ঝলকাঠি-১ আসনে কে পাচ্ছেন মনোনয়ন !

প্রকাশঃ ২০১৮-০৩-১৯ - ১৬:৩৪

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী হাওয়া গড়ম হয়ে উঠেছে। এবার সরকারী দল আওয়ামীলীগের ২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদি। অপর ১ জন কিছু না বলে সম্পূর্ন নিরব ভূমিকা পালন করছে। তাই কে পাচ্ছেন শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎকন্ঠার শেষ নেই। বিএনপির ২ মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরকেই শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দিতে পারে বলে অনেকের ধারনা। অপর জন রফিকুল ইসলাম জামাল বলছেন, বিগত তত্তাবধায়ক সরকারের সময় দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তাই সার্বিক বিবেচনায় এবারো আমি মনোনয়ন পাবার আশা করি। এনিয়ে বিএনপির কে পাচ্ছেন মনোনয়ন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে। তবে ক্ষমতাশীন দলের বর্তমান সংসদ সদস্য ঝালকাঠি ১ আসনে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বজলুল হক হারুন এমপি তার এলকায় এক নারী নেত্রীর সাথে তাল মিলিয়ে নানা বিতর্ক জন্ম দেওয়া সহ সেই রইন্ট্রি হোটেলের ঘটনা নিয়ে প্রধান মন্ত্রীর ব্লাকলিষ্টে পরেন বলে দলীয়সুত্রে জানাগেছে। সম্প্রতি তার রিজ এলাকায় সভা-সমাবেশে তেমন কোন লোকজন না আসায় তিনি হতাশায় রয়েছেন বলে একটি নির্বরযোগ্য সুত্র জানায়। ম্যাকাপম্যান খ্যাত এ নেতা এলকায় তেমন কোন উন্নয়ন করতে পারেননি বলে সাধারণ মানুষের দাবী করে তারা নুতন কাউকে নিয়ে মাঠে নামবে বলে আবাস দিয়েছেন। অপরদিকে সাধারন মানুষের অধিকংশ এবং দলীয় অনেকেই ঝালকাঠি ১ আসনে তাদের পছন্দের তালিকায় জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড.খান সাইফুল্লাহ পনির কে পেতে চান। এ নেতা মনোয়ন পেলে আ,লীগে রাজনিতি যেমনি চাঙ্গা হবে তেমনি দলীয় নেতাদেরও হতাশা থাকবে না বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মিরা

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিত ছিল এক সময় আসনটি। কারন সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম রাজাপুরের সন্তান। তার বিপুল জনসর্মন ও জনপ্রীয়তার কারনে এ আসন বিএনপির দূর্গ হিসেবে গড়ে উঠে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংসদ নির্বাচনে শাহজাহান ওমর আইনী জটিলতার কারনে নির্বাচন করতে পারেননি। তাই এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় রফিকুল ইসলাম জামালকে। যিনি ঐ সময় এ আসেনে বিএনপির হাল ধরে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে তাদের মনোবল চাঙ্গা রেখেছেন বলে দাবি করেন। এমনকি ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী বর্তমান এমপি বজলুল হক হারুনের সাথে শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে যান জামাল। তাই এবারো তিনি এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাওয়ার কথা জানান।

তবে বিগত দিনে জাতীয় পার্টির সাবেক যোগযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এ আসন থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে শাহজাহান ওমরের এই দূর্গে আঘাত হানতে সক্ষম হন। কারন তিনি ঐ সময় আসনটির যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন। কিন্তু আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পার্শবর্তী পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ার সন্তান হওয়ায় জনসম্পৃক্ততা না থাকায় এ আসনে তার জনপ্রীয়তা বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। যদিও এখনো বেশির ভাগ মানুষ মনে করে এ আসনে বিএনপির সমর্থন আগের মতই রয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুণ পরপর দুবার এমপি হয়ে আওয়ামীলীগের হারানো আসন পূনরুদ্ধার করেন। এবার আসনটিতে বিএইচ হারুনের সাথে প্রথমেই মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে যার নাম শোনা যাচ্ছে তিনি হচ্ছেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুজ্জান মনির। যিনি দীর্ঘ দিন থেকে মনোনয়ন পেতে জনসংযোগ ও নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন।
১৯৭৩ থেকে এ আসনে আওয়ামীলীগ ৩ বার, বিএনপি ৩ বার ও জাতীয় পার্টি ৩ বার জয়ী হয়। এরমধ্যে ১৯৭৩ সনে ঝালকাঠি ও রাজাপুরকে নিয়ে এ আসনটি গঠন হওয়ায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী আমির হোসেন আমু এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সনে রাজাপুর-কাঠালিয়া নিয়ে ঝালকাঠি-১ আসনের নির্বাচন হয়। তখন এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান ওমর এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সনে এ আসনে প্রথম জাতীয় পার্টি আঘাত হানে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাহাঙ্গির কবির তখন এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সনেও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে পূণরায় জাহাঙ্গির কবির এমপি হয়েছেন। ১৯৯১ সনে আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে শাহজাহান ওমর আবার এমপি নির্বাচিত হয়ে আসেন। ১৯৯৬ সনে আসনটিতে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি নির্বাচিত হয়। ২০০১ সনে শাহজাহান ওমর আবার এমপি নির্বাচিত হয়ে ফিরে এসে প্রমান করেন এ আসনে তার একক জনপ্রীয়তা। ২০০৮ সনে বর্তমান বিএইচ হারুন আওয়ামীলীগের এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সনে বিএইচ হারুন এখান থেকে একজন জাপা প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখিয়ে পূনরায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি, রেইন্ট্রি হোটেলের মালিক বজলুল হক হারুন এমপি এ আসনে এবার নিজেকে একমাত্র মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে দাবি করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার এ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী দ্বিতীয় কেহ নেই। যিনি ছিলেন ষ্ট্যামফোর্ড ইউনির্ভাসিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর হান্নান ফিরোজ তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এছাড়া মনিরুজ্জামান মনির কি এ পদের যোগ্য কিনা সেটা আপনারাই বলুন। রাজনীতি ১ দিনে হয়না। আমরা রাজনীতি করে যোগ্যতার ভিত্তিতে এ পর্যন্ত এসছি। ওআইসি থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে আমার সুসম্পর্ক। তাছাড়া এ আসনের ২ উপজেলা চেয়ারম্যান, ১২ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ২ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদকরা আমার। এরাই জনসাধারনের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই আমার সাথে জনগণ আছে। আমি ১০ বছর নিরলস ও নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করেছি। এলাকার অনেক বেকার ছেলে মেয়েদের ডিউ লেটার দেয়ায় চাকরি হয়েছে। আমাকে প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট ভাল জানেন। আমি মনোনয়ন পেয়ে আগামীতে এমপি নির্বাচিত হলে এ আসনে একটি পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করব।

