ধানের মূল্য না থাকায় দাকোপের কৃষকদের মাঝে হতাশা

প্রকাশঃ ২০১৯-১২-২৯ - ১৭:৪৫

সাবরিনা বিনতে মাহবুব : খুলনার উপকুলীয় কৃষি উৎপাদন অঞ্চল দাকোপে এবার আমন ধানের উৎপাদন প্রায় লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পর্যায়ে। কিন্তু ভরা মৌসুমে বাজারে ধানের মূল্য না থাকায় কৃষকদের মাথায় হাত। অন্যদিকে সরকারীভাবে ধান ক্রয়ের নীতিমালা অনুসারে দাকোপে প্রায় ৯৮% ভাগ কৃষক এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে আগামীতে ধান উৎপাদনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে ভুক্তভোগী চাষিরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অফিস সুত্র জানায়, দাকোপে এবার উচ্চ ফলনশীল আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার ৯ শ’ হেক্টর। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৮ শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে। স্থানীয় জাতের ৩ হাজার ৯ শ’ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ৮ শ’ ২৫ হেক্টর। তারা মোট ৮ লাখ ১০ হাজার ১০১ টন ধান উৎপাদন হয়েছে বলে আশা করছে। কিন্তু বর্তমানে বাজারে ধানের মূল্য ৫ শ’ টাকা মন দরে বিক্রি হওয়াতে কৃষকদের মাথায় হাত। খোজ নিয়ে জানা যায় অধিকাংশ কৃষকরা চাষাবাদ মৌসুমে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেছে। অপরদিকে মাঝপথে কারেন্ট পোকার আক্রমন দেখা দেওয়ায় ফসল বাঁচাতে তারা বিনিয়োগের কমতি রাখেনি। তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের কৃষক রবীন্দ্রনাথ সরদার গত বুধবার ধান বিক্রি করতে এসেছিলেন উপজেলার সর্ববৃহৎ ধানের হাট চালনা বাজারে। ৫ শ’ টাকা ধানের মন শুনে তিনি হতাশাগ্রস্থ হয়ে বলেন, এবার পরিস্থিতি যা তাতে জমি বিক্রি করে ঋণ শোধ করা ছাড়া উপায় নেই। তিনি বলেন চাষাবাদে বিঘা প্রতি জমিতে খরচ দাড়িয়েছে ক্ষেত্র বিশেষ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু ধান বিক্রিতে খরচ বাঁচানোর কোন সুযোগ নেই। সর্বশেষ কারেন্ট পোকার আক্রমনে বিঘা প্রতি ১০/১২ মন সর্বোচ্চ ধান পেয়েছি। সুতরাং আগামীতে আর বোধহয় ধান করা সম্ভব হবেনা। অপরদিকে সরকার ১০৪০ টাকা মন দরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সে পরিমান অতি নগন্য। খোজ নিয়ে জানা যায় দাকোপে মোট ১৮৭৩ জন কৃষক এই সুযোগের আওতায় ১৮৭৩ টন ধান বিক্রির সুযোগ পাবেন। যা উপজেলার ধান উৎপাদনকারী মোট কৃষকের ২ দশমিক ১ ভাগ। অর্থাৎ প্রায় ৯৮% ভাগ কৃষক এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। আবার সেই সুবিধাভোগীর তালিকা নির্নয়ে আছে নানা সমস্যা। জানা গেছে ইতিমধ্যে সেই তালিকা একদফা করে বাতিল করা হয়েছে নানা ত্রুটি বিচ্যুতির অভিযোগে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে লটারীর ভিত্তিতে নতুন তালিকা চুড়ান্ত করা হবে বলে দাবী করেছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান। বর্তমান বাস্তবতায় কৃষকরা উৎপাদিত ধানের নায্য মূল্য না পেলে আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। দাকোপে অন্য কোন আয়ের উৎস্য না থাকায় এখানকার মানুষের জীবন জীবিকা অনেকটা কৃষি নির্ভর। সেই কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে ভুক্তভোগী কৃষক পরিবার ও সচেতন মহল।