নুসরাতের রেজাল্ট কাঁদাল স্বজন ও সহপাঠীদের

প্রকাশঃ ২০১৯-০৭-১৭ - ২০:৫১

ঢাকা অফিস : বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। মৃত্যুর আগে দু’টি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন নুসরাত। ওই দুই পরীক্ষার পর আর অংশ নিতে পারেননি নুসরাত। আজ সেই দুই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। নুসরাত জাহান রাফি অংশ নেয়া ওই দুই পরীক্ষায় ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন।

ফল প্রকাশের পর নুসরাতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার নুসরাতের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন স্বজন ও সহপাঠীরা। এ সময়, মাদ্রাসার শিক্ষকদেরও আবেগাপ্লুত হতে দেখা যায়। মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো করলেও নুসরাতের কথা স্মরণ করে তার সহপাঠীদের কোনো উৎসব বা উদযাপন করতে দেখা যায়নি।

মাদ্রাসায় পরীক্ষার ফল জানতে আসা শিক্ষার্থীরা এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। শিক্ষকদের চোখেও নেমে আসে শোকের অশ্রু। এ সময়, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হোসাইন বলেন, ‘নুসরাত সহগুলো পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলে ভালো ফল করতো। লেখাপড়ার প্রতি মেয়েটার কতটা আগ্রহ থাকলে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতেও পরীক্ষায় অংশ নেয়।’

বুধবার প্রকাশিত আলিম পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, কোরআন মাজিদ (বিষয় কোড ২০১) ও হাদিস (বিষয় কোড ২০২) পরীক্ষায় ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন নুসরাত। তবে, অন্যসব পরীক্ষাগুলোতে নুসরাতকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে।

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এ বছর আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে, ১৫২ জন পাস করেছেন আর অকৃতকার্য হয়েছেন ২৭ জন। মাদ্রাসাটির পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

গেল ২৭শে মার্চ নুসরাতকে নিজ কক্ষে ডেকে শ্লীলতাহানি করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই দিনই অধ্যক্ষকে আটক করে পুলিশ। তখন থেকেই কারাগারে আছেন সিরাজউদ্দৌলা। পরে, অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার অনুসারীরা মামলা তুলে নিতে নুসরাতের পরিবারকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে।

এই অবস্থার মধ্যেও নুসরাত ১লা ও ২রা এপ্রিল নুসরাত আলিম পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু, ৬ই এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাতকে কৌশলে মাদ্রাসার সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার অনুসারীরা।

অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহান রাফিকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ফেনী সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়া হয়। ঢাকা মেডিক্যালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ই এপ্রিল মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।