পলিথিন থেকে হবে তেল-গ্যাস-কার্বন

প্রকাশঃ ২০১৯-০৭-২২ - ১৫:২৩

ঢাকা অফিস : একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে পলিথিন-প্ল্যাস্টিক বর্জ্য। বাংলাদেশের মত গরিব দেশগুলোর জন্য এটা আরো বেশি ভয়ঙ্কর। পরিবেশ দূষণকারী সেই বর্জ্য পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কার্বন কালো উৎপাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিটির নাম পাইরোলাইসিস।

প্ল্যান্টটি তৈরির নেতৃত্বে ‍ছিলেন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ হিল কাফী। কাফী জানান, তার দল টানা প্রায় ৮ মাস পরিশ্রম করে পুরো প্লান্ট প্রস্তুত ও জ্বালানি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। পাইরোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত মোট বর্জ্য পলিথিন থেকে ৭০-৭৮ শতাংশ ফার্নেস তেল ও ৫-৮ শতাংশ কার্বন কালো পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে ফার্নেস তেল হতে বর্জ্য তেল নিঃসরণ যন্ত্রের সাহায্যে ৬৫ শতাংশ পেট্রল ও ৩০ শতাংশ পরিমার্জিত ডিজেল পাওয়া যাবে। এছাড়াও এই প্রক্রিয়ার সময় প্রাকৃতিক গ্যাসের তুলনায় উচ্চতর ক্যালরি মূল্য সম্পন্ন ১০-১৮ শতাংশ নন-কনডেন্সেবল গ্যাস তৈরি করা সম্ভব।

তরুণ এ গবেষক দল দাবি করছেন, তাদের উৎপাদিত জ্বালানি তেলের ক্যালরিফিক মান ফার্নেসের ক্ষেত্রে ৩৮.৫ মেগাজুল/কেজি ও পেট্রলিয়াম পেট্রলের ক্ষেত্রে ৪২.০৯ মেগাজুল/কেজি। এটি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) কর্তৃক পরীক্ষিত। উৎপাদিত এ ফার্নেস তেল শিল্প কল-কারখানায় জ্বালানি উপকরণ হিসেবে এবং খনন যন্ত্র, রাস্তা বেলন বা লোডিং মেশিনের মতো নিম্নগতির ইঞ্জিনগুলোতে পরিমার্জিত ডিজেল ও পেট্রল ব্যবহার করা যাবে।

কার্বন কালো সম্পর্কে কাফী বলেন, ‘কার্বন কালোটি মৃত্তিকা দিয়ে তৈরি ইট বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এই কার্বন কালো প্রক্রিয়াজাত করে উচ্চমূল্য সম্পন্ন এন-২২০ ও এন-৩৩০ কার্বন পাওয়া যায়। এছাড়াও এটি রঙের মাস্টার ব্যাচ হিসেবে পাইপ, ক্যাবল জ্যাকেট প্রভৃতির মৌলিক উপাদান হিসেবে প্রক্রিয়াজাত করা যাবে।’

উদ্ভাবিত এ প্লান্টে খুব বেশি খরচেরও প্রয়োজন নেই। ১ হাজার ৫০০ বর্গফুট জমির মধ্যেই হয়ে যাবে পুরো প্লান্ট। ১ হাজার লিটার পানিতে চলে প্লান্টটি। তাপ ও চাপের নিয়ন্ত্রণ, চুল্লি পরিচালনা ও উৎপাদন তোলার জন্য দুজন মানুষই যথেষ্ট। ডিস্টিলেশন প্লান্টসহ পাইরোলাইসিস প্লান্ট বানাতে খরচ পড়বে ২ লাখ টাকার মতো। প্রতিদিন গড়ে ৪-৭ ঘণ্টায় ৮০ কেজি হিসেবে বছরে ২৪ টন জ্বালানি তেল উৎপাদন করা যাবে এ প্লান্ট ব্যবহার করে। যার মধ্যে ফার্নেস তেল ১৮ টন এবং তা থেকে পেট্রল ১১.৭ টন ও ডিজেল ৩.৮৪ টন, কার্বন কালো ১.৪ টন এবং গ্যাস উৎপাদন হবে ৩.৮৪ টন।

মূলত পরিবেশ দূষণ কমাতেই এই উদ্যোগ নিয়েছিল গবেষক দলটি। এ প্রক্রিয়ায় মাটি, পানি বা বায়ুর কোনো ক্ষতি বা দূষণ হয় না। কাফীর সঙ্গে প্ল্যান্টটি তৈরিতে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসয়ায়ন বিভাগের মাহমুদুল হাসান, আভিলাষ দাস তমাল, বাবুল চন্দ্র রায়, মাহমুদুল হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব সহকারী নাসির উদ্দিন আহমেদ লিমন।