বটিয়াঘাটার জলমায় বর্ষা মৌসুমের শুরুতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি

প্রকাশঃ ২০২০-০৬-২৯ - ১৮:৩২

ইন্দ্রজিৎ টিকাদার, বটিয়াঘাটাঃ বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের রোগের। যে কোন মুহুর্তে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার কারনে বিভিন্ন ধরনের রোগ মহামারি আকার ধারণ করার আশংকা দেখা দিতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহলের মন্তব্য।

জেলা শহরের সাথে জলমা ইউনিয়নের সম্পৃক্ততা থাকায় এ ইউনিয়নের গুরুত্ব শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাসহ ভূমিদস্যুদের কাছে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ইউনিয়নের জমির মূল্য রাতারাতি আকাশচুম্বি হয়ে গেছে। যা নিম্ন মধ্যবিত্তদের কাছে আলাদ্বীনের আশ্চর্য প্রদীপের শামিল। আর ঐ সকল শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাসহ ভূমিদস্যুদের শ্যেন দৃষ্টি এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়সহ সকল সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ নিশ্চিৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে ভূমিদস্যুরা সরকারী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অবৈধ প্লট ব্যবসা ও অপরিকল্পিত নগরায়ন করায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, যা দেখার কেউ নেই। সরকারী ১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ব আইনের ৫৭ ধারায় আছে কৃষি জমি অকৃষকের নিকট ক্রয়-বিক্রয়, নামজারী, শ্রেণী পরিবর্তন কোন কিছু করা যাবে না। আর কোন কিছু করতে হলে কালেক্টারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি নিয়ে করা যেতে পারে। অথচ উক্ত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এক শ্রেণীর ভূমি ব্যবসায়ী নামধারী অবৈধ প্লট ব্যবসায়ীরা ভূমি ব্যবসা করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এ ইউনিয়নে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১ হাজারের বেশি ভূমি ব্যবসায়ী চক্র বা সিন্ডিকেট রয়েছে। আর এদের নেতৃত্বে রয়েছে বিশাল দালাল ও লাঠিয়াল বাহিনী। ভূমি ব্যবসায়ী নামে খ্যাত ওই সকল বাহিনী প্রাথমিকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের জমিতে কৃত্রিম সমস্যা সৃষ্টি করা ও পরবর্তীতে স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কম টাকায় জমি ক্রয় করা। এ ছাড়া রয়েছে সরকারী ভরাটি খাস খাল ও ভিপি সম্পত্তি দখল পূর্বক শ্রেণী পরিবর্তন করে প্লটের রাস্তা ও পজেশান বিক্রী করে তা থেকে কোটি কোটি টাকার মুনাফা অর্জন করছে। যে কারনে জলমা ইউনিয়নে ভিপি ও সরকারী ভরাটি খাস খালগুলো সরকারী খাতা-কলমে থাকলেও বাস্তবে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। অপর দিকে ঐ সকল অবৈধ প্লট ব্যবসায়ীরা সরকারী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কৃষি জমিতে লবণ পানি সহ বালু ভরাট করায় মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা। এতে করে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া সহ নানা ধরনের রোগের। সম্প্রতি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল হোসেনের নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রাশেদুজ্জামান সরকারী ভিপি সম্পত্তি ও ভরাটি খাস খাল আয়ত্বে আনতে ইতিমধ্যে অভিযানে নেমেছে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রাশেদুজ্জামান এর কাছে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে জানান, জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে সরকারী ভরাটি খাস খাল ও ভিপি সম্পত্তির অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে সরেজমিনে গিয়ে ভিপি সম্পত্তির তালিকা প্রস্তত করে ভিডিও করে কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে এবং দ্রুত ভিপি সম্পত্তিতে সরকারীভাবে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যে কোন সময়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে জলমা ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দারা প্রতিকার চেয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।