ধর্ষণ মামলা ৬ মাসে শেষ করার নির্দেশ

প্রকাশঃ ২০১৯-০৭-১৮ - ১৯:১৬

ঢাকা অফিস : নারী-শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি ধর্ষণ মামলা পরিচালনায় ৭টি নির্দেশনা দিয়েছে আদালত। দুপুরে, বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ এই নির্দেশনা দেয়। এদিকে, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ধর্ষণ বন্ধে আইনের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন দরকার।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। রাজধানীর ওয়ারিতে সাত বছরের শিশু সামিয়াকে ধর্ষণের পর, হত্যার ঘটনাটি বেশ আলোচিত হয়।

বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, ধর্ষণ মামলার বিচার হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আবার আসামিরাও সহজেই জামিন পেয়ে যায়। বুধবার, শিশু ধর্ষণের এমন তিনটি মামলার শুনানি হয় হাইকোর্টে। পরে এ বিষয়ে ৭ দফা নির্দেশনা দেয় উচ্চ আদালত। ছয় মাসে মামলা শেষ করার পাশাপাশি, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে মনিটরিং কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

নির্দেশনাগুলো হলোঃ

১. দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারাধীন ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইনের নির্ধারিত সময়সীমার (বিচারের জন্য মামলা প্রাপ্তির তারিখ থেকে ১৮০ দিন) মধ্যে যাতে বিচারকাজ সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।

২. ট্রাইব্যুনালগুলোকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ধারা ২০ এর বিধান অনুসারে মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা মামলা পরিচালনা করতে হবে।

৩. ধার্য তারিখে সাক্ষী উপস্থিতি ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি জেলায় অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), সিভিল সার্জনের একজন প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। ট্রাইব্যুনালে পাবলিক প্রসিকিউটর কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকবেন এবং কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতি মাসে সুপ্রিম কোর্ট, স্বরাষ্ট্র এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবেন। যে সব জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনাল রয়েছে সে সব জেলায় সব ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মনিটরিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং তাদের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠ তিনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।

৪. ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ সঙ্গত কারণ ছাড়া সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে মনিটরিং কমিটিকে জবাবদিহি করতে হবে।

৫. মনিটরিং কমিটি সাক্ষীদের উপর দ্রুততম সময়ে যাতে সমন জারি করা যায় সে বিষয়েও মনিটরিং করবেন।

৬. ধার্য তারিখে সমন পাওয়ার পরও অফিসিয়াল সাক্ষী যেমন- ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তার বা অন্য বিশেষজ্ঞরা সন্তোষজনক কারণ ব্যতিরেকে সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত না হলে, ট্রাইব্যুনাল উক্ত সাক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ ও প্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশ বিবেচনা করবেন।

৭. আদালতের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন এবং আদালত এটাও প্রত্যাশা করছে যে, সরকার অতি স্বল্প সময়ে উক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবেন।

এ বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবী মনিরুজ্জামান আসাদ জানান, ‘১৮০ দিনের মধ্যে মামলাগুলো নিস্পত্তি করতে হবে। একটা মনিটরিং সেল থাকবে। মনিটরিং সেল নির্দিষ্ট সময়ে মামলা শেষ করার বিষয়টি মনিটর করবে। সাক্ষী যেই হোক না কেন পুলিশ, ডাক্তার যেই হোক না কেন; তাদের প্রতি নির্দষ্ট সময়ে মধ্যে সমন জারী করতে হবে।’

হাইকোর্টের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, শুধু আইন করে ধর্ষণ বন্ধ সম্ভব নয়। এজন্য কঠোর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম বলেন, ‘একটানা যাতে মামলাগুলো হয় সে নির্দেশনা আছে। মামলাগুলো ঠিক মতো যাতে পরিচালিত হয় সে জন্য একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। যদি কোন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থিত করা না হয়, সে ক্ষেত্রে মনিটরিং কমিটিকে জবাবদিহি করতে হবে।’