পুলিশ পাহারায় রাতের আধারে পালিয়ে গেলেন সেই ভিসি নাসিরউদ্দীন!

প্রকাশঃ ২০১৯-০৯-৩০ - ১৫:১৫

এম শিমুল খান, গোপালগঞ্জ : অবশেষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হলেন গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। পুলিশ পাহারায় রবিবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলো ছাড়েন তিনি। এ সময় তাকে উদ্দেশ করে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ধারণা, উপাচার্য পদ থেকে ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগ বা তাকে অপসারণ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভিসি সাহেব রাত ৮টার দিকে তাকে ফোন করেন। তখন তিনি জরুরি অফিসিয়াল কাজে ঢাকা যাবেন বলে পুলিশ দিয়ে তাকে ক্যাম্পাস থেকে বাইরে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পরে পুলিশ পাহারায় তাকে বাংলো থেকে বের করে আনা হয়।
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন পুলিশ পাহারায় বাংলো ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আমাদের তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন। তাই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য পুলিশ প্রটেকশন চেয়েছেন। আমরা তাকে পুলিশ প্রটেকশনে বাংলো থেকে বের করে এনেছি। তিনি কোথায় গেছেন তা আমাদের জানা নেই।
তবে, শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, রোববার ইউজিসি ভিসিকে প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ দেয়ায় তিনি রাতের বাংলো ছেড়েছেন। এখন তার পদত্যাগ সময়ের ব্যাপার বলেও তারা জানান।
গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের ছাত্রী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জিনিয়ার বহিষ্কার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ১৮ সেপ্টেম্বর প্রশাসন তার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিতে বাধ্য হয়। গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা ভিসির বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ২১ সেপ্টেম্বর বহিরাগতরা হামলা করলে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়। এরপর থেকে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের এক দফার আন্দোলন অর্থাৎ ভিসির পদত্যাগ বা অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আর সে অনুযায়ী গত ১১ দিন ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি নাসিরউদ্দিনের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলন বিষয় খতিয়ে দেখতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউসিজি। কমিটিকে ছাত্র আন্দোলনের প্রকৃত ঘটনা এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সামগ্রিক তথ্যাদি সংগ্রহ করে প্রতিবেদন দাখিলের অনুরোধ করা হয়।
ইউজিসি সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি গত ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নাসিরউদ্দিনের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের বক্তব্য গ্রহণ করেন।
ভিসির বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার প্রতিবেদনটি ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. কাজী শহীদুল্লাহর কাছে জমা দেয়। পরে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান।
ইউজিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এবং ভিসি নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে ছাত্র অসন্তোষ দেখা যাওয়ায় তাকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: সোহরাব হোসাইন সিলেটে থাকায় প্রতিবেদনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।