আওয়ামীলীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির। যদিও বর্তমান এমপি বিএইচ হারুন মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় মনিরকে তার প্রতিদ্বন্দ্বি মনেই করেন না। তরুণ এই নেতা দলীয় মনোনয়ন পাবার বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যাক্ত করে বলেন, আমি ২০ বছর আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ২০০৮ সনে প্রথম মনোনয়ন চেয়ে ছিলাম। তখন নেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বিএইচ হারুনের পক্ষে কাজ করতে বলেছেন। কিন্ত হারুন বিতর্কীত হলেও আমি নেত্রীর নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই তাই করেছি। এরপর ২০১৪ সনে আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের প্রত্যাশা ছিল মনোনয়ন পাব। জানিনা কি কারনে পাইনি। তাই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাব বলে আমি আশাবাদি। কারন আমি আমার এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি টকশোর মাধ্যমে আমার নেত্রীর উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রচার করে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি শেখ হাসিনা আমাকে তার সুবিবেচনায় রাখবেন।

বিএনপি দলীয় সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম গত নির্বাচনে আইনী জটিলতার কারনে মনোনয়ন পাননি। কিন্তু এবার তিনি তার মনোনয়ন পাবার বিষয়ে নিশ্চিত। এমনটাই জানালেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর। নুপুর মনোনয়ন প্রত্যাশী শাহজাহান ওমরের বরাত দিয়ে জানান, ওমর সাহেব আমাকে জানিয়েছেন, তার এ আসন থেকে অন্য কে মনোনয়ন চাইবে সেটা কোন ফ্যাক্টর নয়, তিনিই মনোনয়ন পাবেন এটা নিশ্চিত। বরিশাল বিভাগে মনোনয়ন পাবার তালিকায় এ আসন থেকে তার নাম প্রথমেই আছে। শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলাসহ সব মালায় তিনি খালাস পেয়েছেন। ঐ সব মামলা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও হয়রানী মূলক।

এ আসনে শাহজাহান ওমরের সাথে বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে অভিমত ব্যাক্ত করে রফিকুল ইসলাম জামাল বলেন, ১/১১’র পট পরিবর্তনের সাথে সাথে আমার এলাকার নেতাকর্মীরা নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে পরে। তখন শাহজাহান ওমর নিজেই ঝামেলায় পরায় আমি নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। পরবর্তিতে শাহজাহান ওমর দূর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন। তাই তার বিষয়ে দলীয় হাই কমান্ড ও এলাকাবসি ওয়কেফহাল। আমি তার বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাইনা। আমি ১/১১‘র সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সনের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থী এমপি বিএইচ হারুনের সাথে ৪৮ হাজার ভোট পেয়ে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যাই। ঐ সময় এত ভোট পেলেও এর আগে আমার দলীয় কোন এমপি এত ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়নি। আমার মনোনয়ন পাবার বিষয়ে আশাবাদি এই কারনে আমি বিগত দিনে নিজের স্বার্থের জন্য দূর্নীতি করে অর্থ সম্পদ করিনি। দলের স্বার্থেই নেতাকর্মীদের জন্য নিজের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব করেছি। সবসময় নিজের স্বার্থের চেয়ে দলের স্বার্থ ও সুনাম বজায়ে সতর্ক ছিলাম। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যদি অংশ নেয় তাহলে কারচুপি করার কোন সুযোগ থাকবেনা। কারন তখন জনগনই তা প্রতিহত করবে বলে মনে করেন ঝালকাঠি জেলা বিএনপির নেতা রফিকুল ইসলাম জামাল। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেক জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি হলেন কাঠালিয়ার সন্তান গোলাম আযম সৈকত। তিনি বলেন, আমি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক। আমার রাজনীতি শুরু ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমরের হাত ধরে। আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সম্পাদক ছিলাম। রাজনীতির মধ্যেই বড় হয়েছি। ইতিপূর্বে যারা মনোনয়ন পেয়েছে তারাই বার বার চাইতে পারবে এমন কোন কথা নেই। আমিও এ আসনের বিএনপির রাজনীর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বড় হয়েছি। এলাকায় আমার পরিচিতি আছে। তাই মনোনয়ন চাইব। তারপর দলের সিদ্ধান্ত যা হয় মেনে নেব। তবে এ আসনে জাতীয় পার্টি, জামায়াত ইসলামি, জাসদ থেকে কোন প্রার্থী দেবেনা বলে জানিয়েছে জেলা নেতৃবৃন্দ।