন্ন উপজেলার ৩ হাজার ১৯৯ জন কুকুর-বিড়ালসহ বিভিন্ন বণ্যাপ্রাণী কামড়ে শিকার হয়েছে। বণ্যাপ্রাণীদের মধ্যে কুকুর ও বিড়ালের আক্রামনের সংখ্যা বেশি। এছাড়া চলতি আগষ্ট মাসে ৮ তারিখে পর্যন্ত ১২৫ জন শিকার হয়েছে। এর মধ্যে গত ৭ তারিখে বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রান্ত সংখ্যা ৩২ জন। কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, খেকশিয়াল, বানর, ঘোড়া, বন বিড়াল কামড়ালে এআরবি টিকা নিয়ম অনুযায়ী ৪ ডোজে দিতে হয়। শুধু মাত্র বিনামুল্য সদর হাসপাতালে এই টিকা আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেয়া হয়। হাসপাতালে সরবরাহ না থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ৪ জনে গ্রুপ হয়ে সিরিঞ্জ সহ ভ্যাকসিনের দাম পড়ে ৫শ’ টাকা মতো। যা প্রতি ডোজে একজনের পড়ে ১২৫ টাকা। ফলে এভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জলাতাঙ্কের টিকার ডোজ পরিপুর্ণ করতে ৫শ’ টাকায় হয়ে যাচ্ছে।
সূত্র মতে, জেনারেল হাসপাতালে এআরবি রুমে জলাতাঙ্কে ভ্যাকসিন গত ৪ বারে মোট ১ হাজার ৭২০ ভায়েল ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়। একটি ভায়েল ৪ জন আক্রান্ত ব্যক্তিকে টিকা দেয়া হয়। এভাবে ২৮ দিনে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ৪ টি ডোজ বিনামুল্য এই টিকার সেবা দিয়ে থাকেন। প্রতি ডোজ টিকাটি দুই হাতে পুশ করেন। গত ২৩ জুলাই এই ভ্যাকসিন শেষ হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা বাইরে থেকে কিনে এনে হাসপাতালের এ সেবা গ্রহণ করছেন।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, বেওয়ারিস কুকুরে কামড়ে শিকার হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিনামুল্য এ হাসপাতাল থেকে জলাতাঙ্ক টিকা গ্রহন করছেন। দিনকে দিন এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন, সরকার যদি বিনামুল্য এই টিকা কার্যক্রম চালু না করতো তাহলে অনেক গরীব অসহায় রোগীরা এই ভ্যাকসিন কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতেন। চাহিদার তুলনায় ভ্যাকসিন সরবরাহ না পাওয়ায় প্রায়ই এই ভ্যাকসিনের সংকট থেকেই যাচ্ছে। এবার দেড় হাজার (ভ্যাকসিন) ভায়েল চাহিদা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এটা আনার জন্য ঢাকায় লোক পাঠানো হয়েছে। আজ এই ভ্যাকসিন হাসপাতালে পৌছাতে পারে বলে তিনি আশাবাদি।
অন্যদিকে কেসিসিতে স্বাস্থ্য বিভাগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ওই ডোজ পরিপুর্ন করতে ৮শ’ টাকা নিচ্ছেন। কেসিসি’র স্বাস্থ্য বিভাগে উচ্চমান সহকারী মোঃ শাহীনুর জামান বুধবার (৮ আগস্ট) এ প্রতিবেদককে বলেন, তাদের এখান থেকে প্রতিডোজ ভ্যাকসিন নেয়া হচ্ছে ২শ’ টাকা করে। সে অনুযায়ী জলাতাঙ্ক ভ্যাকসিনের ডোজ একজন পুর্ণ করতে ৮শ’ টাকা প্রয়োজন হয়। আমরা টাকার রশিদ প্রদান করছি। বাইরে থেকে ভ্যাকসিন কিনে আনলে এতো টাকা প্রয়োজন হয় না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে কেসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ একে এম আব্দুল্লাহ বলেন, প্রতি ডোজে ২শ’ টাকা নেয়া হচ্ছে স্বীকার করে বলেন, এ সব টাকা কেসিসি’র ফান্ডে জমা দেয়া হচ্ছে। কত জন ব্যক্তিকে এ সেবা প্রদান করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কেসিসির সচিবের অনুমতি সাপেক্ষে দিতে পারবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে সচিবের সাথে যোগাযোগ চেষ্টা করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) পলাশ কান্তি বালা বিষয়টি তথ্য জানান জন্য তার সহযোগিতা চাইলে তিনি বলেন আমি স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য দেয়া জন্য বলেদিচ্ছেন। পরবর্তীতে তার সাথে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি তথ্য ফরমে আবেদন করলে এ বিষয়ে আপনাকে তথ্য সরবরাহ করবেন।
বুধবার (৮ আগস্ট) সদর হাসপাতালে এআরবি রুমে আসেন কুকুরে কামড়ে শিকার সুচিত্রা সেন (৪৫) । তেরখাদা উপজেলা এলাকার বাসিন্দা বেনাই সাহার স্ত্রী। ওই দিন সকালে তিনি কুকুরের কামড়ে শিকার হন। তার স্বামী বেনাই সাহা বলেন, তেরখাদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামুল্য এই টিকা সেবা কার্যক্রম নেই বলে তিনি এখানে আসেন। এখানে বর্তমানে ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামুল্য এই টিকা চালুর দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কেন্দ্রীয় থেকে ভ্যাকসিন সংকট রয়েছে। তিনি বলেন, যেভাবে বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমনের সংখ্যা বেড়েছে সেই তুলনায় চাহিাদও মোতাবেক ভ্যাকসিন সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভ্যাকসিন সরবারহ বিষয় তিনি বলেন, এটা শুধুমাত্র প্রতিটি জেলার জন্য বরাদ্দ হয়ে থাকে। এটা কেন্দ্রীয় ভাবে প্লানিং করা। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। ইতিমধ্যে দেড় হাজার ভ্যাকসিনের চাহিদাপত্র দিয়ে ঢাকায় আনতে লোক পাঠানো হয়েছে। কতটা ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বলা যাচ্ছে না। আশাকরা যাচ্ছে আজ ভ্যাকসিন এসে হাসপাতালে পৌছাবে।
উল্লেখ্য, গত ৬ আগষ্ট রাতে নগরীতে পাগলা কুকুরের কামড়ে ২০ জন ব্যক্তি শিকার হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিরা ১৯ থেকে ৬৬ বয়সের মধ্যে। ওই দিন রাতে খুলনা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরের দিন সকালে হাসপাতালে এআরবি রুমে জলাতাঙ্ক টিকা নেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। আক্রান্ত ব্যক্তিরা জানান, এর বাইরে আরও ১০-১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তারাও বিভিন্ন জায়গায় প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন