দাকোপে বিশৃংক্ষলার মধ্যদিয়ে বিজয় দিবস পালন : মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্চিত করার অভিযোগে

প্রকাশঃ ২০১৯-১২-১৭ - ১২:৪৯

দাকোপ প্রতিনিধি : দাকোপে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃক্ষলার মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। উপজেলা আওয়ামীলীগ তাৎক্ষনিক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্চিত করার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সংবাদের কারনে দৈনিক দেশ সংযোগের ফটোকপি জনতার হাতে হাতে দেখা যায়।
জাতীয় কর্মসূচীর সাথে সমন্বয় রেখে দাকোপে মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচী শুরু হয়। যথারীতি তোপধ্বনি, স্মৃতি সৌধে দাকোপ উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, চালনা পৌরসভা, উপজেলা আ’লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পন করে। সরকারী বেসরকারী ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ ও শরীরচর্চা প্রদর্শনী শেষে সকাল ১০ টায় উপজেলা পরিষদ মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা শুরু হয়। সভায় সকল মুক্তিযোদ্ধা বক্তারা স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিদের রুখে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা কোন রাজাকারের হাতে জাতীয় পতাকা দেখতে চাইনা রাজাকারের কাছ থেকে সম্মাননা পেতে চাইনা। এক পর্যায়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন তার বক্তৃতায় প্রশ্ন রেখে বলেন আজকের অনুষ্ঠানে নির্বাচীত জনপ্রতিনিধি অনুপস্থিত কেন। এ সময় দর্শক সারি থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খানের সমর্থকরা উঠে দাড়িয়ে তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করলে শুরু হয় উত্তেজনা। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ঘোষকের কাছ থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে নির্বাহী অফিসার আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এখানে বিশৃংক্ষলা সৃষ্টি করলে আমি এখনি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। এমন অবস্থার মাঝে শেষ হয় সংবর্ধনা। মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান লাঞ্চিত করা হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শেখ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা আ’লীগের যৌথ উদ্যোগে তাৎক্ষনিক একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিন করে এসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। সমাবেশে তারা এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবী করেন। সমাবেশ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা তাৎক্ষনিক সংবাদ সম্মেলন করেন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সর্বশেষ কমিটির ডেপুটি কমান্ডার মোহিত চন্দ্র রায় লিখিত বক্তৃতায় বলেন, মহান বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা সভায় চিহ্নিত তালিকাভুক্ত রাজাকার মুনসুর আলী খানের পুত্র ভাই ও নাতীর নেতৃত্বে একদল উশৃংক্ষল যুবক বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেনের বক্তব্যে বাধা প্রদান এবং তাঁকে অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজসহ লাঞ্চিত করে। তারা ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন এবং গ্রেফতারের দাবী জানান। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা মনোজ কুমার রায়, চীররঞ্জন মন্ডল, জয়তীষ মন্ডল, আশিষ মন্ডল, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ আবুল হোসেন, সহসভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান রনজিত কুমার মন্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল কাদের, চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডল, চালনা পৌর মেয়র সনত কুমার বিশ্বাস, জেলা পরিষদ সদস্য কবির খান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড়, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খাদিজা আকতারসহ উপজেলা আ’লীগ,যুবলীগ,মহিলালীগ.শ্রমিকলীগ,স্বেচ্ছাসেবকলীগ,ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মি উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে আ’লীগনেতারা অভিযোগ করে বলেন ঘটনার প্রতিবাদে আমরা মিছিল নিয়ে নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্চিতের বিচার দাবী করি। কিন্তু নির্বাহী অফিসার কোন সহানুভূতি না দেখিয়ে বরং ঠিক ওই সময় প্রশাসন হটাৎ মাইকে বঙ্গবন্ধুর ভাষন বাজিয়ে সমাবেশ বাধাগ্রস্থ করার অপচেষ্টা করে। উল্লেখ্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খানের নাম থাকায় দাকোপে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তারা বিজয় দিবসের প্রস্তুতি সভায় কোন রাজাকারের কাছ সংবর্ধনা না নেওয়ার দাবী জানাই। খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকায় বিজয় দিবসের দিন “রাজাকারের হাত থেকে সম্মাননা নেবেনা দাকোপের মুক্তিযোদ্ধারা” শিরোনামে একটি সংবাদ ফলাও করে প্রকাশিত হয়। এ দিন দাকোপে দেশ সংযোগের শত শত ফটোকপি জনতার হাতে দেখা যায়। এ দিকে সরকারী প্রজ্ঞাপনে বিজয় দিবসে যথাযথ মর্যাদায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা থাকলেও দাকোপ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে সেটি মানা হয়নি। সেখানে ভবনের ছাদে বাকা অবস্থায় পতাকা উড়তে দেখা যায়। এ ছাড়া বাজুয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে অল্প সময়ের জন্য দায় সারাভাবে পতাকা উত্তোলিত হয় বলে সেখানকার সংবাদ কর্মিদের মাধ্যমে জানা যায়। মহান বিজয় দিবস উদযাপনে এমন অব্যবস্থাপনায় সর্ব সাধারনের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়।