নুসরাত হত্যায় ১৩ জন সম্পৃক্ত: পিবিআই

প্রকাশঃ ২০১৯-০৪-১৩ - ১৪:৪২

ঢাকা অফিস : ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে নুসরাত জাহান রাফি হত্যায় ১৩ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই এর ডিআইজি বনোজ কুমার মজুমদার। এই হত্যাকান্ড পূর্বপরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি জানান, মোট গ্রেপ্তার ১৩ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি ৭ জন। নুর উদ্দিনের নেতৃত্বে আগুন দেয়ার ঘটনায় তিন ছাত্রীকে সনাক্ত করা হয়েছে। নুসরাতকে আগুনে পোড়ানোর কথা স্বীকার করেছে নুর উদ্দিন। নুরুদ্দিনের নেতৃত্বে ৫ জন মাদ্রাসা গেট নিয়ন্ত্রণে রাখে।

এদিকে নুসরাত হত্যা মামলার তিন নম্বর আসামি শাহাদাত হোসেন শামিমকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাত ১টার দিকে মুক্তাগাছা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো আব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই’র একটি দল।

এর আগে মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার ঘনিষ্ঠ সহচর নুর উদ্দিনকে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের আমতলী এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

নুসরাত হত্য মামলার আরেক আসামি সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মকসুদুল আলমকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়। মকসুদুলকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডের আবেদন করেছে পিবিআই। মকসুদুল আলম নুসরাত হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি, সে নুসরাতের মাদ্রাসরা পরিচালনা পর্ষদে্র সদস্য। মামলার প্রধান আসামি সিরাজ-উদ-দৌলাসহ এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।

এছাড়া, নুসরাত হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের দায়িত্বে গাফিলতি প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী।

অভিযোগ রয়েছে নুসরাতের গায়ে আগুন লাগানোর মূল পরিকল্পনাকারী অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সাথে প্রত্যাহার হওয়া ওসি মোয়াজ্জেমের ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। ওসি মোয়াজ্জেম জিজ্ঞাসাবাদের নামে নুসরাতের ভিডিওটি ওসি নিজেই ধারণ করেন। যার জন্য নেয়া হয়নি অনুমতি।

এছাড়া অভিযোগ আছে নুসরাতের শরীরে আগুন দেয়ার পর সিরাজের পক্ষে মানববন্ধনের আয়োজনও করেন ওসি। কেউ নুসরাতের পক্ষে যেন কথা না বলে সে চেষ্টা ছাড়াও ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে সব কিছুই করেন তিনি। ঘটনার পর ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রত্যাহার করা হয়।

এদিকে, নুসরাত হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সিরাজ-উদ-দৌলা; এ তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত বিষয়ক পরিচালক আল মাহমুদ ফয়েজুল। হত্যায় সরাসরি জড়িত রয়েছে সিরাজের সহযোগীরা; ফেনীতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে একথা জানান তিনি।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাদ; যে স্থানটিতে নুসরাতের শরীরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা; সে স্থানটি পরিদর্শন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত বিষয়ক পরিচালক আল মাহমুদ ফয়েজের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত দল।

প্রসঙ্গত, গত ৬ই এপ্রিল সকালে সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাত জাহান রাফির গায়ে পরিকল্পিত ভাবে আগুন লাগিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। তারা নুসরাতকে মিথ্যা বলে পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে নিয়ে যায় এবং তার শরীরে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়।

অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সেদিনই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী উন্নত চিকিৎসার জন্য নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার নির্দেশ দিলেও তার অবস্থা শংঙ্কটাপন্ন হওয়ায় তাকে সিঙ্গাপুর নেয়া সম্ভব হয়নি। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধরার মারা যান নুসরাত।

গেল ২৭শে মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। মামলার এজহারে বলা হয়, ২৭শে মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষা তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে নুসরাতকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধাঘন্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। পরে, নুসরাতের পরিবারের করা মামলায় গ্রেপ্তার হন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা।