ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশি আতঙ্কে ঘরছাড়া দেড় শতাধিক পরিবার

প্রকাশঃ ২০২০-০৩-৩১ - ১৮:২৫
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সারা বিশ্ব। এ রোগের প্রাদর্ভাব দেখা দিয়েছে বাংলাদেশেও। এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারি ছুটি আরও কয়েকদিন সীমিত আকারে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ছুটিকালীন সময়ে সকলেই যাতে নিজ নিজ বাসায় অবস্থান সেই লক্ষে কাজ করে চলেছে জেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন ইউনিট। অথচ একটি হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশি আতঙ্কে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মধ্য পারপুগী শিববাড়ী গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের সদস্যরা এখন গৃহহারা। তারা আজ একখানে তো কাল আরেকখানে এভাবে পুলিশি আতঙ্ক ও গ্রেফতারের ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে দিন যাপন করছে।
কেননা গত ১০ মার্চ ওই এলাকার সামসুল ডাকাত নামে একজনের খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৭/৮ জন অজ্ঞাত দেখিয়ে একটি হত্যা মামলা করে নিহত ডাকাতের মা জুলেখা বেওয়া।
পুলিশি আতঙ্কে থাকা ঐ গ্রামের মাহমুদা, লতিফা, হোসনেয়ারাসহ আরো অনেকে জানান, সামসুল ডাকাত হত্যা মামলায় যে সাতজনের নাম উল্লেখ আছে তাদের আটক করে নিয়ে যাক পুলিশ, কিন্তু মামলায় অজ্ঞাত ৭/৮জন উল্লেখ করায় পুরো গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার হয়রানির শিকার হচ্ছে। পুলিশ দিন নেই, রাত নেই এ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে-এতে হয়রানি ও গ্রেফতার আতঙ্কে পুরো গ্রামের নারী-পুরুষেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সম্প্রতি হাসেন আলী নামে এক ভ্যান চালককে ধরে নিয়ে যাওয়ায় এ আতঙ্ক আরও জোড়ালো হয়ে পড়ে।
তারা আরও জানায়, এ এলাকার বেশিরভাগ লোকই দিনমজুর, হোটেল শ্রমিক, চাতাল শ্রমিক।একদিকে সরকারের নির্দেশ সকলকে বাসায় থাকতে হবে, অন্যদিকে পরিবারের অর্জনক্ষম ব্যক্তিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে একদিকে অমান্য করা হচ্ছে সরকারি নির্দেশ অপরদিকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এ এলাকার মানুষ। এছাড়াও মামলা হতে নাম বাদ দিয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে এলাকাসির কাছে ফোনে ২৫-৩০ হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে বলেও জানান ভূক্তভোগিরা।
এ অবস্থায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন এলাকাবাসি।
এ বিষয়ে জানতে ঠাকুরগাঁও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তানভীরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ কোন হয়রানি করছে না। ১৬৪ ধারার জবানবন্দি মোতাবেক যেসব আসামীদের নাম এসেছে শুধু তাদেরকেই গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে-এতে আতঙ্কিত বা হয়রানির কিছু নেই।
প্রসঙ্গত, গত ১০ মার্চ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের মধ্য পারপুগী শিববাড়ী গ্রামের একটি আম বাগান থেকে সামসুল ডাকাতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর তিন দিন আগে সামসুল ডাকাত ওই তার দূসম্পর্কের চাচাতো ভাই জিলানীর কলেজ পড়ুয়া ছেলে রাজুকে ধাওয়া দিয়ে পার্শ্ববর্তী খাদেমুল নামে এক ব্যক্তির বাসায় রামদা দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। বর্তমানে মেধাবী ছাত্র রাজু রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিসাধীন রয়েছে।এছাড়াও সামসুল ডাকাতের নামে সদর থানায় বেশকটি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।