দাকোপে সামাজিক বন গড়তে ‘সিএনআরএসর’ অবহিতকরণ কর্মশালা

প্রকাশঃ ২০১৯-০৬-৩০ - ১৯:১৫

দাকোপ (খুলনা) : সামাজিক বন গড়ে তোলা হবে নদীতে জেগে ওঠা চরে। মূলত নদীভাঙন রোধ, উপকূলীয় এলাকায় সবুজবেষ্টনী গড়ে তোলা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে এলাকা রক্ষা, সরকারি জমি অবৈধ দখলদারমুক্ত রাখা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পশুপাখির আবাসস্থল গড়ে তোলা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা এবং স্থানীয়ভাবে জ¦ালানির চাহিদা মেটানো ও ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য সামাজিক বনায়ন করা খুবই দরকার।
রোববার সকাল ১০টার দিকে খুলনার দাকোপ উপজেলা পরিষদ সম্মেলনকক্ষে ‘বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) অংশগ্রহনমূলক পানি ব্যবস্থাপনা, সামাজিক বনায়ন ও সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বিষয়ে’ অবহিতকরণ কর্মশালায় এসব কথা উঠে আসে।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, নদীর পুর্ণজীবন ও নিষ্কাষণ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে জোয়ারের পানিতে আসা পলি পরিকল্পিতভাবে অবক্ষেপনের মাধ্যমে ভূমি গঠনের কোন বিকল্প নেই। বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কারিগরি বিষয়ে অভিজ্ঞ হলেও সামাজিক বিরোধগুলো নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে তাদের সামর্থ্য বা দক্ষতা নেই। এ কারণে পাউবো’কে সহযোগিতা করার জন্যে একটি সহায়ক কমিটি গঠন করা হবে।
বক্তারা বলেন, উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় লোনা পানির প্রভাবে ফসল, গবাদিপশু ও গাছপালা রক্ষা করা সম্ভব হয়না। সুপেয় পানি আনতে হয় প্রায় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের পথ হেঁটে। এসব সমস্যা দূরীকরণ করতে হলে নির্দিষ্ট জলাধার খনন করতে পারলে অংশগ্রহনমূলক পানি ব্যবস্থাপনা সম্ভব।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্সেস স্টাডিস (সিএনআরএস) প্রকল্প এই কর্মশালার আয়োজন করেন।
আলোচনা সভায় মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, নদীভাঙন রোধ করতে না পারলে চর বনায়ন করে লাভ হবে না। প্রভাবশালীরা নদী-খালগুলো ইজারা নেওয়ায় কৃষি কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। খাস জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়ায় পানি সরবারহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ‘দ্য ফার্ষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো অব হেনান ওয়াটার কনজারভেন্সি’ নামের চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উপজেলার ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারে এ প্রকল্পের কাজগুলো করছে। কিন্তু কাজের মান ভাল হচ্ছে না উল্লেখ করে বলেন দুর্নীতি আর ধীরগতিতে যেখানে বেড়িবাঁধ সংস্কার সম্পন্ন হচ্ছে সেখানে দখল নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করছে প্রভাবশালীরা। আর বনায়নের গাছ বড় হলে নিজেদের প্রয়োজনে তা ব্যবহার করবে। তাই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয়দের নিয়ে একটি দল গঠন করা দরকার। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা প্রভাবশালীরা দখল করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রশাসনের সহযোগিতায় নদীর ধারে গড়ে তুলতে হবে বন।
অবহিতকরণ কর্মশালায় খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (সিইআইপি-১) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলমের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াদুদ, যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপপ্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান, সিএনআরএস’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারি মলায় কুমার সরকার, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড়, খাদিজা আক্তারসহ আরও অনেকে।
কর্মশালায় দাকোপ উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্য, বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, উন্নয়নকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সিএনআরএস প্রকল্পের কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমকর্মী অংশ নেন। প্রকল্প পরিচিতি করেন সিএনআরএস টিম লিডার এসএম মনজুরুল আহসান।