নদী ভাঙঙ্গনে সব হারিয়ে অসহায় দাকোপের মফিলের পরিবার

প্রকাশঃ ২০১৯-০২-১৪ - ২০:০৫

দাকোপ খুলনা : প্রতিদিনের ন্যায় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে বাড়ীতে এসে রাতের ঘুমই ছিল সর্বনাশা ঘুম। চোখের নিমিশেই সহায়সম্বলসহ সর্বস্ব হারিয়ে কোন রকম পরিবারের সদস্যরা জীবনে বেঁচেযায়। জীবন বাঁচলেও বড় অসহায়হয়ে জীবন-যাপন করছেন ভুক্তভোগী এপরিবারটি। এক বছর এক মাস অতিবাহীত হয়ে গেলেও কোন সরকারি সাহায্য মেলেনি পরিবারটির ভাগ্যে। সরকারের সাহায্যের জন্য খুলনা জেলা প্রসাসকের নিকট লিখিত আবেদন করলেও কোন সুফল পায়নি। ঘটনাটি ঘটেছে খুলনার দাকোপ উপজেলার কালাবগী গ্রামের খর স্রোত শিবসা নদীর পাড়ের বাসিন্ধা আমজাদ সানার পুত্র মফিল উদ্দিন সানার ভাগ্যে।

লিখিত আবেদন সূত্রে জানাযায়, খর স্রোত শিবসার ভয়াবহ নদী ভাঙনে ভিটেমাটি সহায়সম্বলসহ সর্বস্ব হারিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দাকোপের সুতারখালী ইউপির কালাবগী গ্রামের মফিল সানা ও তার পরিবার। শেষ সম্বল ভিটেবাড়ি মুহুর্তের মধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হওয়ায় মাথা গোজার ঠাইয়ের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকতাদের কাছে ধর্ণা দিয়ে চললেও গত ১ বছরের মধ্যে বসবাসের জন্য একটুকরো জায়গা-বাড়ীর ব্যবস্থা হয়নি অসহায় বানভাসি এই পরিবারটির ভাগ্যে। গত ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারী স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের চার সদস্য নিয়ে বাড়িতে বসবাসরত অবস্থায় রাতের জোয়ারের পর ভাটার সময় হঠাৎ নদীগর্ভে চলে যায় ভিটাবাড়ি। অতি কষ্টে সকলের জীবনে বাঁচলেও ঘরের কোন মালামাল শেষ রক্ষা করতে পারেনি। দিন আনে দিন খাওয়া মফিল সব হারিয়ে পড়ে মহাবিপদে, ইনকাম করে পরিবারের সদস্যদের বাঁচাবে নাকি বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে এমন ভাবনায় দিশেহারা মফিল। জীবন বাঁচাতে দিনমজুর মফিলউদ্দিন উপায়ান্ত না পেয়ে সন্তানদের মুখে অন্নতুলে দিতে এবং বাসস্থানের ব্যবস্থার জন্য পাড়ি জমায় খুলনা মহানগরীর লবনচোরায় এলাকায়, সেখানে এক ঝুপরি ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের রেখে সারাদিন কাজ করে পাশাপাশি দাকোপে নিজ মাতৃভূমিতে একটু মাথা গোজার ঠাইয়ের জন্য সরকারি ভাবে ঘর-খাসজমির বন্দোবস্ত পাওয়া যায় এজন্য খুলনা জেলা প্রশাসকের নিকট একটি আবেদন করেন গত ১৯ আগস্ট’১৮ তারিখে। ঐদিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়ে ঐ আবেদনটি প্রেরণ করেন। তৎকালিন নির্বাহী কর্মকর্তা মফিলের আবেদন হাতে পেয়ে এ্যাসিল্যান্ডকে অবহিত করলেও তার কোন সুরাহ মেলেনি। দীর্ঘ সময় কোন সমাধান না পাওযায় মফিল পুনরায় জেলা প্রশাসককে অবহিত করলে তিনি মৌখিকভাবে দাকোপ উপজেলার বর্তমান নির্বাহী অফিসারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারী’১৯ তারিখে দাকোপ উপজেলার নির্বাহী অফিসার পুনরায় এ্যাসিল্যান্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লিখিতভাবে বলেন। কিন্তু দাকোপ এ্যাসিল্যান্ড অফিসে মফিল গেলে তাকে সংশ্লিষ্ট এলাকার নায়েবের কাছে খোজ-খবর নিতে বলা হয়। মফিল সেখানেও গেলে সেই থেকে আজ পর্যন্ত কোন আশুফল তার ভাগ্যে মেলেনি। মফিলের করা আবেদন এখন টেবিলের ফাইলে বন্দী। বিষয়টি সদয় অবগতির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, খুলনা বিভাগিয় কমিশনার ও দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অনুলিপি প্রদান করেছেন বলে জেলা প্রশাসক বরাবর করা আবেদন সূত্রে জানা যায়। আবেদনে খুলনা-১ আসনের সংসদ সদস্য, হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি, দাকোপ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান,মেম্বর ও সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাদেরসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার একাধিক জনপ্রতিনিধির জোর সুপারিশ করলেও এখন ভিটেমাটিহারা ওই পরিবারটির মাথা গোজার কোন ঠাই হয়নি। তাই হতাশ না হয়েও এখনও ঘর-জমি জায়গার আশায় দাকোপ সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভরসায় দিন গুনছে মফিল সানা ও তার পরিবার পরিজন।