তানভীর আমার জীবন নষ্ট করেছে

প্রকাশঃ ২০১৮-০৪-০১ - ২১:০২

জয় মহন্ঠাত অলোক,ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা জগন্নাথপুর খোঁচাবাড়ি এলাকার প্রেমিক তানভীর আহম্মেদের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে গত ৩ দিন ধরে অনশন করছে সরকারি মহিলা কলেজের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

রোববার এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন প্রভাবশালী ছেলের পক্ষ নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করলে তা এলাকাবাসী মেনে নেয়নি। উল্টো ছেলের বাবা ওই তরুণীকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতে চাইছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর খোঁচাবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালেবের ছেলে তানভীর আহম্মেদ বাবুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই ইউনিয়নের ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের এইচএসএসি পরীক্ষার্থীর।

গত দেড় বছর ধরে সম্পর্ক চলাকালে তানভীর আহম্মেদ ওই তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবৈধভাবে মেলামেশা শুরু করে। হঠাৎ ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।

তখন প্রেমিকা তানভীর আহম্মেদ বাবুকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এ অবস্থায় গর্ভের সন্তান নষ্ট করলে প্রেমিকাকে বিয়ে করবে বলে শর্ত দেয় তানভীর। ৩ মাস আগে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ওই ছাত্রী। তখন বিয়ের দাবি নিয়ে গেলে বিয়েতে অস্বীকৃতি জানায় তানভীর।

অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে ওই প্রেমিকা গত শুক্রবার প্রেমিক তানভীরের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করে। এলাকাবাসী অনশনের বিষয়টি অবগত হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য কেদার নাথকে অবহিত করে। পরে ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে এসে প্রভাবশালী ছেলের বাবা মোতালেবকে ম্যানেজ করে অনশনকারী ওই মেয়েকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রস্তাব দেন।

কিন্তু অনশনকারী প্রেমিকা টাকা না নিয়ে প্রেমিককে বিয়ে করতে চায়। সেইসঙ্গে অনশন অব্যাহত রাখে। এই সুযোগে ইউপি সদস্য কেদার নাথ বাড়ি থেকে তানভীর ও তার পরিবারকে ভাগিয়ে দেয়।

রোববার সকালে বিয়ের দাবিতে অনশনের বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় লোকজন ইউনিয়ন পরিষদে বসলে শেষ পর্যন্ত সুরাহা হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা মেরাজুল জানান, ছেলের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অর্থ দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই তারা বিয়ের বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করছে। এছাড়া মেয়েটির কালকে এইচএসসি পরীক্ষা। এই মূহূর্তে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলে অন্ধকার নেমে আসবে।

অনশনকারী মেয়ের মা জানান, তানভীর নামে ছেলেটি আমার মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে। ৩ মাস আগে বাচ্চা নষ্ট করলে বিয়ে করবে বলে জানায়। বাচ্চা নষ্টের পর তানভীরকে বিয়ের চাপ দিলে অস্বীকৃতি জানায়। অবশেষে আমার মেয়ে বিষের বোতল হাতে নিয়ে বিয়ের দাবিতে ছেলের বাড়িতে অবস্থান নেয়।

স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ছেলের বাবার কাছে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার প্রস্তাব দেয় আমাকে। আমার মেয়েকে ওই ছেলে বিয়ে না করলে আত্মহত্যা করবে। কালকে তার এইচএসসি পরীক্ষা। সে পরীক্ষা দিতে পারবে বলে মনে হয় না।

বিয়ের দাবিতে অনশনকারী ওই মেয়ে জানায়, তানভীর আমার জীবন নষ্ট করেছে। আমি তাকেই বিয়ে করবো। তার সঙ্গে বিয়ে না দিলে এই বাড়িতে আত্মহত্যা করবো।

ছেলের বাবা মোতালেবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার ছেলে ওই মেয়েকে বিয়ে করবে না। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে মীমাংসার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য কেদার নাথ বলেন, স্থানীয়ভাবে অনশনের বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। সমাধান না হলে বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিনের কাছে জানতে তিনি বলেন, ছেলে ও তার পরিবার ওই মেয়েকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মেয়ের পরিবার পরিষদে বা থানায় লিখিত অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঠাকুরগাঁও সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞ্চা বলেন, অনশনের বিষয়টি আমরা এখনও অবগত নই। অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।