ডুমুরিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান প্রসব ব্যবস্থা চালু

প্রকাশঃ ২০২১-০১-১৪ - ১৩:৫২

সুজিত মল্লিক, ডুমুরিয়া (খুলনা) : ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত সেবা হিসেবে সংযুক্ত হয়েছে স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান প্রসব ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির যৌথ সহায়তায় ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু হয় এর কার্যক্রম।
ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাহস ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত সেবা হিসেবে শুরু করা হয়েছে স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান প্রসাব (নরমল ডেলিভারি) ব্যবস্থা। আনুষ্ঠানিক ভাবে ২০২০ সালের মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এর কার্যক্রম। এখানে জনবল হিসেবে নিযুক্ত আছেন ধাত্রীবিদ্যায় (মিড ওয়াইফ) পারদর্শী ৪ স্বাস্থ্যকর্মী। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রথম ফ্লোরের দুইটি কক্ষ জুড়েই এটা বিস্তৃত। যার মধ্যে রক্ষিত আছে ডেলিভারির কাজে ব্যবহৃত সকল প্রকারের উন্নত সরঞ্জামাদি। সারাক্ষণ খোলা থাকে এ বিভাগ। গর্ভকালীন সময়ের শুরু থেকে সন্তান প্রসাব পর ৪২ দিন পর্যন্ত রয়েছে সেবা গ্রহনের সুযোগ। এলাকার ১১০জন গর্ভবর্তী মা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এ সেবার তালিকায়। তারা সকলেই নিচ্ছেন নিয়মিত ব্যবস্থাপত্র। আর এ সেবা গ্রহনে কোন প্রকার পয়সা লাগছে না। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মী পারুল আক্তার জানান, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে ধীরগতিতে চলছিল। মুলতঃ গত মাসের অর্থাৎ ডিসেম্বরের ৭ তারিখ থেকে আমরা সম্পূর্ণ ভাবে কার্যক্রম শুরু করেছি। এখানে আমিসহ মোট ৪জন মহিলা নিযুক্ত রয়েছি। কেউ যেন এসে ফিরে না যাই, সেই জন্য দিনের সারাক্ষণ এ বিভাগ খোলা থাকে। এছাড়া প্রতিদিন ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় আমাদের ভিজিটি চলছে। এ পর্যন্ত ১১০জন সংগ্রহ হয়েছে। এরমধ্যে গর্ভাবস্থায় আছেন ১০৬ জন এবং প্রসাব পরবর্তী পরিচর্যায় আছেন ৪জন। তবে সুবর্ণ দিন হল ১০ জানুয়ারি। এই দিনে আমরা সুন্দর ও সফল ভাবে এক প্রসুতির ডেলিভারী ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। ওই প্রসুতি ছিলেন সাহসের কুমারঘাটা গ্রামের আবু রায়হানের স্ত্রী তাসলিমা বেগম। সেদিন তাসলিমার একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছিল। দিন যতই যাচ্ছে ততই আমাদের এখানে গর্ভবতীর সংখ্যা বাড়ছে।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ বিএম দীন মোহাম্মদ খোকা (মা ও শিশু বিভাগ) বলেন, গ্রামীণ জনপদে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার ব্যাপক কাজ করছে। তারমধ্যে অন্যতম হল গর্ভকালীন সময়ে মা’র পরিচর্যা ও স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান প্রসাব (নরমল ডেলিভারী) ঘটানো। আর এটা স্থাপিত হয়েছে ডুমুরিয়ার সাহস ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। এখানে কোন প্রকার অপারেশন বা সিজার এ ধরনের কিছুই হয় না। সম্পূর্ণ সাধারণ, স্বাভাবিক এবং ধাত্রীবিদ্যায় প্রশিক্ষিত মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা এটা করে থাকেন। সরকার প্রাথমিক ভাবে দুটি স্থানে এ সেবা ব্যবস্থা চালু করেছে। যার একটি হল দেশের উত্তরাঞ্চলে আর অন্য একটি হল এখানে। সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলের মানুষ অনেক সৌভাগ্যবান বলা যেতে পারে। কারণ এখানে অনেক সুযোগ-সুবিধা। এখানে বিনা-খরচে গর্ভকালীন পরিচর্যা দেওয়া হবে। গর্ভাকালীন সময়ে যত সেবা সবই এখানে পাওয়া যাবে। ডুমুরিয়া উপজেলা ছাড়াও আশপাশের উপজেলা ও জেলার মানুষও নিতে পারবেন এ স্বাস্থ্য সুবিধা।
ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ বলেন, সিজার অপারেশন এখন প্রথায় পরিনত হয়ে গেছে। যা গরীব ও সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত কঠিন ও কস্টকর। টাকার অভাবে অনেক প্রসুতি মা ও শিশু মারা যাচ্ছে। আশাকরি এই সেবা ব্যবস্থার মাধ্যমে এই উপজেলা বাসী অনেক সুবিধা পাবে।