ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ছাত্রলীগ নেত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা

প্রকাশঃ ২০১৯-০৫-২১ - ১৭:২৬

ঢাকা অফিস : পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদবঞ্চিতদের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে হামলার ঘটনায় সংগঠনের পাঁচ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। এর তিন ঘণ্টা পর রাত ১২টার দিকে শোভন ও রাব্বানীকে উদ্দেশ্য করে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য জারিন দিয়া। এর পর ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।

নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে জারিন দিয়া লিখেন- ‘গত ১৩ তারিখ পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার পর যখন দেখলাম আমার নামটি নেই, তখন ভাবলাম- হয়তো যোগ্য না। তাই হয়তো আমার নামটি দেয়নি। একপর্যায়ে শোভন ভাইকে ফোন দিলাম। ভাইকে বললাম, ভাই আমাকে কেন কমিটিতে রাখা হলো না? আমি শুনতে চেয়েছিলাম তিনি হয়তো বলবেন- আমি যোগ্য না। রাজনীতি করতে থাকো, পাবে একসময়। কিন্তু না…

ভাই আমাকে বললেন- তোকে অনেক রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু রাব্বানীর জন্য তোকে রাখতে পারিনি। রাব্বানী তোর ওপর ব্যক্তিগত ক্ষোভ। আমাকে ভুল বুঝিস না। কথাটা শুনে কাঁদব না হাসব বুঝতে পারলাম না। তখন আমি শোভন ভাইকে বললাম- ব্যক্তিগত ক্ষোভের সেই ঘটনাটা। আরও বললাম, কোনো দিন যদি আপার সামনে যেতে পারি ভাই, আমি আপাকে একটা বার বলতে চাই- আপা সম্মেলনের আগে রাব্বানী ভাইয়ের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। তখন ভাই আপনি কী উত্তর দেবেন? কোনো উত্তর দিতে পারেননি শোভন ভাই।

রাব্বানী ভাইকে অনেক বার ফোন দিয়েছি। উনি ফোন ধরেননি। তাই সামাজিকমাধ্যমে ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসে আমার সঙ্গে রাব্বানী ভাইয়ের ক্ষোভের ঘটনাটি উল্লেখ করি। যেটা ভাইরাল হয়ে যায়। আজ সেই স্ট্যাটাসটার জন্য আমাকে ছাত্রলীগ থেকে তারা বহিষ্কার করে দিলেন? আমার দেশরত্নের কাছে একটা প্রশ্ন রেখে যেতে চাই- আমরা মেয়েরা আর কতটা অসম্মানিত হলে তাদের যোগ্য বলে মনে হবে?

শোভন-রাব্বানী ভাই আপনাদের একটা কথা বলে যেতে চাই, ব্যক্তিগত ক্ষোভ না দেখিয়ে যারা সংগঠনের জন্য কাজ করে তাদের মূল্যায়ন দিয়েন। আমি সেদিনের মারামারিতে যখন কোমরে আঘাত পেলাম, কই আপনারা তো আমার একটা খোঁজ নিলেন না! আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। জানি না কী করব। আমি যদি মারা যাই শোভন-রাব্বানী ভাইদের কাছ থেকে উত্তরগুলো নিয়ে আমাকে কলঙ্কমুক্ত করবেন পারলে। রাজনীতি করতে এসে রাজনৈতিক নেতাদেরই দ্বারা এতটা অসম্মানিত হব কোনোদিন ভাবতেও পারিনি।’

২০শে মে রাতে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সালমান সাদিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মুরসালিন অনু, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগ কমিটির সদস্য কাজী সিয়াম, একই শাখার আরেক কর্মী সাজ্জাদুল কবির ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য জারিন দিয়া।

কারণ দর্শানো নোটিশ পাওয়া দুজন হলেন ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক বিএম লিপি আক্তার ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক হাসিবুর রহমান শান্ত।

মধুর ক্যান্টিনের হামলাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগ বলছে, তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে এইসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।