জাপা নেতা কাশেম হত্যা: আগামী মঙ্গলবার থেকে সাক্ষ্য গ্রহন শুরু

প্রকাশঃ ২০২১-০১-২০ - ২১:২৫

বিশেষ প্রতিনিধিঃ আগামী মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) থেকে খুলনা মহানগরী জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল কাশেম ও তার ড্রাইভার মিখাইল হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। উচ্চ আদালতের দুই বছর আগের ভ্যাকেট আদেশ খুলনায় পৌঁছে যাবার মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এই জোড়া হত‍্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শুরু করতে আর বাধা নেই। ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে ২৬ জানুয়ারি থেকে সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হতে যাচ্ছে।

দ্রুত অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট আরিফ মাহমুদ লিটন বলেছেন, আগামী মঙ্গলবার ২৬ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর শেখ আবুল কাসেম হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত বাকী সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। প্রায় দুই বছর আগে বাদীপক্ষের আবেদন শুনানির পর উচ্চ আদালত ভ্যাকেট আদেশ দিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম শেষ করার আদেশ দেন। এ আদেশ খুলনায় পৌঁছানোর পর সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে প্রায় দুই যুগ পর শুরু হলো মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি শেখ আবুল কাশেম ও তার ড্রাইভার মিখাইল হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম।

শেখ আবুল কাশেম, খুলনার সম্ভ্রান্ত হাজি বাড়ির সন্তান। ব্যক্তিগত ব্যবহার, সামাজিকতা ও সুদর্শন চেহারার জন্য দল মত নির্বিশেষে তিনি শহর খুলনা এমনকি খুলনার বাইরেও জনপ্রিয় ছিলেন। নিহত হওয়ার সময়ে তিনি খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এর আগে খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল সকালে খুলনা সদর থানার পাশেই স্যার ইকবাল রোডে বেসিক ব্যাংকের সামনে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গুলিতে শেখ আবুল কাশেম ও তার ড্রাইভার মিখাইল নিহত হন। বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন ডিজিএম শেখ মঞ্জুর মোর্শেদের ওখানে ব্যবসায়িক আলাপ শেষ করে ব্যাংকের সামনে থাকা নিজ গাড়িতে উঠতেই মৃত্যুর মুখোমুখি হন তিনি। এই সময়ে দুই তিনজন সন্ত্রাসী এসে প্রথমে তাকে সালাম দেন, তিনি সালামের উত্তর দিতেই সন্ত্রাসীরা ব্রাশ ফায়ার করলে মুহূর্তেই শেখ আবুল কাশেম ও দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকা অপেক্ষমান ড্রাইভার মিখাইল গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে লুটিয়ে পড়েন। সন্ত্রাসীরা মৃত্যু নিশ্চিত হতেই বীরদর্পে পায়ে হেটে এলাকা ছেড়ে চলে যান।

শেখ আবুল কাশেমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই সারা শহর স্তম্ভিত হয়ে পড়ে, নিজ থেকেই কোনও ঘোষণা ছাড়াই অফিস, আদালত, দোকান- পাট, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, রিকশা, বেবি ট্যাক্সি, ব্যক্তিগত মটর সাইকেল, প্রাইভেট কারসহ আন্ত জেলা সকল পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি শহর থেকে প্রভাবশালী অনেক রাজনৈতিক নেতা, বিত্তবান ব্যবসায়ী, ছাত্রনেতা, নিজ থেকেই খুলনা শহর ছেড়ে পালিয়ে যান।

এই ঘটনায় খুলনা থানায় মামলা করা হলেও পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পড়ে সিআইডির ওপর। তারা দীর্ঘ তদন্ত করে ১৯৯৬ সালের ৫ মে ১০ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন-প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সৈয়দ মনিরুল ইসলাম (মৃত), হোটেল ব্যবসায়ী তরিকুল হুদা টপি, তৎকালীন জাপা নেতা ও পরিবহণ ব্যবসায়ী আব্দুল গফ্ফার বিশ্বাস, জাপা নেতা ইকতিয়ার উদ্দিন বাবলু (নিহত), খুলনা চেম্বারের বর্তমান সভাপতি কাজি আমিনুল হক, ওসিকুর রহমান (ওয়াসিক), গেলো মেয়র নির্বাচনে জাপা থেকে মেয়র প্রার্থী মোশফেকুর রহমান ওরফে মুশফেক, মফিজুর রহমান, মিল্টন ও তারেক।

চাঞ্চল্যকর মামলাটির বাদী, প্রধান সাক্ষী, তদন্ত কর্মকর্তা ও দুই আসামির ইতোমধ্যে মৃত্যু হয়েছে। উচ্চ আদালতে কয়েক দফা স্থগিত আদেশের পর মামলার বিচার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হওয়ায় বিষয়টিকে ঘিরে প্রচন্ড আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে খুলনাবাসীর মধ্যে।

এ বিষয়ে নিহতের বড় ভাই সাবেক এমপি শেখ আবুল হোসেন গন- মাধ্যমকে বলেছেন, বিচারের ভার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। মামলার বাদী ১৪ বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন। প্রধান সাক্ষী আসাদুজ্জামান লিটু ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা এসপি খোন্দকার ইকবাল নিহত হয়েছেন।

নিহত শেখ আবুল কাশেমের স্ত্রী বেগম ঝর্না কাশেমের বরাত দিয়ে পরিবারের একটি সুত্র জানায়, এই মামলায় খুলনা চেম্বারের বর্তমান সভাপতি কাজি আমিনুল হকের নাম রাজনৈতিক বিবেচনায় ইতমধ্যেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। অথচ চার থেকে পাঁচ জন সাক্ষীর দেয়া ১৬৪ ধারার জবানীতে কাজি আমিনের নাম এসেছে। কাজি আমিনের নাম না থাকার বিষয়টি তারা বিজ্ঞ আদালতের নজরে আনবেন। আসামীর তালিকায় কাজি আমিনের নাম যাতে আসে সেই ব্যাপারে আদালতের কাছে জোর দাবি জানাবেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, কাজি আমিনের নাম ছাড়া এই মামলার বিচার একটি তামাশায় পরিণত হবে। কাজি আমিনের নাম তো আমরা দেইনি, সাক্ষীদের জবানীতেই নাম এসেছে। বিষয়টি খুলনাবাসীও অবগত।